।। নীতা সরকার।। নতুন ব্যবসা শুরুর প্রথম শর্তই হল অর্থ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অর্থের অভাবেই ইচ্ছা ও মানসিকতা থাকলেও উপায় হয় না। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা সেই অর্থ সংস্থানের নিশ্চয়তা দেবে। মুদ্রা যোজনার উদ্দেশ্যই হবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অর্থের সংস্থান করা। এতদিন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অসাধু সুদকারবারীদের শোষণের শিকার হতেন।
এখন মুদ্রা যোজনা তাদের সেই শোষণের হাত থেকে রক্ষা করবে। সরকার প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে তাদের কর্ম প্রচেষ্টার পাশে থাকবে। কারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাই দেশ গঠনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন। ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল মুদ্রা যোজনার সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই যোজনা ছোট বা অতি ছোট উৎপাদন ইউনিটগুলিকে সামানা সুদে গ্যারান্টি ছাড়া ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে সাহায্য করছে।
ত্রিপুরা রাজ্যেও এই কয়েকবছরে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এই যোজনায় ঋণ নিয়ে ব্যবসায় লাভ করে স্বচ্ছল জীবন যাপন করছেন। এরই মধ্যে একজন আগরতলা পুর নিগমের ভট্টপুকুর ৩৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রীণা সরকার। তিনি বিভিন্ন ধরণের পোশাক তৈরিতে পারদর্শী। বাড়িতে বসেই তিনি সেইকাজ করে উপার্জন করার চেষ্টা করতেন। সবসময়ই চাইতেন পোশাক তৈরির একটি দোকান খুলতে। কিন্তু অর্থের অভাবে তিনি সেই রকমভাবে কিছুই করে উঠতে পারছিলেন না। তার স্বামী নির্মল ঋষিদাস পেশায় রং মিস্ত্রি। কিন্তু স্বামীর উপার্জনে সংসার চালাতেই কষ্ট হতো। তাই ব্যবসার জন্য অর্থের সংস্থান করার সামর্থ তার ছিল না। চলতি অর্থবর্ষে পশ্চিম জেলার ডিআরডিএ’এর সাহায্যে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে রীনা সরকার তার ব্যবসা করার ও আত্মনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেন।
ডিআরডিএ’এর প্রোজেক্ট আধিকারিকের মাধ্যমে রীণা সরকারের সাথে সাক্ষাৎকার হয়। তখন তার সাথে সাক্ষাতে জানা যায় আগে বাড়িতে কাজ করে তেমন রোজগার হতো না। এখন এই দোকানটি খোলার পর তার মাসিক আয় বেড়ে গেছে। তিনি জানান, প্রতিমাসে সব খরচ বাদ দিয়ে এই দোকানের দ্বারা কম করে হলেও ৩০ হাজার টাকা তার রোজগার হয়। রীণা সরকারের সংসারে এখন আর আর্থিক সংকট নেই। কিন্তু রীণা সরকারের স্বপ্ন আরও বড়। তাই তিনি মুদ্রা যোজনাতেই ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে তার ব্যবসার পসরা আরও বৃদ্ধি করতে চাইছেন। রীণা সরকার নিজের সাথে সাথে আরও দু’জন মহিলাকেও আত্মনির্ভর হওয়ার পথ করে দিয়েছেন। তার এই ব্যবসায় সহকারি হিসাবে কাজ করছেন সম্পা দে এবং সুপ্রিয়া পাল। শুধু তার নয় রীণা সরকার তার দোকানে এইকাজে উৎসাহী অন্যান্য মেয়েদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তার মনিবিষ্ণু টেইলার্সের চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো আছে তৈরি করা কুর্তি, সালোয়ার সহ আরও ছোট বড়দের জন্য তৈরি নানাবিধ পোশাক। দু’টো সেলাই মেশিনে অনবরত কাষ্টমারদের পোশাক তৈরি হচ্ছে।
সে নিজেও নানা কাজে ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সাথে কথা বলেছেন। রীণা সরকারের মতো এরকমই আরেকজন স্বউদ্যোগী মহিলা হলেন, আগরতলা মিলন সংঘের ঋষিপাড়ার প্রিয়াংকা ঋষি দাস। তিনিও গত অর্থবর্ষে মুদ্রা যোজনায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পোল্টিফার্ম শুরু করেন। এই ফার্ম থেকে তিনিও এখন মাসিক গড়ে ৩০ হাজার হাজার টাকা রোজগার করছেন। এদের এই স্বনির্ভরতার স্বপ্ন পূরণ দেখে বুঝাই যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা এরজ্যের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য কতটা সহায়ক ভূমিকা নিচ্ছে। দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষের আয়ের উৎস এই যোজনা কতটা মজবুত করছে রীণা সরকার ও প্রিয়াংকা ঋষি দাসের এক উজ্জ্বল প্রতীক।শুধুমাত্র চলতি অর্থবর্ষে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাতেই লিড ব্যাঙ্কের ম্যানেজার মনোজ ভদ্রের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ২০ হাজার ৭৯২ টি পরিবারকে মুদ্রা যোজনায় ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই ঋণের মধ্যে ১৪ হাজার ৪২২টি পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে, ৬ হাজার ১০৭টি পরিবারকে ৫০ হাজার থেকে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা এবং ২৬৩টি পরিবারকে ৫ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মুদ্রা যোজনায় ঋণ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা সমাজের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের উত্তোরণের জন্য একটি অন্যবদ্য যোজনা। অনগ্রসর বহু পরিবার এখন এই যোজনায় স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে উপকৃত হচ্ছেন।