অনলাইন ডেস্ক, ২৮ ফেব্রুয়ারী।।সফল ক্যারিয়ার গড়তে আজকাল ‘কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা’ বলে প্রায়শই শোনা যায়। আর এই কাজটা শুরু করতে পারেন বন্ধু বাড়ানোর মধ্য দিয়ে। যদিও কাজটা এতটা সহজ নয়।
ছোট থাকতে যত সহজে কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতা যায়, বড় হলে সেটা ততই কঠিন মনে হয়। বিষয়টা এতটা সহজ নয় বলেই হয়তো বিশ্বে প্রাপ্তবয়স্কদের একাকিত্বের সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
একাকিত্ব কাটাতে বন্ধু বানানোর ১০টি টিপস দিয়েছে বিবিসি বাংলা। এর মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন কীভাবে আপনিও সহজে বন্ধু বানাতে পারেন।
১. ক্লাব বা সংগঠনে যোগ দিন-
কোনো একটি দল, সংগঠন, বা পছন্দের কোনো বিষয়ের ওপর ক্লাস-ভিত্তিক কোর্সে যোগদানের মাধ্যমে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেই হয়তো পেয়ে যেতে পারেন আপনার প্রিয় বন্ধুকে।
একসঙ্গে থাকার কারণে আপনার সহকর্মী বা সহপাঠীরা জানতে পারবেন আপনার কিসের প্রতি উৎসাহ রয়েছে।
আপনার এমন কয়েকটি বিষয় যখন আরেকজনের আগ্রহের সঙ্গে মিলে যাবে তখনই বন্ধুত্বের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
২. স্বেচ্ছাসেবক-
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা মানে মানুষের প্রতি আপনার মমত্ববোধ আছে। এখন এই সেবা আপনার স্থানীয় কমিউনিটির প্রতি হোক বা আরও বড় পরিসরে সেটা বিষয় না।
বিষয় হলো এই কাজের মাধ্যমে আপনার নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হবে। এই মানুষগুলো তারাই হবে যাদের মন উদার। একজন বন্ধুর ভেতরে এই গুণটাই সবচেয়ে বেশি থাকা চাই।
৩. যোগাযোগ তৈরি করুন-
কোনো বিয়ের পার্টিতে বা জিমে অথবা খেলতে গিয়ে যদি নতুন কারও সঙ্গে আপনার পরিচয় হয় যার সঙ্গে কিনা আপনি মিল পাচ্ছেন তাহলে তার ফোন নম্বর বা ইমেইল ঠিকানাটি চেয়ে নিন।
কারণ তার সঙ্গে আপনার আবার দেখা হবে কিনা সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এজন্য তার সঙ্গে যোগাযোগের একটা মাধ্যম বের করা জরুরি।
আপনি তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পরের দিন একটি লাইন লিখে জানান যে তার সঙ্গে সময় কাটানোটা আপনি কত উপভোগ করেছেন। এরপর তাকে কোথাও খেতে যাওয়ার জন্য অথবা কোথাও ঘুরতে বা হাটতে যাওয়ার জন্য ডাকতে পারেন। নিজ থেকে এই একটা পদক্ষেপের কারণেই হয়তো আপনি পেয়ে যেতে পারেন প্রাণ প্রিয় বন্ধুকে।
৪. ‘হ্যাঁ’ বলতে শিখুন-
যদি নতুন পরিচিত কেউ আপনাকে রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানান বা আপনাকে থিয়েটার টিকিট অফার করে তাহলে ‘হ্যাঁ’ বলুন। এতে আপনি সাময়িক স্নায়ুচাপের মুখে পড়তে পারেন। মনে হতে পারে যে আপনি আপনার গণ্ডির বাইরে গিয়ে কিছু করছেন। কিন্তু জেনে রাখবেন, সাহস না রাখলে কিছুই অর্জন করা যায় না।
