অনলাইন ডেস্ক, ২৪ ফেব্রুয়ারী।। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান বিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জাতির উদ্দেশ্যে আরেকটি ভাষণ দিয়েছেন।
এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের দুটি অংশ ডোনেটস্ক পিপলস রিপাবলিক এবং লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিককে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং চুক্তি স্বাক্ষরের সময় আগের ভাষণ দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার পুতিন বলেন, ঘটনার গতিপথ এবং আগত তথ্য দেখায় যে এ বাহিনীর (ন্যাটো) সঙ্গে রাশিয়ার সংঘর্ষ অনিবার্য। এটি কেবল সময়ের ব্যাপার। এখন তারা পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দাবিও করছে। আমরা এটা হতে দেব না। রাশিয়া এবং আমাদের জনগণকে রক্ষা করার জন্য অন্য কোনো বিকল্প নেই। পরিস্থিতি আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে।
তিনি বলেন, আমাদের বিশেষ উদ্বেগের কারণ আমাদের দেশের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর, ধাপে ধাপে, দায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনীতিবিদদের দ্বারা হুমকিগুলো আক্রমণাত্মক এবং অপ্রত্যাশিতভাবে তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি আগে ন্যাটোর সম্প্রসারণের কথা বলেছি। এর সামরিক অবকাঠামো রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি নিয়ে আসা হচ্ছে। ৩০ বছর ধরে আমরা নেতৃস্থানীয় ন্যাটো দেশগুলির সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করেছি। আমরা ক্রমাগত নিষ্ঠুর প্রতারণা এবং মিথ্যা, অথবা চাপ ও ব্ল্যাকমেল করার প্রচেষ্টার সম্মুখীন হয়েছি।
পুতিন বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বের পুনর্বিন্যাস শুরু হয়েছিল।
পুতিন বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কোনো অনুমোদন ছাড়াই, তারা ইউরোপের একেবারে কেন্দ্রে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে বেলগ্রেডের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সামরিক অভিযান চালায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে একটানা বোমা হামলা চালিয়েছে। আমাদের এই সত্যগুলি মনে করিয়ে দিতে হবে, কারণ কিছু পশ্চিমা সহকর্মী সেই ঘটনাগুলি মনে রাখতে পছন্দ করেন না।
তিনি বলেন, এরপর এল ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ার পালা। লিবিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক শক্তির অবৈধ ব্যবহার, লিবিয়ার ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত সমস্ত সিদ্ধান্তের ফলে রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ ধ্বংস, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের একটি বড় কেন্দ্রের উত্থান, একটি মানবিক বিপর্যয় ঘটে। লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ আজও শেষ হয়নি। তারা কেবল লিবিয়ায় নয়, এই অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল।
পুতিন আরো বলেন, তারা সিরিয়ার অনুরূপ ভাগ্য নিশ্চিত করেছে। সিরিয়া সরকারের সম্মতি বা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়া সে দেশের ভূখণ্ডে পশ্চিমা জোটের সামরিক তৎপরতা আগ্রাসন, হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়। ইরাক আক্রমণ কোনো আইনি ভিত্তি ছাড়াই করা হয়েছিল ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের উপস্থিতির অজুহাতে। সারা বিশ্বের চোখের সামনে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাদা পাউডার দিয়ে এক ধরনের টেস্টটিউব ঝাঁকিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করেন যে এটি ইরাকে তৈরি করা রাসায়নিক অস্ত্র। এবং তারপরে দেখা গেল যে এসব একটি প্রতারণা, একটি ধোঁকা-ইরাকে কোনো রাসায়নিক অস্ত্র ছিল না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের দেশকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে এক ইঞ্চিও ন্যাটো সম্প্রসারিত হবে না। আমি আবারও বলছি-তারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। প্রায়ই শুনতে হয় যে রাজনীতি একটি নোংরা ব্যবসা। সম্ভবত তা-ই, কিন্তু এই পরিমাণে নয়। সর্বোপরি, এই ধরনের প্রতারণামূলক আচরণ কেবল আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নীতি নয়, সর্বোপরি নৈতিকতার সাধারণ স্বীকৃত নিয়মেরও বিরোধিতা করে। এখানে ন্যায় ও সত্য কোথায়? সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভন্ডামি মাত্র।