স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২১ জানুয়ারি।।ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির ৫০তম বর্ষ আজ রাজ্যব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে। রাজ্যের মূল অনুষ্ঠানটি রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১নং প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য দিবসের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী দেবুসিন চৌহান উপস্থিত ছিলেন। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির ৫০তম বর্ষপূর্তির মূল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
উপস্থিত ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যগণ, মুখ্যসচিব কুমার অলক। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির ৫০ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ‘লক্ষা-২০৪৭’ ও ডাক টিকিটের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ‘ইন্ডিয়ান পারফিউম’- আগর উডের লোগো প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী দেবুসিন চৌহান। তাছাড়াও পূর্ণরাজ্য দিবস উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানে পূর্ণরাজা দিবস সম্মাননা ২০২২ ও চিফ মিনিস্টার্স সিভিল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির ৫০তম বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও বার্তায় রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ত্রিপুরার ইতিহাস সবসময়ই গরিমায় পরিপূর্ণ। মাণিক্য রাজ থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত ত্রিপুরা একটি স্বশক্ত রাজ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। রাজ্যের জনজাতি থেকে শুরু করে সব অংশের জনগণ ত্রিপুরার উন্নয়নে একজোট হয়ে কাজ করছেন। ত্রিপুরা প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে মা ত্রিপুরাসুন্দরীর আশীর্বাদে সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা বর্তমানে উন্নয়নের দিশায় দ্রুত এগিয়ে চলছে। তাতে ত্রিপুরার জনগণের চিন্তাধারার বড় ভূমিকা রয়েছে। ত্রিপুরার জনগণের প্রতিটি প্রয়োজন পূরণ করার লক্ষ্যে ডাবল ইঞ্জিন সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ত্রিপুরা আগামীতে বাণিজ্য করিডোরের হাব হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এক সময়ে দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির সঙ্গে ত্রিপুরার সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র উপায় ছিলো সড়কপথ।
বর্ষার সময় ভূমিধূস হয়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে ত্রিপুরা সহ পুরো উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব দেখা দিতো। বর্তমানে ত্রিপুরা সড়ক যোগাযোগ সহ রেল, বিমান ও জলপথের মাধ্যমে দেশ বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। জলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে চিটাগাং বন্দরের অনুমতি চেয়েছিলো ত্রিপুরা সরকার, যা ডাবল ইঞ্জিনের সরকার পূরণ দিয়ে সালে আখাউড়া ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট বাংলাদেশ প্রথম ট্রানজিট কার্গো ত্রিপুরায় পৌঁছেছে।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও বার্তায় আরও বলেন, সার্বিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরা এখন উন্নত রাজ্যগুলির সঙ্গে সামিল হতে যাচ্ছে। ত্রিপুরা সরকার গরিবদের পাকা ঘর প্রদানে প্রশংসনীয় কাজ করছে। শুধু তাই নয় ঘর নির্মাণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকেও প্রয়োগ করছে। প্রশাসনিক পারদর্শিতা থেকে শুরু করে আধুনিক পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে যে উন্নত ত্রিপুরা গড়ে উঠছে তা আগামী দশকের জন্য রাজ্যকে তৈরি করবে। এরজন্য বর্তমান রাজ্য সরকার কঠোর পরিশ্রম করছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
পূর্ণরাজ্য দিবসের ৫০তম বর্ষ পালনের মূল অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভাষণ রাখতে গিয়ে বলেন, ত্রিপুরাসুন্দরী মায়ের আশীর্বাদে ত্রিপুরা এখন বিকাশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ত্রিপুরা উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে ইতিহাস বিজড়িত একটি অন্যতম রাজ্য যা আজ পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির ৫০ তম বর্ষ পালন করছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী শাহ বলেন, দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে দায়িত্বভার গ্রহণ
করে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছেন। ফলে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সঙ্গে দিল্লির দূরত্ব অনেকটাই কমে গেছে। প্রধানমন্ত্রী উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে অষ্টলক্ষ্মী আখ্যা দিয়ে উন্নতির সংকল্প নিয়েছেন। বিগত দিনে দেখা গেছে দিল্লি থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য যে অর্থ প্রদান করা হতো তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হতো না।
বর্তমানে দিল্লি থেকে যে পরিমাণ অর্থ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য পাঠানো হয় তা সঠিকভাবে রাজ্যগুলির উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ৪ বছরে ত্রিপুরায় যোগাযোগ, পরিকাঠামো, ক্রীড়া, বিনিয়োগ, কৃষি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের যৌথ আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে ত্রিপুরার দীর্ঘদিনের ব্লু শরণার্থী পুনর্বাসনের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। ব্লু শরণার্থীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তাদের গৃহ নির্মাণ সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্যাকেজের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার প্রদান করেছে।
ব্রু শরণার্থীরা এইসব প্রচেষ্টার ফলে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে এসে ত্রিপুরার উন্নয়নের কাজে সামিল হবেন বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরার ডাবল ইঞ্জিন সরকার ২০১৮ সাল থেকে নিয়ম, নীতি, নিয়ত এই তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে ত্রিপুরার আমুল পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এই ডাবল ইঞ্জিন সরকারের প্রায় ৪ বছরের সময়কালের মধ্যে ত্রিপুরার জনগণের গড় আয় প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার হয়েছে।
শুধু তাই নয় এই ডাবল ইঞ্জিন সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই রাজ্যের কৃষকদের মাসিক গড় আয় বেড়ে ১১ হাজার ৯৬ টাকা হয়েছে। যা ২০১৫-১৬ সাল ছিলো ৬,৫৮০ টাকা। এছাড়াও রাজ্য সরকার জাতীয় সড়ক উন্নয়নে, সৌভাগ্য যোজনা প্রকল্প রূপায়ণে, অটল জলধারা মিশনের মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংযোগ প্রদানে প্রশংসনীয় কাজ করছে। ত্রিপুরার এই উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এবং ত্রিপুরাকে উন্নত রাজা হিসেবে গড়ে তুলতে রাজ্যের জনগণকে ত্রিপুরা সরকারের পাশে থাকার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী দেবুসিন চৌহান বলেন, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে ত্রিপুরা একটি ইতিহাসজড়িত রাজা। ত্রিপুরায় জাতি জনজাতি অংশের জনগণ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে বসবাস করছে। দেশের উন্নয়নের মানদণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিপুরার উন্নয়ন আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু ত্রিপুরার বিগত সরকারের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে উন্নয়ন সেভাবে ঘটেনি।
২০১৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশে সিনভার নেওয়ার পর উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নের পথ খুলে যায়। অনুরূপভাবে ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় শাসন ক্ষমতা পরিবর্তনের পর রাজ্যের পরিকাঠামো, যোগাযোগ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের গতি বেড়ে যায়। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের ইতিবাচক প্রচেষ্টার ফলে ত্রিপুরার উন্নয়নের যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছে তা কেউ আটকাতে পারবে না। ২০১৪ সাল থেকে পরিকাঠামো, যোগাযোগ ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্র সরকার কাজ করছে।
ত্রিপুরার যোগাযোগ, পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি টেলিকম পরিকাঠামো উন্নয়নেও কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রক আরও উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে তিনি রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে সমগ্র দেশ আত্মনির্ভর ভারত ও স্বনির্ভরতা এই দুই মন্ত্রকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। তার সাথে উন্নয়নের প্রশ্নে একদা উপেক্ষিত ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের অষ্টলক্ষ্মীকে আত্মনির্ভর করার দিশায় কাজ চলছে। পাশাপাশি ত্রিপুরাকেও সমৃদ্ধশালী রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে বিকাশমূলক কর্মকান্ডে গতি সঞ্চারিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ভাবি প্রজন্মের সামনে একটি স্পষ্ট ভবিষ্যৎ রূপরেখা তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা নেবে আগামী ২৫ বছরের পরিকল্পনা। আগামী ২৫ বছর ত্রিপুরা কোন পথে অগ্রসর হবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর হাত ধরে তা জনগণের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই ভবিষ্যৎ রূপরেখা যুবকদের রোজগারের নয়া দিশা দেখাবে। ২০১৪ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গির ফলশ্রুতিতে উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি ‘নিউ ইঞ্জিন’ রূপে মূল উন্নয়নের স্রোতের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। অতি সম্প্রতি অত্যাধুনিক মানের বিমানবন্দর চালু হয়েছে রাজ্যে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আত্মনির্ভর মহিলারাই আত্মনির্ভর রাজ্য নির্মাণ করতে পারেন। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মহিলা ক্ষমতায়ন ও স্বশক্তিকরণ ও রোজগার সৃজনের লক্ষ্যে গুচ্ছ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে রাজ্যে। আগে রাজ্যে স্বসহায়ক দলের সংখ্যা ছিলো ৪ হাজার। এই স্বসহায়ক দল নির্ভর অর্থনীতি ছিলো প্রায় ১০০ কোটি টাকার। কিন্তু বর্তমান কোভিড পরিস্থিতির পরেও প্রায় ২৬ হাজার স্বসহায়ক দল গঠিত হয়েছে।
এরসাথে প্রায় পৌনে তিন লক্ষ গ্রামীণ এলাকার মহিলারা যুক্ত রয়েছেন। এই স্বসহায়ক দল নির্ভর ১ হাজার কোটি অর্থনীতি তৈরি হয়েছে। মহিলা ক্ষমতায়নের ফলশ্রুতিতে ৫০০ মহিলা কনস্টেবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। অন্যান্য নিয়োগের ক্ষেত্রেও মহিলাদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। টিএসআর বাহিনীতে মহিলা নিয়োগের মতো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। কমেছে মহিলাদের উপর অত্যাচার। বেড়েছে মামলা নিষ্পত্তির হার।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮তে রাজ্যের মানুষের মাথাপিছু রোজগার ছিলো ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৬৭৪ টাকা। ২০২০-২১ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৯৯৫ টাকা। ২০১৭-১৮-তে কৃষকদের রোজগার ছিলো ৬,৫৮০ টাকা। বর্তমানে ত্রিপুরার স্বনির্ভর কৃষকদের রোজগার ১১ হাজার ৯৩ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর হীরা প্লাস মডেলের ফলশ্রুতিতে বর্তমানে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। কোভিড পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশের পাশাপাশি রাজ্যেও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন ও বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে। ত্রিপুরা থেকে রোগী বহিরাজ্যে রেফারের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বর্তমান সরকারের ঘরে তৈরি হয়েছে আত্মনির্ভরতার মানসিকতা। কোভিড পরিস্থিতিতে প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও বর্তমান সরকারের সময়ে প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার কর্ম সৃজন হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ১০ হাজার সরকারি চাকরি হয়েছে। আরও নিয়োগ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পূর্ণরাজা দিবসের রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা আজকের দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য হিসেবে ৫০ বছর পূর্ণ করলো৷ সি ক্যাটাগরি রাজা, কেন্দ্রশাসিত রাজ্য হিসেবে চলার পর পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা পেয়েছে ত্রিপুরা।
আর এই ৫০ বছরের সুদীর্ঘ সময়ে অনেক বদলেছে রাজ্য। রেল পরিষেবা সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে নানাদিক দিয়ে উন্নতি ঘটেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছরের পুরনো রিয়াং শরণার্থী সমস্যা সমাধান হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উপমুখ্যমন্ত্রী। এর পাশাপাশি রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে মিশন মুডে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য হিসেবে পথ চলার প্রেক্ষাপটে মহারাণী কাঞ্চনপ্রভা দেবীর বিশেষ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। এজনা মহারাণী কাঞ্চনপ্রভা দেবীকে ত্রিপুরার গণতন্ত্রের মাতা হিসেবে অভিহিত করেন।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার জন্য রাজ্য সরকার কৃষকদের কাছ থেকে সহায়কমূল্যে ধান ক্রয় করছে। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে সূচিত হয়েছে মিশন ১০০ বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৬টি জাতীয় সড়ক প্রকল্প পেয়েছে রাজা। বর্তমান সময়ে ত্রিপুরা গুটি গুটি পায়ে উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে। এখন আগরতলা থেকে দিল্লি পর্যন্ত সরাসরি বিমান চলাচল করছে।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, ত্রিপুরা একটা সময় রাজনাশাসিত ছিলো। ১৮৪ জন মহারাজা শাসন করে গিয়েছেন। তাদের পরাজমের জন্য ব্রিটিশরা এই রাজ্যে ঘাঁটি গাড়তে পারেনি। আজকের দিনে ত্রিপুরার সমস্ত মহারাজা এবং রাজ পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী। এর পাশাপাশি এই দীর্ঘ ৫০ বছর সময়ে ত্রিপুরার উন্নয়নে এবং জাতি জনজাতিদের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষায় যারা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তাদেরকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে রাজ্যবাসীকে অনেক ঘাত প্রতিঘাত পার করতে হয়েছে। আমাদের আরও অনেক অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে মুখ্যসচিব কুমার অলক ত্রিপুরা পূর্ণরাজা দিবসের প্রেক্ষাপট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি ত্রিপুরার জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। ওইদিনই উত্তর পূর্বের মেঘালয় ও মণিপুরের সাথে ত্রিপুরাও পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা পেয়েছে। আর এই দীর্ঘ ৫০ বছরে অনেক ঘটলাবলির সাক্ষী থেকেছে ত্রিপুরা। আগামীতে রাজ্য কোন দিকে এগিয়ে যাবে এজন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী, শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, পরিবহণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, খাদ্যমন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব, শ্রমমন্ত্রী ভগবান চন্দ্র দাস, কারামন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল, জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া, পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পূর্ণরাজা দিবসের পোস্টেজ স্ট্যাম্প, ইন্ডিয়া পারফিউম আগর উড়ের সূচনা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এর পাশাপাশি ‘লক্ষ্য ২০৪৭’ ডকুমেন্টের সূচনা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।