অনলাইন ডেস্ক, ৬ জানুয়ারি||জ্বালানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সাধারণ মানুষের তীব্র বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছে মধ্য এশিয়ার তেল-সমৃদ্ধ দেশ কাজাখস্তানের সরকার। বুধবার কাজাখ সরকারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ।
আগে জ্বালানি পণ্য এলপিজির দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু মঙ্গলবার এলপিজির ওপর থেকে সেই প্রাইস ক্যাপ তুলে নেওয়া হয়।
ফলে অনেকটাই বেড়ে যায় এলপিজির দাম। ফলে মঙ্গলবার থেকেই প্রতিবাদ শুরু হয়। একপর্যায়ে সেই প্রতিবাদ সহিংস হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজাখস্তানের সরকার প্রথমে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে। বড় শহরগুলোতে লকডাউনও ছিল। এরপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
শেষ পর্যন্ত পুরো সরকার নিয়ে পদত্যাগ করেন কাজাখ প্রধানমন্ত্রী। বুধবার প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। তিনি স্মাইলভকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার কাজাখস্তানের অয়েল হাব বলে পরিচিত মেঙ্গিস্টা শহরে প্রতিবাদ শুরু হয়। দ্রুত এই বিক্ষোভ অন্য শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। রাতেও বিক্ষোভকারীরা শহরের রাস্তায় ছিলেন। দেশের অন্যতম বৃহৎ শহর আলমাটিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছুঁড়েও বিক্ষোভ সামাল দিতে পারেনি। বিক্ষোভকারীরা সরকার ও সামরিক ভবনগুলোতে হামলার ডাক দেয়।
প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ বলেছেন, এই ধরনের প্রতিবাদ অন্যায়। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত বিক্ষোভকারীদের। এছাড়া এই সহিংসতার পেছনে অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি প্ররোচকদের হাত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কাজাখস্তানে অনেকেই এলপিজিতে গাড়ি চালান। সরকার এতোদিন দাম নিয়ন্ত্রণ করে রাখায় গ্যাসোলিনের চেয়ে এলপিজিতে গাড়ি চালানো সস্তা ছিল। সরকার সেই এলপিজির দাম বাড়ানোয় প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। যার জেরে সরকারের পতন হলো।
দেশটিতে গাড়ির জনপ্রিয় জ্বালানি এলপিজির দাম শনিবার দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি করার পরদিন রোববার তেল সমৃদ্ধ পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ মানজিস্তাউয়ে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে আলমাতিসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
আলমাতির পাশাপাশি মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শাইমক্যান্ত ও তারাজে বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনগুলোতে হামলা চালিয়েছে। এসব ঘটনায় ৯৫ জন পুলিশ আহত হয়। অপরদিকে পুলিশ দুই শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে।
বিক্ষোভ না থামায় আজ বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ। এ ভাষণ থেকে সিএসটিওর সাহায্য চেয়েছেন তিনি। রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে তৈরি পাঁচটি রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত এ জোট। দেশটির পরিস্থিতি শান্ত করতে সাহায্য চেয়েছেন তিনি।
এ ভাষণের পর আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও সিএসটিওর চেয়ারম্যান নিকোল পাশিনিয়ান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য’ সেখানে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো হবে। রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে।