৷৷ নীতা সরকার ।। জিরানীয়া ব্লকের কইয়াচানবাড়ি এডিসি ভিলেজের সতীশ দেববর্মা এখন ডাল চাষ করে অতিরিক্ত আয়ের মুখ দেখছেন। ভিলেজে তার ৩ কানি টিলা ও ৪ কানি নাল জমি ছিলো। এই জমির বেশিরভাগ অংশই পতিত পড়ে থাকতো। অর্থের অভাবে কোনও ধরনের ফসলের চাষই করতে পারছিলেন না এই জমিতে।
জমিকে চাষ উপযোগী করাও ছিলো তার কাছে কষ্টসাধ্য। নিজের চেষ্টায় ও পরিশ্রমে নালজমির কিছু অংশে ধান ও শাকসব্জি চাষ করতেন। এই উপার্জন দিয়েই কোনওক্রমে সংসার চালাতে হতো। জমি থেকে যখন রোজগার আসতো না তখন দিনমজুরির কাজ করতে হতো। স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে এভাবেই চলছিলো জীবন।
এই অনিশ্চিত জীবন থেকে সতীশ দেববর্মা নিজেই আজ মুক্তির পথ খুঁজে নিয়েছেন। এই কাজে তিনি নিজের উৎসাহ, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের পাশাপাশি কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর এবং উদ্যান ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের সহায়তা পেয়েছেন। সুপারি বাগান করার মধ্য দিয়েই তিনি প্রথম একটি স্থায়ী রোজগারের উৎস সৃষ্টি করেন।
২ কানি জমিতে তিনি সুপারির চারা রোপণ করেন। বিনামূলো তাকে সুপারির চারা সরবরাহ করে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর। শুরু হয় তার উপার্জনের পথচলা। বর্তমানে এই সুপারির বাগান থেকে প্রতি বছর ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করেন।
তিনি জানান, শুধু সুপারি নয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সাহায্যে এখন তিনি পুরো ৩ কানি টিলা ও ৪ কানি সমভূমিতেই ফসল ফলাচ্ছেন। আর সেটা প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনার জনাই সম্ভব হচ্ছে। তিনি এখন কিষাণ সম্মাননিধি যোজনায় একজন সফল কৃষক। জিরানীয়া কৃষি মহকুমার সাহায্যে তিনি উন্নত বিজ্ঞানসম্মত কৃষি কাজে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।
কথা প্রসঙ্গে সতীশ দেববর্মা জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রবি মরশুমে জিরানীয়া কৃষি সেক্টর অফিসার গৌতম দেববর্মার উদ্যোগে তার জমির মাটি পরীক্ষা করা হয়। মাটি পরীক্ষার পর জানা যায় এই জমি মসুর ডাল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এরপর এগ্রিকালচার টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (আত্মা) প্রকল্পে তার ০.৪ হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে মসুর ডাল চাষ করা হয়। উৎপাদিত হয় ১,১৫০ কেজি মসুর ডাল।
এর থেকে বীজ ডাল রেখে ৫০০ কেজি ডাল ৪০ হাজার টাকায় বিক্রয় করেন সতীশ দেববর্মা। ডাল চাষ করে তার অতিরিক্ত আয় হয় ১৭ হাজার টাকা। সেই থেকে এখন প্রতি রবি মরশুমেই তিনি মসুর ডাল চাষ করছেন। মসুর ডাল চাষের ভালো ফলন ও লভ্যাংশ দেখে এলাকার অন্য কৃষকগণও ডাল চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।
অভিজ্ঞ কৃষক সতীশ দেববর্মা স্ত্রী, পুত্র কন্যাদের নিয়ে এখন ভালো ও স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন। হাসিমুখে তিনি জানালেন, তার জীবনের এই স্বচ্ছলতার একমাত্র কারণ প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনা ও আত্মা স্কিম। এখন বছরের সব মরশুমেই তার জমিতে ধান, সরিষা, ডাল ও নানা শাকসব্জি চাষ হচ্ছে।
জিরানীয়া এলাকার বিভিন্ন বাজারে তার জমিতে উৎপাদিত ফসল সারা বছরই বিক্রয় হয়। নিজের এই সাফল্যের জন্য তিনি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতি তার কৃতজ্ঞতার কথা জানান।