স্টাফ রিপোর্টার, অমরপুর, ৫ ফেব্রুয়ারী।। ভাবি প্রজন্মের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী বর্ষাৎ জীবন নির্মাণের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার দ্বারা গৃহীত একাধিক সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। শ্রীশ্রী শান্তিকালী ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ও এই লক্ষ্য পূরণের পথে গতি সঞ্চারিত করবে।
আজ গোমতী জেলার অমরপুরের সরবঙ-এ শ্রীশ্রী শান্তিকালী ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। গুজরাতের গোরাসিয়া সোসাইটি ও স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত অর্থানুকূল্যে এই বিদ্যালয়টি নির্মিত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে প্রাকপ্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস থাকবে।
মোট শ্রেণীকক্ষ ১২টি। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন। তারপর শান্তিকালী আশ্রম পরিদর্শন ও প্রার্থনা করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, সরস্বতী পুজোর পণ্য দিনে স্বামী চিত্ত মহারাজের পৌরোহিত্যে যাত্রা করা শ্রীশ্রী শান্তিকালী ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় ভাবি প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা নেবে।
বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের পড়ুয়া সহ অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ জীবনকে উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নেবে। শিক্ষার উৎকর্ষতা ও গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজ্যের ১০০টি বিদ্যালয়কে সিবিএসসিতে রূপান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মিশন ১০০ বিদ্যাজ্যোতি বিদ্যালয় প্রকল্প শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্যের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য নজির।
এরজন্য রাজ্য বাজেট থেকে ব্যয় হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু একটা অংশ বিষয়টিকে বিকৃতভাবে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করার লক্ষ্যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই ধরনের অপপ্রচার থেকে বাদ যায়নি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও। যদিও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের ফলশ্রুতিতে রাজ্যের চিকিৎসকগণ একের পর এক সাফল্যের নজির তৈরি করছেন।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার দোহাই দিয়ে বিরোধীরা যখন প্রচারে ব্যস্ত তখনই রাজ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়ে গেলো প্রথমবারের মতো ওপেন হার্ট সার্জারি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কিডনি, নিউরো সহ বিভিন্ন জটিল রোগের সর্ব সুবিধাযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে যেন রেফারের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। রাজ্যে একটি অত্যাধুনিকমানের কিডনি চিকিৎসা বিভাগ চালুরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সফল অস্ত্রোপচার হওয়া অমরপুর নিবাসী বিধান ভৌমিক এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে রাজ্যে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ সৃষ্টির জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আর্থিক সংস্কৃতি এবং সর্বাঙ্গীন বিকাশের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশব্যাপী উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ চলছে। ত্রিপুরাতেও তা প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের জন্য যারা ভূমিদান করেছেন তাদের ভূমিকারও প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক রঞ্জিত দাস বলেন, শান্তিকালী আশ্রম বিশ্বশান্তির বার্তা নিয়ে নিরন্তর অগ্রসর। যা সৌভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরির পক্ষে ইতিবাচক কর্মকাণ্ড। বর্তমান রাজ্য সরকারের আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে এই অঞ্চলে সড়কের কাজ চলছে।
শান্তিকালী আশ্রমটিতে ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ছবিমুড়ার সাথে বিকাশের সুযোগ রয়েছে। উন্নত সড়ক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয়জল, পর্যটন সহ সমস্ত ক্ষেত্রেই বহুমুখী উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে অমরপুরে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক সিন্ধু চন্দ্র জমাতিয়া বলেন, দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী ছেলেমেয়েদের শিক্ষা প্রদানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে এই বিদ্যালয়টি।
অনুষ্ঠান শেষে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি চলে যান ছবিমুড়া। সেখানে স্পিড বোটে করে ছবিমুড়া পাহাড়ের গায়ে অংকিত ভাস্কর্য, গুহা পরিদর্শন করেন। সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে ছবিমুড়ার পরিকাঠামোগত এবং সংস্কারে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পর্যটকদের সুবিধার্থে গুহা পথে চলার উপযোগী কৃত্রিম সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রটির অপরূপ সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে সেখানে চলচ্চিত্র তৈরির উপরও দৃষ্টিপাত করেন তিনি। প্রাকৃতিক শোভা এবং সবুজে ঘেরা এই পর্যটন কেন্দ্রে আসার জন্য আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।