অনলাইন ডেস্ক, ১৮ জানুয়ারি।। অতিমারিতে গরিব যখন চাকরি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন– কোটি কোটি মানুষ বিশ্বজুড়ে ভিটেমাটি সর্বস্ব হারিয়েছেন– কত লক্ষ মানুষ অভাবে আত্মহত্যা করেছেন– ঠিক সেই সময়ে বিশ্বের ১০ জন ধনকুবের তাঁদের মুনাফা দ্বিগুণ বাড়িয়েছেন।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বিশ্ব সম্মেলেনর আগে এই কথা জানানো হয়েছে। প্রতি শীতে দাভোসে এই সম্মেলন হয়। এবার অতিমারির কারণে তা পিছিয়ে গ্রীষ্মে করার ঠিক হয়েছে। অক্সফ্যাম বলছে– অতিমারিতে বিশ্বের ১০ ধনকুবের সেকেণ্ডে ১৫ হাজার ডলার করে মুনাফা বাড়িয়েছে।
অর্থাৎ দিনে ১৩০ কোটি ডলার মুনাফা বেড়েছে। বিশ্বের ৩১০ কোটি লোকের মিলিত সম্পদ এই ১০ ধনীর কুক্ষিগত। অতিমারি শুরুর সময় থেকে প্রতি ২৬ ঘণ্টায় একজন করে ধনকুবের তৈরি হয়েছে বিশ্বে। অতিমারিতে শুধু স্বাস্থ্যের কারণে বিশ্বের ১৬ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গিয়েছে।
বিভিন্ন দেশের মধ্যে বৈষম্য যে হারে বেড়েছে তা স্মরণাতীতকালে এত কখনও বাড়েনি। ধনী দেশগুলির উৎপাদনও বাড়ছে। ২০২৩ সালে এইসব দেশের উৎপাদন আগের হারে ফিরে যাবে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলির উৎপাদনশীলতা গড়ে ৪ শতাংশ কমবে। ৪০ উন্নয়নশীল দেশে জনপ্রতি আয় ২০১৯ সালের চেয়েও কমে যাবে।
অতিমারিতে অসাম্য বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ২১ হাজার ৩০০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। প্রতি চার সেকেণ্ডে একজনের। স্বাস্থ্যসুরক্ষা না থাকার কারণে গরিব দেশগুলিতে প্রতি বছর গড়ে ৫৬ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। আর অভাবের কারণে মৃত্যু হয় বছরে ২১ লক্ষের বেশি মানুষের।
দেখা যাচ্ছে– ধনী দেশগুলিতে কোভিডের কারণে যত লোকের মৃত্যু হয়েছে তার দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে গরিব এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে। স্বল্প আয়ের দেশগুলিতে মাত্র ৭ শতাংশ লোক কোভিড ভ্যাকসিন পেয়েছে।
অন্যদিকে উচ্চ আয়ের দেশগুলিতে ৭৫ শতাংশের বেশি মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে। বিশ্বের গরিব এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির ৫০ শতাংশ যত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন ঘটায়– ১ শতাংশ ধনী দেশ তার দ্বিগুণ কার্বন ডাই অক্সাইড দূষণ ঘটায়।
যদি এমনই দূষণ ঘটানো হয় তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি লোককে নিদারুণ দারিদ্রের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। এই অতিমারি লিঙ্গ বৈষম্যও প্রচুর বাড়িয়েছে। অতিমারির আগের হিসেব ছিল– ৯৯ বছরের মধ্যে নারী-পুরুষ বৈষম্য পুরোপুরি ঘুচে যাবে। এখন যা হল– তাতে বলা যায় ১৩৬ বছর লাগবে এই বৈষম্য ঘোচাতে।