স্টাফ রিপোর্টার, শান্তিরবাজার, ৪ ফেব্রুয়ারি।। স্বরাষ্ট্র দপ্তরের পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ ও কর্মপদ্ধতিতে অভিনবত্ব সংযোজনের কাজ সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির মধ্যে নিষিদ্ধ নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার হ্রাস ও ড্রাগসের বিরুদ্ধে সাফল্যের নজির স্থাপন করেছে ত্রিপুরা। আজ টিএসআর নবম বাহিনীর হেডকোয়ার্টার পরিদর্শন শেষে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার টিএসআর নবম বাহিনীর হেডকোয়ার্টার ছাড়াও কোয়াইফাং পোস্ট ও বাগমারা প্ল্যাটুন পোস্ট পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পরিদর্শনকালে মুখ্যমন্ত্রী টিএসআর জওয়ানদের রেশন সামগ্রীর গুণগতমান, খাবার ও থাকার ব্যবস্থা, স্যানিটেশন সহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। তিনটি জায়গায়তেই সৈনিক সম্মেলনে জওয়ানদের সাথে মতবিনিময় করেন ও তাঁদের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তিনি অবহিত হন। তাছাড়াও টিএসআর নবম বাহিনীর হেডকোয়ার্টারে জওয়ানদের দ্বারা স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির ঘুরে দেখেন তিনি। কর্তব্য পালনে বীরত্বের সহিত যে জওয়ানগণ আত্ম উৎসর্গ করেছেন তাঁদের স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। আজ টিএসআর নবম বাহিনীর হেডকোয়ার্টার পরিদর্শনকালে জওয়ানদের সাথে বসে মধ্যাহ্ন আহার গ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্যে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি সহ মামলা নিষ্পত্তির হারও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বীরত্ব ও নিষ্ঠাপূর্বক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক কর্মসূচিতেও টিএসআর জওয়ানগণ অগ্রণী। সামাজিক মূল্যবোধ ও প্রবাহমান বিভিন্ন ঘটনাবলি সম্পর্কেও জওয়ানগণ ওয়াকিবহাল, তা ইতিবাচক দিক। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে ত্রিপুরার আয়তন তুলনামূলকভাবে ছোট্ট হলেও রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত রাজ্যের পুলিশের কর্মকুশলতার সর্বত্র মান্যতা রয়েছে। তার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ নির্মূলীকরণ সহ রাজ্য ও রাজ্যের বাইরেও রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করেছে এই গর্বের বাহিনী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের অধীন বিভিন্ন বিভাগ, পুলিশ, টিএসআর বাহিনীতে কর্মরত জওয়ানদের জীবনশৈলী, থাকা ও খাবার ব্যবস্থা সহ অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ে অবহিত থাকা এবং বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ববোধ থেকেই রাজ্যব্যাপী টিএসআরের বিভিন্ন বাহিনীর ক্যাম্প হেডকোয়ার্টার প্ল্যাটুন পোস্ট, হেডকোয়ার্টার সহ বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ নির্মূলীকরণ, নাগরিক নিরাপত্তা সহ নির্ধারিত কর্তব্য পালনের পাশাপাশি সাফল্যের গুচ্ছ নজির স্থাপন করেছেন টিএসআর জওয়ানগণ। বর্তমানে মহিলাদের এই বাহিনীতে যোগদানের আগ্রহ বাড়ছে। সম্প্রীতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও তা প্রতিফলিত হয়েছে। জওয়ানরা যেভাবে রাজ্যে ও রাজ্যের বাইরে দক্ষতাপূর্ণ সাফল্যের নজির স্থাপন করে চলেছেন তেমনি তাদের বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিও সরকারের আন্তরিক দৃষ্টি রয়েছে। সৈনিক সম্মেলনে দীর্ঘ কর্মজীবনে নিজেদের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে জওয়ানগণ জানান, বেতনের বৃদ্ধি, পদোন্নতি, পোশাকের নতুনত্ব, বিভিন্ন এলাউন্স বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ তাদের মনোবলকে অনেকটাই চাঙ্গা করেছে।
প্রথম প্রচেষ্টায় নানা সংশয় কাটিয়ে বর্তমানে রাজ্যের বাইরেও কর্তব্য পালনে জওয়ানগণ স্বেচ্ছায় আগ্রহী হচ্ছেন। নিজেদের কন্যা সন্তানদের প্রতি আরও বেশি যত্নবান হওয়ার লক্ষ্যে আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের বাইরে আরও টিএসআর পাঠানোর পরিকল্পনার কথাও এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী। পরিদর্শনকালে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন এডিজি পুনীত রস্তোগী, আইজি টিএসআর সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিক ও জওয়ানগণ। মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে ও মত বিনিময়ের সুযোগ প্রদানের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জওয়ানগণ।
পরিদর্শনকালে মুখ্যমন্ত্রী কোয়াইফাং ভিসির অন্তর্গত নবরাম পাড়ায় চলমান অত্যাধুনিক রিগ মেশিন দ্বারা পরিশ্রুত পানীয়জল উৎস স্থাপনের কাজ ঘুরে দেখেন। তখন তিনি বহিরাজ্য থেকে আগত খনন কাজে নিযুক্ত শ্রমিকগণের সাথেও কথা বলেন। তারা অকপটেই জানায়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ত্রিপুরার নাগরিকদের সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক মানসিকতা রাজ্যে কাজ করতে তাদেরকে উৎসাহিত করছে।