অনলাইন ডেস্ক, ২৪ ফেব্রুয়ারী।। রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উত্তরাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বৃহস্পতিবার দেশটিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব- তিন দিক থেকে অভিযান শুরুর পর এখন রাজধানীর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে। ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলেছে, কিয়েভে সরকারি স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে মিসাইল ছুড়তে শুরু করেছে রুশ সৈন্যরা। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, রাশিয়ান সেনারা ইউক্রেনের রাজধানী দখল করতে এগিয়ে যাচ্ছে এমন খবর পাওয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রাজধানী কিয়েভের উত্তরাঞ্চলের আকাশে কয়েকটি হেলিকপ্টার নিচু দিয়ে উড়তে দেখেছেন বলে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপির একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন। এ সময় কিয়েভের একটি বিমানঘাঁটিতে হামলার খবর পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এদিকে, বিবিসির ইউক্রেন সার্ভিসের সম্পাদক মার্তা শোকালো বলেছেন, ইউক্রেনে আর কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। তিনি বলেন, আমি একজন সহকর্মীর কাছ থেকে ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের আক্রমণের ঘোষণার বার্তা পাওয়ার পর রাতে জেগে ছিলাম। এরপরই শুরু হয় বিস্ফোরণ। তিনি বলেন, আমি বাড়ি থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। শহরের বিভিন্ন অংশের লোকজন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বার্তা পাঠাতে শুরু করেছে যে তাদের কাছাকাছি বিস্ফোরণ ঘটছে। মার্তা শোকালো বলেন, দেশের পূর্বাঞ্চলের সম্মুখভাগ নয়, বরং কিয়েভ আক্রমণের মুখে ছিল। এটি বুঝতে পারাটা ছিল বড় ধাক্কা। ইউক্রেনে আর কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। ‘এখানে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এবং ইন্টারনেট কাজ করছে না। আমরা সত্যিই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব। দেশে আতঙ্কের হাওয়া বইছে, এখন আমরা জানি গোটা দেশ আক্রমণের মুখে’। ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ভ্লাদিমির পুতিন স্থলপথে এবং আকাশপথে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করার পর দেশটির রাজধানী কিয়েভের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলেছে কর্তৃপক্ষ। রাশিয়ান সেনারা রাজধানীতে বোমাবর্ষণ করতে চলেছে এই আশঙ্কার মধ্যে বেসামরিক লোকদেরকে বোমা শেল্টারে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ। রাশিয়ান সেনারা কিয়েভ থেকে মাত্র ১৫ মাইল মাইল দূরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটি দখল করে নিয়েছে। সেটি উদ্ধারের জন্য যুদ্ধ করছে ইউক্রেনের সেনারা। কিয়েভ শহরের একটি সূত্র ডেইলি মেইল অনলাইনকে বলেছে যে, ‘তারা এখন কিয়েভে বোমা ফেলতে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রে লুকিয়ে থাকতে বলেছে। রাশিয়ান বাহিনীর কাছ থেকে পুনরায় দখল করার জন্য ইউক্রেনীয় সেনারা আন্তোনোভ বিমানবন্দরে পাল্টা গোলাবর্ষণ শুরু করেছে। রাশিয়া কয়েক ডজন হেলিকপ্টার নিয়ে উড়ে এসে আন্তোনোভ বিমান ঘাঁটি দখল করে নিয়েছিল। ইউক্রেনীয় মিগ ফাইটাররা কয়েকটি রুশ হেলিপকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করেছিল’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই ইউরোপের কোনো দেশে সবচেয়ে বড় হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টির মতো পড়েছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চেরনিহিভ, খারকিভ এবং লুহানস্ক সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার রুশ সৈন্য স্থলপথে দেশটিতে ঢুকে পড়েছে।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সামরিক অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়ার পর ইউক্রেনের কয়েকটি শহরে বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আক্রমণ শুরুর প্রথম এক ঘণ্টায় ইউক্রেনের ৪০ জনের বেশি সৈন্য এবং ১০ বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। অন্যদিকে ইউক্রেন বলছে, পাল্টা প্রতিরোধে রাশিয়ার অন্তত ৫০ দখলদার সৈন্য নিহত হয়েছে।