স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৪ ফেব্রুয়ারী।।
লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উন্নয়ন কর্মসূচি রূপায়ণের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। জল জীবন মিশনে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে পানীয়জলের সংযোগ প্রদানের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার কাজ করছে।
বেশি পরিমাণ চাষযোগ্য জমিকে সেচের আওতায় আনার লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যে সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ চলছে তা নিয়মিত পর্যালোচনাও করতে হবে। আজ সচিবালয়ের ২নং সভাকক্ষে পূর্ত দপ্তরের পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন।
সভায় পূর্ত দপ্তরের বিভিন্ন বিভাগ যেমন, জল সম্পদ, গ্রাম সড়ক যোজনা, স্বচ্ছ ভারত মিশন (গ্রামীণ), ন্যাশনাল হাইওয়ে, সড়ক ও সেতু ইত্যাদি বিভাগগুলির পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। কারণ পরিকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমেই একটি রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন হওয়া সম্ভব।
সভায় পূর্ত দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে জানান, যোগাযোগ সংযোগ রক্ষায় রাজ্যে মোট ৮৮৮.৮১ কিমি ন্যাশনাল হাইওয়ে, ১,০৫৭ কিমি স্টেট হাইওয়ে, ৪৬১ কিমি জেলা সড়ক এবং ১,৬৮৫ কিমি গ্রামীণ সড়ক রয়েছে। ন্যাশনাল হাইওয়ের ৮৮৮৮১ কিমির মধ্যে ২৮১০২৮ কিমি রাস্তাকে পেভ সোন্ডার সহিত ডাবল লেন করা হয়েছে এবং পেভ সোল্ডার ছাড়া ডাবল লেন করা হয়েছে ২৩২ কিমি। এছাড়াও ২৫৮ কিমি জাতীয় সড়কের ডাবল লেনের কাজ চলছে। তিনি জানান, ২০২১২২ অর্থবর্ষে ১,৬৩৩ কিমি রাস্তা সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে পূর্ত দপ্তর।
ইতিমধ্যেই ১,৪৪৯.২৫ কিমি রাস্তা সংস্কারের কাজ দপ্তর শেষ করেছে। এছাড়াও ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১,০৫৯ কিমি রাস্তা সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পূর্ত দপ্তরের সচিব আরও জানান, পূর্ত দপ্তর ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ৪৫টি আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিলো। এরমধ্যে ৭টি আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বাকিগুলির নির্মাণ কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও ঐ অর্থবর্ষে ৭টি বক্স কালভার্ট নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিলো। এরমধ্যে ৫টি বক্স কালভার্ট নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। সভায় পূর্ত দপ্তরের জানান, পূর্ত দপ্তরের বিল্ডি রাজ্যের ২৫টি দপ্তরের ১৭৩টি প্রজেক্টের কাজ হাতে নেয়। এরমধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরের মার্চের মধ্যে ৬৭টি কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও বিজ্ঞান গ্রামের সিভিল ও ইলেকট্রিফিকেশনের কাজ ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তিনি জানান, আইজিএম হাসপাতালে গাইনোকোলজি ওয়ার্ডের পাশে একটি লিফট স্থাপন করা হয়েছে। শীঘ্রই এটি চালু করা হবে। খেজুরবাগানে মাল্টি স্টোরিড বিধায়ক আবাসে আসবাবপত্র কেনা এবং বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বসানোর কাজ শীঘ্রই শুরু করা হবে।
সভায় জল জীবন মিশন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সচিব কিরণ গিত্যে জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের ৭ লক্ষ ৬০ হাজার ৫২টি পরিবারে টেপ সংযোগের মাধ্যমে পানীয়জল পৌছানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত মোট ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ১১২টি পরিবারে টেপের মাধ্যমে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
আগামী মার্চ মাসের মধ্যে আরও ১ লক্ষের উপর পানীয়জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে। জল জীবন মিশনে এখন পর্যন্ত ১২৬টি জনবসতিতে ১০০ শতাংশ টেপ সংযোগের মাধ্যমে পানীয়জলের সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। সচিব জানান, জল জীবন মিশনে রাজ্যের ৩,৩৬৬টি বিদ্যালয়ে এবং ৪,৬৮৮টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে টেপের মাধ্যমে পানীয়জলের সংযোগ পৌছানো হয়েছে।
তিনি জানান, রাজ্যে পানীয়জলের উৎস মেরামত ও চালু রাখার ক্ষেত্রে পানীয়জল ও স্বাস্থ্যবিধি দপ্তর প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত / ভিলেজ কাউন্সিলে একজন করে জলসখি নিয়োগ করার উদ্যোগ নিয়েছে। সভায় স্বচ্ছ ভারত মিশন (গ্রামীণ) বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পূর্ত দপ্তরের সচিব জানান, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে মোট ৩৭ হাজার ৬৪৩টি শৌচালয় তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
কমিউনিটি টয়লেট নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ১১৬টি। সভায় জলসেচ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পূর্ত দপ্তরের সচিব সভায় জানান, রাজ্যে মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ২ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৪১ হেক্টর। বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৩৫৭ হেক্টর চাষযোগ্য জমিকে সেচের আওতায় আনা হয়েছে।
এছাড়াও পূর্ত দপ্তরের জলসেচ বিভাগের ২,০৫৫টি বিভিন্ন প্রকল্পে ৮২ হাজার ১৬৭ হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় আনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সেচ কৃষিকাজের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জল সম্পদ বিভাগের অধীনে যে সমস্ত সেচ প্রকল্পগুলির সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে তা দ্রুত সংস্কার করতে দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে যে সমস্ত সেচ প্রকল্পগুলি অচল অবস্থায় রয়েছে তা দ্রুত চালু করতে জ্বল সম্পদ দপ্তরকে বিদ্যুৎ ও পঞ্চায়েত দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পর্যালোচনা সভায় পানীয়জল ও স্বাস্থ্যবিধান মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, মুখ্যসচিব কুমার অলক, পরিকল্পনা ও সমন্বয় দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় এবং অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।