স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৫ ফেব্রুয়ারী।। সোনামুড়া থেকে উদয়পুর পর্যন্ত গোমতী নদীতে ১০টি জেটি নির্মাণ করা হবে। ৪০ কিমি দীর্ঘ এই জলপথের ড্রেজিংয়ের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
সোনামুড়ার নিকটস্থ শ্রীমন্তপুরের ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট টার্মিনালের উন্নত পরিকাঠামো ও সংস্কারের জন্য ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটি অব ইন্ডিয়া ও ল্যান্ডপোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া এবং ত্রিপুরা সরকারের পরিবহণ দপ্তরের মধ্যে মৌ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের সময় একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
আজ এই মৌ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি হয় রাজ্য সরকারি অতিথিশালার কনফারেন্স হলে। অনুষ্ঠানের শুরুতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকগণ মৌ স্বাক্ষর করেন এবং চুক্তিপত্র বিনিময় করেন। মৌ স্বাক্ষরের সময় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ও কেন্দ্রীয় বন্দর মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল উপস্থিত ছিলেন।
সোনামুড়া থেকে বাংলাদেশের দাউদকান্দি পর্যন্ত গোমতী নদীতে জলপথ চালু হয়ে গেলে রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়ন অনেক সহজতর হবে বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তিনি বলেন, এখন হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে ত্রিপুরাতে স্টিল, সিমেন্ট এগুলি আনতে অনেক খরচ পড়ে। সেক্ষেত্রে এই জলপথ চালু হয়ে গেলে ব্যয় অনেকটা কমবে।
রাজ্যের হাওড়া, দেও এইসব নদীগুলিতেও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বাড়িয়ে আগামীদিনগুলিতে জলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও বিস্তৃত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ইতিমধ্যেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর চালু হয়ে গেলে মৈত্রী সেতুর মধ্য দিয়ে প্রকৃত পক্ষেই ত্রিপুরা উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির প্রদেশদ্বার হয়ে উঠবে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলিতভাবে এই দিশাতেই কাজ করে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিক নির্দেশে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক কাজগুলি সময়ের মধ্যেই শেষ করার দিশায় কাজ চলছে। মৌ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল বলেন, জনগণের কাছে চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ বেশি করে পৌঁছে দিতে আয়ুষের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টায় আয়ুষ শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আজ বিদেশেও অনেক গুরুত্ব পাচ্ছে। সারা বিশ্বে আয়ুষকে পরিচিতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ রাজ্য অতিথিশালায় মৌ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে একথা বলেন কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল।ত্রিপুরার ক্ষেত্রে আয়ুষে বিশেষ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, রাজ্যে আরও ৫০টি আয়ুষ হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তুত রয়েছে।
তাছাড়াও ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ শয্যার আরও একটি আয়ুষ হাসপাতাল রাজ্যে স্থাপন করার ঘোষণা করেন তিনি। তবে আয়ুষ হাসপাতাল গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় জমির বন্দোবস্ত করবে রাজ্য সরকার। শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে আয়ুষের অপরিসীম গুরুত্বের কথাও উল্লেখ করেন কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রী। সেই সাথে ত্রিপুরায় কোভিড ভ্যাকসিনেশনের সাফল্য, আইন শৃঙ্খলার উন্নতি এবং মাদক মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের বিশেষ ভূমিকার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সার্বিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সেজন্য ত্রিপুরার বিকাশেও বিশেষ নজর দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারকে যে সকল প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে সেগুলি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, আগামীতে গোমতী নদীর উপর জেটি নির্মিত হবে। কার্গো ভেসেল, ট্যুরিস্ট ভেসেল সহ ইত্যাদি জলযান আসবে। এতে নৌপথের উপর ভর করে রাজ্যের আর্থিক প্রবৃদ্ধি আরও শক্তিশালী ও মজবুত হবে।
অনুষ্ঠানে পরিবহণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় গোমতী নদীতে ড্রেজিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ২৪.৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হওয়ায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি ত্রিপুরাতে পর্যটন শিল্পের বড় সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
মৌ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুখ্যসচিব কুমার অলক, ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটি অব ইন্ডিয়ার সদস্য (কারিগরী) আশুতোষ গৌতম, পরিবহণ দপ্তরের প্রধান সচিব এল এইচ ডার্লং।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা, এন এইচ এম-র অধিকর্তা সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল, ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটি অব ইন্ডিয়ার অধিকর্তা এ সেলভা কুমার সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকগণ।