স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৯ ডিসেম্বর।। জনকল্যাণে রাজ্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দ্রুততার সাথে রূপায়ণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। রাজ্য সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমস্ত অংশের মানুষকে সরকারি প্রকল্পগুলির সুফল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
আজ সচিবালয়ের ১নং সভাকক্ষে ভিশন ডকুমেন্ট নিয়ে পর্যালোচনা সভায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। সভায় রাজ্য সরকার ভিশন ডকুমেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের জনগণের সার্বিক বিকাশ ও তাদের কল্যাণে বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে রূপায়িত বিভিন্ন কর্মসূচিগুলির এ পর্যন্ত অর্জিত সাফল্য সহ কর্মসূচি বাস্তবায়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং আগামীদিনের জন্য যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে সেই বিষয়গুলি নিয়ে বিশদভাবে পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব।
পর্যালোচনা সভায় রাজ্য সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের লক্ষ্য অনুযায়ী পরিবহণ দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরাকে পর্যটনের আকর্ষণীয় কেন্দ্র রূপে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে হেলিকপ্টার পরিষেবার জন্য হেলিপোর্ট নির্মাণের উদ্যোগ নিতে পরিবহণ দপ্তরের প্রধান সচিবকে নির্দেশ দেন।
এছাড়াও তিনি আগরতলা এমবিবি এয়ারপোর্ট থেকে আগরতলা শহরে বাস পরিষেবা সহ সারুম এবং নিশ্চিন্তপুরের রেল ইয়ার্ড স্থাপনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত পর্যালোচনা করার জন্য পরিবহণ দপ্তরের প্রধান সচিবকে নির্দেশ দেন।
পর্যালোচনা সভায় এদিন মুখ্যমন্ত্রী জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের ভিশন ডকুমেন্টের লক্ষ্য অনুসারে দপ্তরের রূপায়িত বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিগুলি বিস্তারিত পর্যালোচনা করেন। তিনি বলেন, জনজাতিদের নিজস্ব উৎপাদিত বিভিন্ন বস্ত্র সামগ্রী বাজারজাতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি ভালো ডিজাইনার সহ পরামর্শদাতাকে এই ক্ষেত্রে যুক্ত করার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সভায় দপ্তরের সচিব আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, বর্তমানে ৪টি একলবা মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এবং ১টি একলবা মডেল ডে বোর্ডিং স্কুল চালু রয়েছে।
এছাড়া ৮টি নতুন একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রক থেকে ৩টি নতুন একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল স্থাপনের জন্য মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে বলে সভায় দপ্তরের সচিব জানান। মুখ্যমন্ত্রী গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনার মাধ্যমে রাজ্যের জনজাতি এলাকার সার্বিক বিকাশের বিষয়টিও সভার আলোচনায় প্রাধান্য পায়।
পর্যালোচনা সভায় নগর উন্নয়ন দপ্তরের সচিব ভিশন ডকুমেন্ট অনুসারে নেওয়া দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলির বর্তমান অবস্থা এবং গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হাওড়া নদীর দুপাশে সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি কাটাখালের উন্নতকরণের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
সভায় তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের লক্ষ্য অনুসারে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ এবং প্রচার সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিব। দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি সমূহ পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী যাত্রা শিল্পকে আরও বৃহৎ পরিসরে তুলে ধরার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে দপ্তরের সচিবকে পরামর্শ দেন। এছাড়াও তিনি পুতুল নাচের শিল্পকে প্রসারিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মেলা ও উৎসব নিয়ে একটি কপি টেবল বই প্রকাশ করার বিষয়ে সভার আলোচনায় প্রাধান্য পায়।
সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের লক্ষ্য অনুসারে পর্যটন দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলিও সভায় পর্যালোচনা করা হয়। কর্মসূচি সমূহ পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের চালু পর্যটন সহায়ক প্রকল্পে যে সকল ব্যক্তিদের পর্যটন পরিষেবায় ব্যবসা চালু করার জন্য ঋণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তাদের সাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে উৎসাহিত করার জন্য দপ্তরকে পরামর্শ দেন। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী কসবা কালীমন্দির এবং খয়েরপুরের চোদ্দদেবতা মন্দিরের আরও উন্নতিকল্পে নতুন প্রকল্প
গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। পর্যালোচনা সভায় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির পর্যালোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাবার ট্যাপারদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও রাবার শিটের গুণমান উন্নয়নের উপর আরও বেশি পরিমাণে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য দপ্তরের সচিবকে পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে তিনি রাবারের উপর মিনি মিশন প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন। এছাড়াও তিনি রাজ্যের চা বাগানগুলিকে সমবায়ের সাথে সংযুক্ত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। পাশাপাশি চা শ্রমিকদের জীবন জীবিকার মানোন্নয়নের কথাও উল্লেখ করেন।
পর্যালোচনা সভায় খাদ্য দপ্তরের সচিব দপ্তরের রূপায়িত বিভিন্ন কর্মসূচিগুলি নিয়ে আলোচনা করে বলেন, রাজ্যে বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে রেশন সংগ্রহ করছে নাগরিকরা। স্মার্ট রেশন কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইতিমধ্যে ১৫৩টি রেশন শপ পরিচালনার জন্য মহিলাদেরকে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী রেশন শপগুলিতে হোম ডেলিভারি পরিষেবা চালু করার জন্য দপ্তরের সচিবকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলেন। সভায় মুখ্যসচিব কুমার অলক উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন।
পর্যালোচনা সভায় এছাড়াও রাজস্ব সংখ্যালঘু কল্যাণ, এবিসি কল্যাণ, অর্থ, সাধারণ প্রশাসন (অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিফর্মস), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ট্রাইবেল রিসার্চ অ্যান্ড কালচারেল ইনস্টিটিউট ইত্যাদি বিভিন্ন দপ্তর সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব উন্নয়নমূলক কর্মসূচি রূপায়ণ করছে এবং আগামীতে যে সকল কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধান সচিব এবং সচিবগণ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।