।। সিদ্ধার্থ শংকর পাল।। সরকারের জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন প্রকল্পে আত্মনির্ভর হয়ে উঠছেন রাজ্যের গ্রাম পাহাড়ের মানুষ। বিশেষ করে রাজ্যের প্রান্তিক এলাকার মহিলারাও দেখছেন আত্মনির্ভরতার স্বপ্ন। কিছু করার মানসিকতা এবং সরকারি সহযোগিতায় কিভাবে আত্মনির্ভরতার সোপান তৈরি করা যায় তারই প্রকৃত উদাহরণ তেলিয়ামুড়ার কাঁকড়াছড়া ভিলেজের বাসিন্দা কমলেশ্বরী জমাতিয়া ও বিশ্বরাণী জমাতিয়া। জুমচাষী কমলেশ্বরী ও বিশ্বরাণী দুই বোন। তেলিয়ামুড়া শহর থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরে কাঁকড়াছড়া গ্রাম।
তেলিয়ামুড়ার চাকমাঘাট ব্যারেজ পার হয়ে গ্রামীণ পথ ধরে যেতে হয় মুঙ্গিয়াকামী ব্লকের কাঁকড়াছড়া ভিলেজে। ভিলেজে ৪৭৫টি জনজাতি পরিবারের বসবাস। লোকসংখ্যা প্রায় ১,৯০০। কমলেশ্বরী ও বিশ্বরাণী চিরাচরিত প্রথায় জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বনাধিকার আইনে প্রাপ্ত জমিতে বসত বাড়ি তৈরি করেছিলেন তারা। পরিবারের সদস্য ৮ জন। জুম চাষই ছিলো তাদের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উৎস।
এতে ৮ জনের পরিবারে অভাব অনটন লেখেই থাকতো। কিন্তু মনে ছিলো স্বনির্ভর হওয়ার আকাঙ্খা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজ্য সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সহযোগিতায় দুই বোন ২ হেক্টর টিলাজমিতে প্রায় ৮০০ মুসাম্বি ফলের চারা রোপণ করেন। বর্তমানে এই মুসাম্বির গাছগুলি অনেকটাই বড়। ফলনও এসে পড়বে খুব দ্রুত বলে জানান কমলেশ্বরী।
তার এই বাগান সত্যিই দেখার মতো।কৃষি দপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী জঙ্গল পরিষ্কার করা, জল দেওয়ার কাজ করছেন তিনি এখন। মুঙ্গিয়াকামীর আঞ্চলিক কৃষি আধিকারিক সেকরেটিস দেববর্মা জানান, আগামী বছর থেকেই এই বাগান থেকে ন্যূনতম ১.৫ থেকে ২ লক্ষ টাকা বাৎসরিক আয় হবে কমলেশ্বরী জমাতিয়াদের। পরবর্তী সময়ে ফলন আরও বাড়বে।
উল্লেখ্য, কমলেশ্বরী জমাতিয়ার এই বাগান গড়ে তোলার পেছনে সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে বিধায়ক ড. অতুল দেববর্মার। রাজ্যের জমি ও আবহাওয়া মুসাম্বি চাষে সহায়ক। এখানে মুসাম্বির চাষ ভালো হলে সারা দেশে মুসাম্বির বিপণন করা যাবে। একথা মাথায় রেখেই বিধায়ক ডা. অতুল দেববর্মা ভিলেজবাসীদের মুসাম্বির চাষে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন।
কাঁকড়াছড়া ভিলেজের কমলেশ্বরী জমাতিয়াকে দেখে বোন বিশ্বরাণী জমাতিয়াও তার টিলাতে সম পরিমাণ মুসাম্বির গাছ লাগিয়েছেন। বিশ্বরাণী দ্রুত রোজগারের আশায় তার জমিতে কলা গাছও লাগিয়েছেন। প্রায় ৩,২০০ কলা গাছ রয়েছে তার বাগানে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি সহযোগিতায় এই কলা বাগান তৈরি করা হয়।
আগামীদিনে এই ফলের বাগান দুই বোনেরই প্রতিকূল জীবনে ভালো দিন আনবে এবং তাদের আত্মনির্ভর করে তুলবে বলেই আশা তাদের। কাঁকড়াছড়ার মতো দুর্গম গ্রামে জুমচাষী কমলেশ্বরী ও বিশ্বরাণী জমাতিয়ার আত্মনির্ভর হওয়ার প্রয়াস সত্যিই অনুপ্রেরণার।