অনলাইন ডেস্ক, ১মার্চ ।। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যরাষ্ট্রগুলোসহ ৩৬ দেশের বিমানের জন্য নিজের আকাশসীমা বন্ধ করল। ২৮ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
তবে ত্রাণসামগ্রীবাহী বিমান ও কূটনৈতিক মিশনের বিমানগুলোর ওপর এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পশ্চিমের দেশগুলো রুশ বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমায় নিষেধাজ্ঞা জারির পরই এই সিদ্ধান্ত নিল রাশিয়া।
দীর্ঘ দুই মাস ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় ২ লাখ সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে দেশটির পূর্বাঞ্চলে সেনা অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন ভ্লাদিমির পুতিন। এর পরপরই রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় এবং তড়িৎগতিতে ইউক্রেনের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পাশপাশি চতুর্দিক থেকে দেশটির ভেতরে প্রবেশ করতে শুরু করে রুশ সেনাবাহিনী।
ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পরদিনই যুক্তরাজ্য নিজেদের আকাশসীমায় রুশ বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তারপর একে একে যুক্তরাজ্যকে অনুসরণ করে জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন ও পর্তুগালের মতো ইউরোপের অনেক দেশই।
তারপর রবিবার ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন ইউরোপীয় ইউনিয়নের আকাশসীমায় রুশ বিমান নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন।
ইউরোপীয় কমিশন প্রধানের এই ঘোষণার দুই দিনের মধ্যেই পাল্টা ব্যবস্থা নিল রাশিয়া।
ওদিকে ইউক্রেনে ষষ্ঠ দিনে পড়া রাশিয়ার সামরিক অভিযান নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে। ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়লেও রাজধানী কিয়েভ দখলে মরিয়া রুশ বাহিনী।
বিবিসি বলছে, রাশিয়ার একটি বিশাল সামরিক বহর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
স্যাটেলাইট কোম্পানি ম্যাক্সার টেকনোলজির প্রকাশিত স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সামরিক বহরটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ।
স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, স্থলবাহিনী এবং যুদ্ধ হেলিকপ্টার বেলারুশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থান করছে, যেটি ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ২০ মাইলের কম দূরত্বে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী রাজধানী কিয়েভের ওপর হামলা শুরু করেছে। কিয়েভসহ ইউক্রেনের সব প্রধান প্রধান শহরে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতায় সাইরেন বাজানো হচ্ছে।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে বিবিসির চিফ ইন্টারন্যাশনাল করেসপন্ডেন্ট লিস ডুসেট জানাচ্ছেন, রাশিয়ার বিশাল সামরিক বহর কিয়েভমুখী হবার কারণে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। রাশিয়ার সামরিক বহরের এই গতিপথ পর্যবেক্ষণ করছে পুরো বিশ্ব।
খবর পাওয়া যাচ্ছে যে রাশিয়ার এই বিশাল সামরিক বহর এগিয়ে আসার পথে আরো বেশি শক্তি সঞ্চয় করছে।
কিয়েভ শহরের অনেকে আশঙ্কা করছেন রাশিয়ার সৈন্যরা ‘মধ্যযুগীয় কায়দায়’ শহরকে অবরোধ করে রাখবে। শহরের বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য, পানি এবং জরুরি সরবরাহ বন্ধের আশংকা করা হচ্ছে।
রাশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা শুরু করে তখন ধারণা করা হয়েছিল শক্তিশালী রাশিয়া মাত্র কয়েকদিন কিংবা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কিয়েভ দখল করে নেবে।
কিন্তু হামলার পর পাঁচদিন অতিবাহিত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহ করা অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এবং সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করেছে। অনেক সাধারণ মানুষ হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে।
একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে রাশিয়ার সামরিক কনভয় যদি এক ইঞ্চি করেও অগ্রসর হয়, তাহলেও এটি কিয়েভের দিকেই আসছে।