।। বিনয় মজুমদার ।। রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে ৪০তম আগরতলা বইমেলা। জ্ঞানের মেলায় সবার সাদর আমন্ত্রণ রইলো। জীবনে এগিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন বই। বই আমাদের চেতনার সীমানা বাড়ায়। বইমেলা অন্যান্য মেলার মত নয়। একটি নির্দিষ্ট জাতি, ধর্ম বা সম্প্রদায়ের নয় বইমেলা। বইমেলা সর্বজনীন। অন্যান্য মেলার চরিত্র আর চালচিত্র বদলে গেলেও বইমেলার চরিত্র একই রকম রয়ে গেছে। সারি সারি বইয়ের স্টল। নতুন বইয়ের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে মেলা প্রাঙ্গণের চারদিকে। উৎসাহী পাঠক গভীরভাবে তার পছন্দের বই খুঁজে বেড়ান নানা স্টলে। হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী আগরতলা বইমেলা। এদিন বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে বইমেলার উদ্বোধন করবেন রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রতিবেশী রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া, সমবায় মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল, আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার ও বিধায়ক মিমি মজুমদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ডা. পি কে গোয়েল ও বাংলাদেশ সহকারি হাই কমিশনের হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। ৪০তম আগরতলা বইমেলার মূল ভাবনা হচ্ছে আমার ত্রিপুরা-আমার গর্ব’। এই ভাবনাকে সামনে রেখে সেজে উঠেছে হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণ। ত্রিপুরার ঐতিহ্য ও কৃষ্টি, বৈচিত্রময় মিশ্র সংস্কৃতির প্রতিফলন ফুটে উঠছে বইমেলা প্রাঙ্গণের সাজ সজ্জায়। ভারত বাংলাদেশের মানুষের মিলন ও সংস্কৃতির আদান প্রদান বইমেলার আন্তর্জাতিক পরিসরকে এবার এক সমৃদ্ধ রূপ দেবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পীগণ সংগীত পরিবেশন করবেন। তাছাড়াও ১২ দিনব্যাপী বইমেলার প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে বিশিষ্ট শিল্পীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বইমেলার প্রতিদিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিষয়বস্তু ভিত্তিক সেমিনার, কবি সম্মেলন, পুরস্কার বিতরণ, নতুন বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ আমাদের আগরতলা বইমেলার এক ঐতিহ্য। ১৯৮১ সালে আগরতলা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গণে প্রথম আগরতলা বইমেলার সূচনা। সেই থেকে এই ধারা আজও বহমান। আমাদের মিশ্র সংস্কৃতির সুরের মুর্ছনা ও নৃত্যের নিক্কনে মুখরিত থাকে বইমেলা প্রাঙ্গণ। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। আগরতলা বইমেলার পাশাপাশি রাজ্যের ৭টি জেলায় সরকারি উদ্যোগে জেলাভিত্তিক বইমেলা আয়োজনের সূচনা হয়েছে এই বছর থেকে। সরকারের লক্ষ্য বইমেলার উন্মাদনা রাজ্যের প্রান্তিক এলাকাতেও ছড়িয়ে দেওয়া।
বইমেলায় সৃজনশীল কাজে বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রতিবছরই বিশিষ্ট ব্যক্তি ও কবি সাহিত্যিকদের পুরস্কৃত করা হয়। এবারও ১৬টি পুরস্কার দেওয়া হবে বইমেলার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে। এর মধ্যে চারটি পুরস্কার এবছরই নতুন চালু হয়েছে। এগুলি হল সত্যরাম রিয়াং পুরস্কার, অশ্বিনী বিশ্বাস স্মৃতি পুরস্কার, সুমঙ্গল সেন স্মৃতি পুরস্কার, অজিত মজুমদার স্মৃতি পুরস্কার। তাছাড়াও মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুর স্মৃতি পুরস্কার, পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় জাতীয় সংহতি পুরস্কার, অটল বিহারী বাজপেয়ী লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, কালীকিঙ্কর দেববর্মা স্মৃতি পুরস্কার, ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কার, লালন পুরস্কার, শচীন দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কার, ত্রিপুরেশ মজুমদার স্মৃতি পুরস্কার, ভীষ্মদেব স্মৃতি পুরস্কার, সলিলকৃষ্ণ দেববর্মণ স্মৃতি পুরষ্কার, শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা পুরস্কার, অন্যান্য ভাষায় প্রকাশিত বইয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ প্রকাশনার পুরস্কার।
৪০তম আগরতলা বইমেলা প্রাঙ্গণে এবার থাকবে সকলের জন্য বিনামূল্যে ওয়াইফাই পরিষেবা। আলপনায় ফুটে উঠবে বর্ণময় সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের রূপ। হাপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে এবারের আগরতলা বইমেলায় মোট ১৬২টি স্টল থাকবে। স্থানীয় প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতাদের স্টল থাকবে ৭০টি। তাছাড়াও দিল্লি, কলকাতা, গুয়াহাটি, শিলচর থেকেও প্রকাশকগণ ও পুস্তক বিক্রেতা বইমেলায় তাদের প্রকাশনা ও বই নিয়ে আসবেন। বাংলাদেশ থেকেও প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতাদের ৫টি স্টল থাকবে।
তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেছেন ‘বইমেলায় পড়ুয়াদের অংশগ্রহণ জরুরী। এক্ষেত্রে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বই কেনা কিংবা মেলায় ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণকে সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও যত্নবান হতে হবে। আমার ত্রিপুরা-আমার গর্ব এই ভাবনায় ৪০তম আগরতলা বইমেলায় ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি এক নতুন প্রাণের সঞ্চার করবে। সাহিত্য ও সংস্কৃতির উদ্ভাবনী চিন্তাধারা বিকশিত করবে আজকের ছাত্রছাত্রীদের। এভাবেই সমৃদ্ধ হবে আমার ত্রিপুরা-গর্বিত করবে রাজ্যবাসীকে।