অনলাইন ডেস্ক, ১৭ জানুয়ারি|| এতকিছু করেও শেষরক্ষা হল না। চীনে ঢুকে পড়ল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। দেশকে করোনা-শূন্য করতে বদ্ধপরিকর চীন কড়াকড়ির সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কোনও অঞ্চলে সংক্রমণ ধরা পড়লেই বাসিন্দাদের তুলে নিয়ে গিয়ে দুই-তিন সপ্তাহের জন্য কোয়রেন্টিন ক্যাম্পে ‘বন্দি’ করা হচ্ছে।
সংক্রমণের আশঙ্কায় কোভিড-শূন্য অঞ্চলেও লকডাউন করে রাখা হচ্ছে। রাজধানী বেইজিংকে প্রায় গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল চীন সরকার। সামনেই এই শহরে শীতকালীন অলিম্পিক গেমস শুরুর কথা। ওমিক্রন নিয়ে সদা-সতর্ক ছিল সরকার। কিন্তু এত করেও অলিম্পিক গেমস শুরুর তিন সপ্তাহ আগে ওমিক্রন ঢুকেই পড়ল বেইজিংয়ে।
শনিবার প্রথম ওমিক্রন সংক্রমণটি ধরা পড়েছে বেইজিংয়ে। সঙ্গে সঙ্গে লকডাউন জারি করা হয়েছে শহরের নির্দিষ্ট এলাকায়। শুরু হয়েছে গণ-পরীক্ষা। বেইজিং সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংক্রমিত ব্যক্তির বাড়ি ও অফিস চত্বর ঘিরে ফেলেছে সরকারি সেনা।
ওই অঞ্চলে থাকা ২৪৩০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
বেইজিং চীনের রাজনৈতিক কেন্দ্র। দেশের শীর্ষনেতাদের আবাস এই শহর। সেই চিন্তাও রয়েছে প্রশাসনের। তাছাড়া, অলিম্পিক গেমস শুরুর আগে একে একে বিভিন্ন দেশ থেকে অ্যাথলিট আসা শুরু হয়ে যাচ্ছে। ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বসবে শীতকালীন অলিম্পিকের আসর। বিদেশ থেকে এত মানুষ আসবেন, সে ক্ষেত্রেই বা কী করে ওমিক্রন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। বেজিং মিউনিসিপালিটির মুখপাত্র শু হেজিয়াং বলেন, ‘নতুন ওমিক্রন সংক্রমণের খবরটি বিপদ-সঙ্কেত’।
সামনেই চন্দ্র বছর। এ সময়ে বিদেশে থাকা চীনা নাগরিকেরা দেশে ফেরেন, পরিবারের সঙ্গে উৎসবে যোগ দেন। চীনের পর্যটনের সবচেয়ে বড় মৌসুম এটি। সরকারের নির্দেশে সে সব আগে থেকেই বন্ধ। বহু আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা বা দেশের ভেতরের বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সংক্রমণ রয়েছে, এমন কোনও এলাকা থেকে বেইজিংয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। এ হেন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও ভেঙে ঢুকে পড়ল করোনাভাইরাসের নতুন ও অপ্রতিরোধ্য ধরন ওমিক্রন।
বিশ্বের অন্য প্রান্তে অবশ্য ওমিক্রন-ঝড়ের গতি ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। সে বার্তা দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিটেন-সহ বিশ্বের একাধিক দেশ। আমেরিকাও একই ইঙ্গিত দিয়েছে। আজ নিউ ইয়র্কের প্রাদেশিক প্রশাসনও ঘোষণা করল, আমেরিকায় সংক্রমণের ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠা এই প্রদেশে ওমিক্রনের আক্রোশ কমেছে ৪৭ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞেরা গোড়া থেকেই বলে আসছেন, যত দ্রুত ওমিক্রন-সংক্রমণ বেড়েছে, তত দ্রুতই এটি কমবে। নিউ ইয়র্কের সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৯ জানুয়ারি শীর্ষ ছুঁয়েছিল সংক্রমণ। তার পর থেকে কমতে শুরু করেছে ওমিক্রনের দাপট। নিউ জার্সি, ম্যাসাচুসেটস, কানেক্টিকাট, রোড আইল্যান্ডেও ওমিক্রনের একই গতিপ্রকৃতি লক্ষ করা যাচ্ছে। নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল বলেন, ‘এই শীতের মতো সংক্রমণ ঢেউের দাপট শেষের পথে। কিন্তু মহামারী শেষ হয়নি। টিকা নিতে থাকুন। বুস্টার নিতে থাকুন। বাচ্চাদের টিকাকরণ জরুরী। কাপড়ের মাস্ক নয়, মেডিক্যাল মাস্ক পরুন। এত পরিশ্রম করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে, একে ব্যর্থ হতে দেবেন না’।
ওমিক্রনের দাপটে আমেরিকায় দৈনিক সংক্রমণ বিশ্বের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। এক দিনে কোভিড পজিটিভ ধরা পড়েছিল ১৩ লাখ মার্কিন নাগরিকের। সেই তুলনায় সংক্রমণ কমেছে। তাতেও গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ লাখের বেশি মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন আরও ১০২৮ জন। এই নিয়ে সে দেশে কোভিডে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮,৭৩,১৪৯। মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৬ কোটি ৬৬ লাখ।