স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৮ জানুয়ারি।। রাজ্যের জনগণের সার্বিক কল্যাণে ভিশন ডকুমেন্টের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রূপায়ণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়িত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভিশন ডকুমেন্টের যে সমস্ত কর্মসূচি রূপায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বা চলছে তা সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলিকে আরও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।
দু’দিনব্যাপী সচিবালয়ের ১নং সভাকক্ষে রাজ্য সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন। সভায় রাজ্য সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দপ্তর যে সমস্ত কাজে সফলতা অর্জন করেছে এবং আগামীতে কি কি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পর্যালোচনা সভায় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় জানান, রাজ্য সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের অন্যতম বিষয় ছিল রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুন করা। রাজ্য সরকারের এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কৃষি দপ্তর বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে কাজ করছে।
এরমধ্যে রয়েছে খাদ্য শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেওয়া, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা, এফ সি আই ও পি ডি এস সিস্টেমের মাধ্যমে ধান সহ অন্যান্য খাদ্যশস্য কেনা এবং বিতরণের চেইন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা ইত্যাদি। তিনি জানান, কৃষি দপ্তরের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে রাজ্যের কৃষকদের বর্তমান মাসিক আয় বেড়ে ১১ হাজার ৯৬ টাকা হয়েছে। যা ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ছিল ৬৫৮০ টাকা। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের মধ্যে কৃষকদের মাসিক আয় ১৩ হাজার ৫৯০ টাকা করার লক্ষ্যে দপ্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে।
কৃষি দপ্তরের সচিব আরও জানান, রাজ্যে এগ্রো এন্টারপ্রেনারশিপ স্থাপনে, কৃষকদের কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করতে রাজ্যের প্রতিটি মহকুমায় কৃষকবন্ধু কেন্দ্র স্থাপন করা রাজ্য সরকারের ভিশন ডকুমেন্টে উল্লেখ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দপ্তর রাজ্যে ৩৬টি কৃষক বন্ধু কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। ইতিমধ্যেই ২৪টি কৃষকবন্ধু কেন্দ্র রাজ্যে চালু করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১২টি কৃষকবন্ধু কেন্দ্র শীঘ্রই চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কৃষি দপ্তরের সচিব জানান, রাজ্য সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের লক্ষ্য অনুসারে কৃষকদের আয় দ্বিগুন করার লক্ষ্যে উদ্যান দপ্তর রাজ্যের বিখ্যাত ক্যুইন প্রজাতির আনারসের সর্বোত্তম মানের উৎপাদন এবং বাণিজ্যিক বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করে কাজ করছে। গত আড়াই বছরে ৬ হাজার মেট্রিকটন ক্যুইন প্রজাতির আনারস দুবাই, কাতার সহ বহিরাজ্যে বাজারজাতকরণ করা হয়েছে।
সভায় প্রাণীসম্পদ বিকাশ ও মৎস্য দপ্তরের প্রধান সচিব বি কে সাহু জানান, রাজ্য সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের লক্ষ্য অনুসারে রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুন করার জন্য প্রাণীসম্পদ বিকাশ ও মৎস্য দপ্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করছে। রাজ্যে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্ত্রী বাহুরের সংখ্যা বাড়াতে সেক্স সর্টেড সিমেন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
পাশাপাশি দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আয়ের সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ডেয়ারি ক্ষেত্রে কো অপারেটিভ সোসাইটি গঠনের উপর দপ্তর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত রাজ্যে মোট ১১৯টি ডেয়ারি কো-অপারেটিভ সোসাইটি স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৪টি সোসাইটি মহিলা দ্বারা পরিচালিত। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুন করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।
এই লক্ষ্যমাত্রা পূরনে রাজ্য সরকার শুরু থেকেই কৃষি, পশুপালন, মৎস্য, ডেয়ারি সহ অন্যান্য প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলির উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। রাজ্যে মাছের চাহিদা পূরণে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে অনেকেই বায়োফ্লক পদ্ধতির মাধ্যমে মাছ চাষে আগ্রহী। তাদেরকে চিহ্নিত করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মৎস্য দপ্তরের প্রধান সচিবকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷
সভায় শিক্ষা ও বিদ্যুৎ দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে জানান, রাজ্য সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের লক্ষ্য অনুসারে বিদ্যুৎ দপ্তর সমস্ত সরকারী ভবন এবং জনগনের সুযোগ সুবিধা সম্বলিত স্থানে পুণর্নবীকরনযোগ্য শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই ট্রেডার মাধ্যমে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব সভায় জানান, রাজ্যের প্রতিটি জেলায় আয়ুষ হাসপাতাল স্থাপনের উপর রাজ্য সরকারের ভিশন ডকুমেন্টে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আয়ুষ হাসপাতাল স্থাপনের মাধ্যমে আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি, ন্যাচারোপ্যাথি ইত্যাদি বিকল্প ঔষধপত্র ব্যবহারের বৃদ্ধিই রাজ্য সরকারের প্রধান লক্ষ্য। রাজ্য সরকারের এই লক্ষ্যকে পূরণ করার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তর রাজ্যের প্রতিটি জেলায় আয়ুষ হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়াও রাজ্য সরকারের ভিশণ ডকুমেন্ট অনুযায়ী রাজ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি উন্নত এবং শক্তিশালী করার কাজ চলছে।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার বিভিন্ন দপ্তরের নানা প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি ঘরে রোজগার দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। রাজ্য সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের লক্ষ্য অনুযায়ী বিভিন্ন দপ্তর ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছে। পাশাপাশি ভিশন ডকুমেন্টকে বাস্তবে পরিনত করার লক্ষ্যে যে সমস্ত কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রূপায়ণ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলিকে নিয়মিত ফলো-আপ করার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পর্যালোচনা সভায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বন, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা, শিল্প ও বাণিজ্য, তথ্য ও প্রযুক্তি, গ্রামোন্নয়ন, পূর্ত, আরক্ষা, শ্রম, আইন, পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধান, সমবায় ইত্যাদি বিভিন্ন দপ্তর রাজ্য সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে যেসমস্ত কর্মসূচি রূপায়ণ করেছে এবং আগামীতে যে সব কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করেছে তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধানসচিব ও সচিবগণ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। সভায় উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, মুখ্যসচিব কুমার অলক এবং বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সচিব ও সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।