যদি আপনি সত্যিকার অর্থে সেই সাহস যোগাতে না পারেন, অথবা সে আপনাকে যেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে সেটা আপনার ঠিক পছন্দ না, তাহলে আপনি তাকে ভদ্রভাবে ‘না’ বলুন। তবে সেই না বলার মধ্যে এটাও পরিষ্কারভাবে বলুন যে ভবিষ্যতে সে যদি আপনাকে আমন্ত্রণ জানান তাহলে আপনি সেটা সাদরে গ্রহণ করবেন।
৫. প্রত্যাখ্যানের ভয় কাটিয়ে উঠুন-
সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনার প্রতিটি প্রচেষ্টা যে কাজে লাগবে, এমন কোন কথা নেই। কিন্তু আপনি যদি প্রতিনিয়ত প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে থাকেন তাহলে আপনার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হবে না। সাহসী হন এবং নিজের প্রতি আস্থার জায়গাটা একটু মজবুত করুন।
আপনি যদি নতুন কারও সঙ্গে পরিচয়ের পর তার সঙ্গে আবারও দেখা করার প্রস্তাব দেন এবং তাদের উত্তর যদি ‘না’ সূচক হয়, তাহলে ভেঙে পড়বেন না। কেননা এটাই পৃথিবীর শেষ নয়। সম্ভবত সেই ব্যক্তি আপনার জন্য ছিল না। আপনার বন্ধু হওয়ার জন্য হয়তো আরও ভালো কোনো মানুষ অপেক্ষা করছে।
৬. সহকর্মীদের বন্ধু বানান-
বর্তমান ব্যস্ত সমাজে পরিবারের চাইতে আমাদের বেশি সময় কাটানো হয় কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে। তাই এই সহকর্মীদের বন্ধু বানানোর চেষ্টা করা যৌক্তিক।
এটা ঠিক যে অফিসের অনেক কথায় আপনি হয়তো কষ্ট পেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি বিশ্বস্ত কোন সহকর্মীর কাছে নিজেকে একটু প্রকাশ করতে পারেন। হয়তো সেও আপনাকে এর প্রতিদানে হয়তো ভালো কিছু দেবে।
কাজের পর কোথাও খেতে যাওয়ার পরিকল্পনাগুলোয় যোগ দিন। এমনকি আপনি ক্লান্ত হলেও ‘হ্যাঁ’ বলুন। অথবা লাঞ্চ বিরতিতে আপনি সহকর্মীদের কাউকে নিয়ে স্থানীয় স্যান্ডউইচ দোকানে যেতে পারেন।
অফিস ডেস্কের থেকে দূরে কোথাও গেলে সহকর্মীর সঙ্গে কাজের বাইরে আরও নানা বিষয়ে কথা বলা সহজ হবে। এতে সহকর্মীদের, প্রকৃত বন্ধুত্বে বদলে ফেলাও হয়ে যাবে অনেক সহজ।
৭. কৌতূহলী হোন-
আপনি যদি লাজুক স্বভাবের হন বা কিছু বলতে গিয়ে আটকে যান, তাহলে সেই জড়তা কাটিয়ে ওঠার সহজ উপায় হল অপর পাশের মানুষের বিষয়ে জানতে চাওয়া।
কেননা অধিকাংশ মানুষই নিজের বিষয়ে কথা বলাটা উপভোগ করে। আপনি যদি ভালো শ্রোতা হন এবং ভবিষ্যতে তার সেই বিষয়গুলো টেনে আনেন। তাহলে বুঝে নিন যে আপনি খুব দ্রুত বন্ধু পেতে যাচ্ছেন।
৮. প্রয়োজনের সময় এগিয়ে আসুন-
জন্ম তারিখ মনে রাখা বা তার প্রয়োজনীয় কোনো কিছু কিনে দেওয়ার মতো ছোট ছোট বিষয়গুলো মনে রাখা বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। একইসঙ্গে নিজের গুরুত্ব প্রমাণ করার মোক্ষম সুযোগ পাওয়া যায় খারাপ সময়গুলোতে।
যদি আপনার পছন্দের মানুষটি কঠিন সময় মধ্যে দিয়ে যান তাহলে তার সাহায্যে এগিয়ে আসুন। সে অসুস্থ থাকলে তার প্রিয় কোনো খাবার নিজ হাতে তৈরি করে পাঠিয়ে দিতে পারেন। অথবা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে পারেন। এই ছোট্ট বিষয়গুলোর মাধ্যমে আপনি বোঝাতে পারবেন, আপনি বন্ধু হিসেবে কতটা দারুণ।