।। শিবেন্দ্র দেববর্মা।। ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের সক্রিয় সহযোগিতায় রাজ্যের জনজাতি সম্প্রদায়ের মহিলারা স্বসহায়ক দল গঠন করে স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন। এমনই একটি স্বসহায়ক দল জম্পুইজলা ব্লকের জগাইবাড়ি এডিসি ভিলেজের হামক্রাই বদল। উত্তর-পূর্বাঞ্চল জীবিকা প্রকল্পের অধীনে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল এই স্বসহায়ক দলটি গঠিত হয়। ভিলেজের ২নং ওয়ার্ডের ২৪ জন জনজাতি মহিলা নিয়ে এই স্বসহায়ক দল গঠিত হয়েছিল। এই স্বসহায়ক দলের সম্পাদিকা হন পুষ্পরাণী দেববর্মা। শুরুতে কিছু অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া যুক্ত হলেও স্বসহায়ক দলটি সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি। রাজ্যে ২০১৮ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে স্বসহায়ক দলগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্বসহায়ক দলগুলিকে স্বনির্ভর করে তুলতে কাজ শুরু করে ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন। ২০২০ সালের ২২ মে জনজাতি সম্প্রদায়ের ১০ জন মহিলা সদস্য নিয়ে হামক্রাই বদল স্বসহায়ক দল পুনরায় চালু করা হয়। জম্পুইজলা ব্লকের ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর অজিত দেববর্মা এই স্বসহায়ক দলকে হিসাবরক্ষা, কাগজপত্র ঠিক রাখা ইত্যাদি নিয়ে প্রশিক্ষণ দেন। জগাইবাড়ি এডিসি ভিলেজের এই স্বসহায়ক দলটি ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের কাছে আধুনিক পদ্ধতিতে পোল্ট্রি মোরগ পালনের জন্য আবেদন করেন। ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর অজিত দেববর্মা সিপাহীজলা জেলাশাসকের কাছে আবেদনপত্র পাঠিয়ে জেলাশাসককে অবগত করেন। জেলাশাসক তাদের আবেদপত্র মঞ্জুর করেন।জম্পুইজলা ব্লকের ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর অজিত দেববর্মা জানান, এই স্বসহায়ক দলকে সিপাহীজলা জেলাশাসক ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের লাইভলিহুড ফান্ড থেকে স্বল্প সুদে ৬ লক্ষ ৩ হাজার টাকা ঋণ দেন। প্রমোদনগর চখেরেংখেরেং ভিলেজ অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে এই টাকা দেওয়া হয়। শতকরা ৬ টাকা হারে ১ বছর ৬ মাসের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করা হবে। স্বসহায়ক দলের সম্পাদিকা পুষ্পরাণী দেববর্মা জানান, এই টাকা দিয়ে তারা অধিক ডিম ফলনে সক্ষম মুরগী চাষের জন্য সিদ্ধান্ত নেন। গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিশালগড়স্থিত পশ্চিম ব্রজলাল এলাকার স্বপন দেবনাথের জয়হরি ফিড এন চিক সেন্টার থেকে উন্নত প্রজাতির মোরগ আনা হয়। ২০ সপ্তাহ বয়সের মোট ৬৪০টি মোরগ ক্রয় করে আনা হয়। প্রতিটি মোরগের দাম পড়ে ৪৭৫ টাকা। এতে ব্যয় হয় ৩ লক্ষ ৪ হাজার টাকা। এছাড়া মোরগ রাখার জন্য ১৬০টি খাঁচা ক্রয় করা হয়। প্রতিটি খাচা ৮০০ টাকায় ক্রয় করা হয়। এতে ব্যয় হয় ১ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা। এছাড়া জলের ব্যবস্থা, খাদ্য, বিদ্যুতের ব্যবস্থা ইত্যাদির জন্য মোট প্রকল্পের সব টাকা ব্যয় করা হয়। পুষ্পরাণী দেববর্মা জানান, ঋণের প্রথম কিস্তির ৩ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে। সেই টাকা মোরগ সরবরাহকারীকে প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় কিস্তির বাকি টাকা পেলে সেই টাকাও সরবরাহকারীকে প্রদান করা হবে।স্বসহায়ক দলের সম্পাদিকা পুষ্পরাণী দেববর্মা জনান, ৭ অক্টোবর, ২০২১ মোরগ আনার পরের দিন থেকেই মোরগ ডিম দিতে শুরু করে। বর্তমানে প্রতিদিন ৬৪০টি মোরগ ডিম পারে। হালি প্রতি ডিম বাজারে ২৫ টাকায় বিক্রয় হয়। মোরগের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭০ কেজি খাদ্য লাগে এবং ৩ কেজি ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়। বর্তমানে এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর হতে পেরে এই স্বসহায়ক দলের সদস্যরা সবাই খুবই খুশি। এভাবেই রাজ্যের স্বসহায়ক দলগুলি গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে।