রাজ্য সরকার খোলা বাজারে কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম স্থির করে দিতে পারে না : খাদ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২২ মার্চ।। বিগত ২০১০ সাল থেকে পেট্রোপন্যের মূল্য নির্ধারনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রন তুলে নেওয়ার কারনে সেই সময় থেকে দেশের তৈল কোম্পানীগুলি আন্তর্জাতিক বাজার দরের উপর ভিত্তি করে কেরোসিন সহ সকল পেট্রোপন্যের বিক্রয়মূল্য নির্ধারন করে আসছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তৈলের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির কারনে তৈল কোম্পানীগুলি বাধ্য হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুযায়ী পেট্রোপন্যের মূল্য নির্ধারনের কারণে দেশের অন্যান্য রাজ্যের মত আমাদের রাজ্যেও কেরোসিন তৈলের যথেষ্ট মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। যদিও গনবন্টনের কেরোসিন তেলের দাম এখনো তৈল কোম্পানীগুলি কর্তৃক নির্ধারিত খোলা বাজারে বিক্রিত দাম থেকে অনেকটাই কম। খোলা বাজারে কোন নিত্যপ্রয়োজানীয় দ্রব্যের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি প্রধানতঃ নির্ভর করে উক্ত দ্রব্যের উৎপাদন, চাহিদা ও যোগানের উপর।

আমাদের দেশে ভোজ্য তেল, ডাল ইত্যাদি বহুবিধ পন্যের আভ্যন্তরীণ উৎপাদন দেশীয় চাহিদা তুলনায় যথেষ্ট কম হয়ে থাকে। তাই এই সকল পন্যের আভ্যন্তরীণ যোগান বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়ে থাকে। এমতাবস্থায়, প্রাকৃতিক কারনে যদি কোন বছর এই সকল পন্যের স্বাভাবিক উৎপাদনে ঘাটতি হয় তবে এক্ষেত্রে যোগান স্বাভাবিক রাখার জন্য বিদেশের উপর নির্ভরশীলতা আরও বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বের সকল দেশই ওয়ান গ্লোব-ওয়ান ন্যাশনে পর্যবসিত হয়েছে। তাই রপ্তানিকারক দেশগুলিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব আমাদের দেশ তথা রাজ্যেও এসে পড়ছে। পাশাপাশি, উৎপাদন ব্যয়, পরিবহন ব্যয়, পন্য খালাস ও গুদামজাত করনের ব্যয় ইত্যাদির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রভাবও নিত্যপ্রয়োজনীয় মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, আমাদের রাজ্যে খাদ্যশষ্য সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর প্রায় সিংহভাগ বহিঃরাজ্য থেকে আমদানি করে রাজ্যের চাহিদা পূরণ করতে হয়। তাই আমাদের রাজ্যের খোলা বাজারে উৎসস্থলে মূল্য বৃদ্ধি ও পরিবহনজনিত ব্যয় বৃদ্ধির কারনে বেশ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাইকারী ও খুচরা মুল্যের বৃদ্ধি ঘটেছে যা দেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ন।

বিগত বছর দেশে ভোজ্য তেল ও ডালের উৎপাদন প্রাকৃতিক কারনে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় এই পন্য দুটি বিদেশ থেকে চড়া দামে অতিরিক্ত পরিমানে আমদানির মাধ্যমে দেশের চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে আমদানির ব্যয় বেশি হওয়ায় সারা দেশেই ভোজ্য তেল ও ডালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছিল। প্রচলিত আইনানুযায়ী রাজ্য সরকার খোলা বাজারে কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম স্থির করে দিতে পারেনা।

তবে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যে সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলি হলো কোন অসাধু ব্যবসায়ী যাতে পন্যের অবৈধ মজুতকরনের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে রাজ্যের জনগনকে ঠকিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন না করতে পারে তার জন্য রাজ্যের বাজারগুলিতে তদারকীর জন্য প্রতিটি মহকুমা শাসকের অফিসে একটি করে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই টাস্ক ফোর্সগুলি নিয়মিত সংশ্লিষ্ট মহকুমার বাজারগুলি পরিদর্শন করছেন এবং প্রতিটি দোকানে দ্রব্যের মজুত ও মূল্য তালিকা টাঙ্গানো না থাকলে বা কোন পন্যের বিক্রয়মূল্যে অসামঞ্জস্যতা চিহ্নিত করতে পারলে সংশ্লিষ্ট দোষী ব্যবসায়ির বিরুদ্ধে অত্যাবশ্যকীয় পন্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন জারী রেখেছেন। মে, ২০২১ থেকে মার্চ, ২০২২ এই ০৮ মাস প্রধান মন্ত্রী গরীব কল্যাণ। অন্ন যোজনায় রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতাভূক্ত ৫লক্ষ ৯৬ হাজার পরিবারের মধ্যে জন প্রতি ৫ কেজি করে চাল প্রতি মাসে সম্পূর্ন বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে।

রাজ্যের ৬ লক্ষ ১৮ হাজার ২৭৬ টি পরিবারকে ডাল, আলু, পেয়াজ ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সম্বলিত ১ হাজার টাকা মূল্যের একটি করে ফুড প্যাকেট মুখ্যমন্ত্রী স্পেশাল রিলিফ যোজনায় বিগত ২০২১ সালে সম্পূর্ন বিনামুল্যে প্রদান করা হয়েছে। রাজ্যের গনবন্টন ব্যবস্থাকে ইত্যিমধ্যেই সম্পুর্নভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে।

রাজ্য সরকার নিজস্ব কোষাগার থেকে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করে বিশেষ ভর্তুকিযুক্ত মূল্য ২ টাকা কেজি দরে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতাভূক্ত সকল সুবিধাভোগিদের এবং ১৩ টাকা কেজি দরে সকল এ.পি.এল ভোক্তাদের ন্যায্যমূল্যের দোকানের মাধ্যমে চাল সরবরাহ করে আসছেন।

তাছাড়া, রাজ্যের সকল ভোক্তাদের ১৩ টাকা কেজি দরে আটা, ২৩ টাকা কেজি দরে চিনি এবং ৫৯ টাকা দরে মুসুর ডাল সকল এন. এফ. এস. এ ভোক্তাদের ও ৮৪ টাকা কেজি দরে মুসর ডাল সকল এ.পি.এল ভোক্তাদের প্রতি মাসে সরবরাহ করছেন।

এছাড়াও, রাজ্যের খুচরা বাজারগুলিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রির মূল্য নিয়ন্ত্রনের রাখার জন্য প্রতিটি ন্যায্যমূল্যের দোকানে রেশন সামগ্রী ছাড়া রাজ্যের সেলফ হেল্প গ্রুপগুলির উৎপাদিত পণ্যসহ অন্য সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রী বিক্রয় করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই প্রদান করা হয়েছে।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?