অনলাইন ডেস্ক, ২৪ ফেব্রুয়ারী।।পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে কয়েকমাস ধরে উত্তেজনার পর আজ সকাল থেকে ইউক্রেনে তিন দিক থেকে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার হামলার জবাবে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শুধু ইউক্রেনের সেনারাই রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করতে যুদ্ধের ময়দানে নেমেছে।
রাশিয়া এখনো শুধু ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে হামলা চালিয়েছে। যেখানে তারা দুটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। তবে পশ্চিমা বিশ্বের আশঙ্কা রাশিয়া পুরো ইউক্রেনের ওপরই আগ্রাসন চালাতে পারে। যদি তাই ঘটে তাহলে ইউক্রেনকে রক্ষায় পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোও কি ইউক্রেনকে রক্ষায় যুদ্ধে নামবে? ইউক্রেন সংকট কি শেষ পর্যন্ত ৩য় বিশ্বযুদ্ধের রুপ নেবে?
চলতি মাসের শুরুর দিকে ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘আমেরিকান এবং রাশিয়ানরা যখন পরস্পরের দিকে গুলি ছোঁড়া শুরু করবে তখন সেটা বিশ্বযুদ্ধ হয়ে যবে’।
তবে বাইডেন এও জানিয়ে দিয়েছেন যে, কোনও পরিস্থিতিতেই ইউক্রেনে সেনাবাহিনী পাঠাবেন না তিনি। সেটা যদি রাশিয়ার আক্রমণের পর সে দেশে বসবাসকারী আমেরিকানদের উদ্ধারের জন্যও দরকার হয়, তাও নয়। তার কথায়, ‘আমরা সেনা পাঠালে সেটা বিশ্বযুদ্ধ হয়ে যাবে। যদি আমেরিকান এবং রাশিয়ানরা একে অপরকে গুলি ছুড়তে শুরু করে, তবে আমরা এক ভিন্ন পৃথিবী দেখব’।
রাশিয়া ইউক্রেনের ঠিক কতটা গভীর পর্যন্ত সেনা পাঠাবে তা শুধুমাত্র পুতিন এবং তার ঘনিষ্ঠরাই জানেন। অবশ্য যতক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসন বাহিনী সীমান্তে অবস্থান করে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং অন্যান্য শহরগুলোও রুশ আক্রমণ থেকে নিরাপদ নয়।
তবে, ন্যাটো এবং পশ্চিমা বিশ্বের জন্য রেড লাইন হল- রাশিয়া যদি ন্যাটোর কোনো সদস্য রাষ্ট্রকে হুমকি দেয়। ন্যাটোর আর্টিকেল ৫ এ বলা আছে তাদের কোন সদস্য রাষ্ট্র আক্রমণের শিকার হলে তার প্রতিরক্ষায় সমগ্র পশ্চিমা সামরিক জোট এগিয়া আসতে বাধ্য থাকবে।
কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য নয়, যদিও তারা বলেছে যে তারা ন্যাটোতে যোগ দিতে চায়। অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান ঠেকাতেই বদ্ধপরিকর। ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগাদন ঠেকাতেই তিনি এই হামলা শুরু করেছেন।
সোভিয়েত আমলে মস্কোর ক্ষমতাবলয়ে থাকা এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া বা পোল্যান্ডের মতো পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো এখন সবাই ন্যাটোর সদস্য।
তারাও উদ্বিগ্ন যে রাশিয়ান বাহিনী হয়তো শুধু ইউক্রেনেই থেমে যাবে না বরং তাদের মতো বাল্টিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের জাতিগত রাশিয়ান সংখ্যালঘুদের ‘সহায়তা করতে’ এবং তাদের দেশে আক্রমণ করার জন্য কিছু অজুহাত খাড়া করতে পারে।
যে কারণে ন্যাটো সম্প্রতি তার পূর্ব ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলোর শক্তিবৃদ্ধি করার জন্য সেসব দেশে বাড়তি সেনা পাঠিয়েছে।
তাহলে এখন প্রশ্ন হল- ৩য় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাওয়া নিয়ে আমাদের কতটা চিন্তিত হওয়া উচিত?
যতক্ষণ না রাশিয়া এবং ন্যাটোর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ হচ্ছে, ততক্ষণ ৩য় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হওয়া নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। পরিস্থিতি এখনো বিশ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার মতো খারাপ হয়নি।
আর ভুলে গেলে চলবে না যে রাশিয়া এবং আমেরিকার কাছে বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক বোমা রয়েছে। যেসব বোমা দিয়ে পুরো পৃথিবীকে কয়েকবার ধ্বংস করা যাবে। ফলে তারা এতো সহজেই যুদ্ধে জড়াতে চাইবে না।
মঙ্গলবার এক সিনিয়র ব্রিটিশ সামরিক সূত্র বলেছে, ‘পুতিন ন্যাটোকে আক্রমণ করতে যাচ্ছেন না। তিনি শুধু ইউক্রেনকে বেলারুশের মতো একটি রুশ অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান’।
তবে পুতিনের মনের অবস্থা কখন কোন দিকে মোড় নেয় তা বলা মুশকিল। পুতিনকে বলা হয় ঠাণ্ডা মাথার খেলোয়াড়। তিনি ভাল দাবা খেলোয়াড় এবং জুডো যোদ্ধা। কিন্তু গত সোমবারের বক্তৃতায় তাকে একজন বুদ্ধিমান কৌশলবিদদের চেয়ে রাগান্বিত স্বৈরশাসক মনে হয়েছে বেশি।
ন্যাটোকে ‘শয়তান’ বলে অভিহিত করে, তিনি কার্যকরভাবে ইউক্রেনকে বলেন যে, রাশিয়া থেকে স্বাধীন একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তার অস্তিত্বের কোন অধিকার নেই। এটা উদ্বেগজনক।
ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি ইতিমধ্যেই রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
রাশিয়াও অবশ্যই কোনো না কোনো ভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে। রাশিয়ায় থাকা পশ্চিমা ব্যবসাগুলো সম্ভবত ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে পুতিন ভয়ানক কোনো সিদ্ধান্ত নিলে এটি আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে।
রাশিয়া সাইবার হামলা চালিয়েও ‘প্রতিশোধ’ নিতে পারে। ব্রিটেনের জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্র ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সতর্ক করেছে। ইউরোপ-আমেরিকার ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং এমনকি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অবকাঠামোকে লক্ষ্য করেও হামলা চালাতে পারে রাশিয়া।
এখন সমস্যা হল যে, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ-আমেরিকার মাটিতে রাশিয়ান ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর বিষপ্রয়োগ সহ মস্কোর সঙ্গে ক্রমাগত সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় রাশিয়া এবং পশ্চিমের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।
এবং এটি একটি বিপজ্জনক প্রেক্ষাপট যার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের চলমান সঙ্কটের জন্য কাকে দায়ী করা হবে তা নিয়েও পশ্চিমা জনসাধারণের মধ্যে একটি জ্বলন্ত বিতর্ক রয়েছে।