অনলাইন ডেস্ক, ১৮ ফেব্রুয়ারী।। ভারতের বেশিরভাগ এমপির বিরুদ্ধে খুন ও ধর্ষণের মতো একাধিক ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং। এ ঘটনায় ভারতে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রদূত সাইমন ওং -কে তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুন গতকাল বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের সংসদে এক বিতর্কে বলেন, নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে ভারত গঠিত হয়েছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী এখনকার সাংসদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার মতো মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে। এ সময় তিনি ভারতকে ‘নেহরুর ভারত’ উল্লেখ করে বলেন, অনেকেই রাজনীতিতে যোগ দিয়ে নিজেদের বাঁচিয়েছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিঙ্গাপুরের সংসদে ‘কীভাবে গণতন্ত্র বজায় রাখা উচিত’ শীর্ষক বিতর্কে অংশ নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুন এসব কথা বলেন। ওই বক্তব্যে ভারতের এমপিদের সমালোচনা করা হলেও জওহর লাল নেহরুর প্রশংসা করেছেন তিনি। লি সিয়েন লুন বলেন, স্বাধীনতার লড়াইয়ে থাকা নেতারা সব সময়ই সাহসী হয়ে থাকেন। নেহরু ছিলেন তেমনই এক সাহসী নেতা।
ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই বলেছে, সংসদে গণতন্ত্র নিয়ে একটি আলোচনায় বক্তৃতা করতে গিয়ে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেন, ‘নেহরুর ভারত এমন জায়গা হয়ে পৌঁছেছে যেখানে মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, লোকসভার প্রায় অর্ধেক সাংসদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ-সহ একাধিক ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে। যদিও এটাও বলা হয়, এই অভিযোগগুলির মধ্যে অনেকগুলিই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
গণতন্ত্র নিয়ে এক আলোচনায় লি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুসহ বিভিন্ন বিশ্ব নেতার কথা উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘যে সব নেতা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন এবং তা অর্জন করেছেন, তারা প্রায়শই অসাধারণ সাহসী, সংস্কৃতিবান এবং অসামান্য ক্ষমতা অধিকারী ও ব্যতিক্রমী ব্যক্তি হন। তারা আগুনের মধ্যে নিজেদের বলি দিয়ে মানুষ ও জাতির নেতা হিসাবে গণ্য হন’।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘এমন মানুষ হলেন ডেভিড বেন-গুরিয়ন (ইজরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী), জওহরলাল নেহরু। এরা নতুন বিশ্ব গড়তে সাহসী পদক্ষেপ নেন। জনগণের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করেন। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম তাদের সেই উদ্যোগ ও প্রত্যাশাকে বজায় রাখতে পারে না’।
সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনারকে তলব করে বক্তব্যের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। সরকারের একটি সূত্র এনডিটিভিকে বলেছে, ‘সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য অত্যন্ত অযাচিত। আমরা আমাদের আপত্তির কথা সিঙ্গাপুরের কাছে তুলে ধরেছি’।
বিতর্কিত মন্তব্য করার রেকর্ড আগেও রয়েছে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর। দুবার সংসদে অসত্য ভাষণের জন্য তার বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাবও আনা হয়। ৭০ বছর বয়সী লি সংসদের বক্তব্যে আরও বলেছিলেন, ‘বেশির ভাগ দেশ প্রথম দিকে উচ্চ আদর্শ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে তার রাজনীতির পরিবর্তন হয়। ভারতের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। নেহরুর ভারত আর এখনকার ভারত এক নয়’।
লি সিয়েন লুং বলেন, ‘বেশিরভাগ দেশ আদর্শ এবং মহৎ মূল্যবোধের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। তবে প্রায়শই তা হয় না। প্রতিষ্ঠিত কয়েকজন নেতা কিছু ভাবনা তৈরি করেন, যা কয়েক দশক এবং কয়েক প্রজন্ম ধরে চলে। ধীরে ধীরে সেই জিনিসগুলো পরিবর্তিত হয়। প্রথম দিকে আদর্শবোধ, নীতি থাকে রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে। কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে এমপিরা সেই আদর্শ ধরে রাখতে পারেন না’।