অনলাইন ডেস্ক, ৯ ফেব্রুয়ারী।। কথা দিয়েছিলেন, আয়-রোজগার বাড়াতে সাহায্য করবেন। তবে সে কথা রাখেননি আমির খান। এমনই দাবি করেছেন মধ্যপ্রদেশের একটি তাঁতশিল্লীর পরিবারের সদস্যেরা। সংসার চালাতে বিড়ি বেঁধে রোজগার করতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তারা। প্রায় ১৩ বছর আগে এক ডিসেম্বরে তাঁতশিল্পী কমলেশ কোরির বাড়িতে হঠাতই গিয়ে হাজির হন আমির খান। সঙ্গে ছিলেন কারিনা কাপূরও। সেটি ২০০৯ সাল।
সবে রাজকুমার হিরানির ফিল্ম ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর কাজ শেষ হয়েছে। আমির ছাড়াও তাতে মুখ্য চরিত্রে ছিলেন মাধবন, কারিনা, শরমন জোশী। মুক্তির অপেক্ষায় সে ফিল্মের প্রচারের কাজেই দেশের একাধিক জায়গায় যাচ্ছেন আমিররা। তারই অঙ্গ হিসাবে কমলেশদের বাড়িতে যান আমিররা। সে দিন আমিরদের আতিথেয়তায় কোনও কমতি রাখেননি কমলেশের পরিবার। মধ্যপ্রদেশের চন্দেরী শহরের প্রাণপুর গ্রামে একটি মাটির বাড়িতে দিন কাটে তাদের।
কমলেশের তাঁতে বোনা কাপড়ে চলে সংসার। সেই মাটির বাড়িতে বলিউডের চাঁদের হাট দেখে যারপরনাই খুশি কমলেশের স্ত্রী কমলা বাঈ ও তার ছেলেমেয়ে-সহ পরিবারের লোকজন। বলিউড তারকাদের রুটি-তরকারিও খাইয়েছিলেন কমলা। মাদুরে বসে আঙুল চেটেপুটে তৃপ্তি করে খেয়ে কমলার রান্নার প্রশংসাও করেছিলেন আমিররা। পাশাপাশি, কমলেশ এবং তার পরিবারের এক সদস্যকে মুম্বাইয়ে গিয়ে ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর প্রিমিয়ারেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যে খরচ বহন করবেন আমিররা। সঙ্গে ছিল আমিরের প্রতিশ্রুতি- রোজগার বাড়াতে কমলেশের জন্য মুম্বাইয়ে একটি শোরুম খুলবেন তিনি। আমির বলেছিলেন, ওই শোরুমের মাধ্যমে নিজের তাঁতে বোনা কাপড় বেচতে পারবেন কমলেশ-সহ গ্রামের তাঁতশিল্পীরা। শোরুমে কেনাবেচা বা মালপত্র সরবরাহের দায়িত্ব কমলেশের। এমনকি, শোরুমে আমির খান বা কারিনা কপূরের নামও ব্যবহার করতে পারবেন কমলেশ।
সে দিন কমলেশকে একটি সোনার আংটিও দিয়েছিলেন আমির। ‘এ কে’ আদ্যক্ষর খোদাই করা ওই আংটিটি নিজের হাত থেকে খুলে কমলেশের হাতে পরিয়ে দিয়েছিলেন খোদ আমির। কমলেশকে বন্ধু বলে সম্বোধন করেছিলেন। ফোন নম্বর দিয়ে বলেছিলেন, তাতে যোগাযোগ করা যাবে। ফেরার আগে উষ্ণ আলিঙ্গনে বেঁধেছিলেন কমলেশকে। কমলেশের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দু’টি শাড়িও কিনেছিলেন আমির। তার একটি কারিনাকে উপহার দেন তিনি। কমলেশের চোখ তখনও বিস্ফারিত। বলিউডের তারকা আমির যেন মাটির মানুষ!ওই দিনের পর রাতারাতি তারকার খ্যাতি পেয়ে যান কমলেশ। তবে তাতে কাজের কাজ হয়নি। আয় বাড়েনি তার। সে সব এখন অতীত! কমলেশের পরিবারের দাবি, কথা রাখেননি আমির খান। মুম্বাইয়ে শোরুম তো দূরের কথা। তার যে মোবাইল নম্বর দিয়েছিলেন, তাতে ফোন করলেও ধরেননি কেউ।
আমির আসার পর থেকে বছরের পর বছর গড়িয়েছে। লকডাউন চলাকালীন দেশের অনেকের মতো কাজ হারিয়েছেন কমলেশ। ২০২১ সালে আসে আরও বিপর্যয়। এক সময় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসারও খরচ জোটাতে পারেনি তার পরিবার।
অর্থাভাবে ছেলেমেয়েকে স্কুল ছাড়াতে বাধ্য হয়েছেন কমলেশের স্ত্রী কমলা। তার আক্ষেপ, আমির খান কথা রাখেননি। মুম্বাইয়ে গিয়ে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। তবে স্বামীর আয় বাড়ানোর জন্য প্রতিশ্রুতি পালন করেননি। কমলা বলেন, ‘ওঁকে (কমলেশকে) তিনি (আমির) একটি সোনার আংটি দেন। তাতে ‘এ কে’ লেখা ছিল। এখনও ওই আংটিটা আমার কাছে রয়েছে। এত কষ্টেও বেচিনি। আমির খান যে দিন এসেছিলেন, সেটাই তো আমাদের জীবনের সবচেয়ে মনে রাখার মতো দিন’। তবে তার আক্ষেপ, ‘আমি তাঁত বুনতে পারি না। তাই বিড়ি বেঁধে পেট চালাতে হচ্ছে’। কমলেশের পরিবারের এই দুর্দিনে আমির খানের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।