অনলাইন ডেস্ক, ২৫ ডিসেম্বর।। বড়দিন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব। আর বড়দিন মানেই সান্টা ক্লজ। তিনিই যেন বড়দিনের প্রতীক। উজ্জ্বল লাল রঙের পোশাকে উপহারের থলে কাঁধে নিয়ে হাজির হন তিনি।
সান্টা চরিত্রটি শিশুদের মনে দারুনভাবে নাড়া দেয়। বলা হয়ে থাকে প্রতি বছর বড়দিনের আগের রাতে অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর রাতে বাচ্চারা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তাদের বালিশের পাশে সান্টা রেখে যান নানা ধরনের চকলেট ও উপহার। এই নিয়ে বিস্ময়ের ঘোর কাটে না শিশুদের। কখন আসেন সান্টা? কী ভাবে রেখে যান উপহার? কোথা থেকে আসেন তিনি? সারা বছর থাকেন কোথায়?
প্রচলিত একটি গল্প আছে। গরিব এক বাবা অভাবে পড়ে তিন মেয়েকে ক্রীতদাসী হিসেবে বিক্রি করে দিতে চাইল। সন্ন্যাসী সেন্ট নিকোলাস অভাবগ্রস্ত সেই বাবার পাশে দাঁড়ালেন। একসময় মেয়েদের বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ উপহার দিলেন তিনি। তাদের বিয়ে হলো। অসম্মানের হাত থেকে রক্ষা পেল তিন বোন। সেই থেকে তিনি খ্রিষ্টধর্মের মানুষের কাছে শিশুদের রক্ষাকর্তা হিসেবে পরিচিতি পান।
আমরা সবাই জানি সান্টা ক্লজ পাশ্চাত্য সংস্কৃতির কিংবদন্তি চরিত্র। আর সেইন্ট নিকোলাস, ফাদার খ্রিস্টমাস, ক্রিস ক্রিঙ্গল বা সাধারণভাবে ‘সান্টা’ নামে পরিচিত তিনি। এই মানুষটিও উপহার দিতেন সকলকে। গ্রিক ও বাইজানটাইন লোককথাতেও বাসিল অফ সিসেরিয়া সংক্রান্ত একই রকমের এক কিংবদন্তি বর্ণিত রয়েছে।
সেন্ট নিকোলাস ছিলেন বিশপের আলখাল্লা পরিহিত। তবে আধুনিক সান্টা ক্লজ স্থূলকায়, হাস্যমুখর, সাদা-দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি, যার পরনে সাদা কলারযুক্ত লাল কোট, লাল ট্রাউজার্স, কালো চামড়ার বেল্ট ও বুটজুতো থাকে। তবে সে যাই হোক শিশুদের মনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সান্টা থাকেন কোথায়?
বলা হয়, সান্টা ক্লজ সুদূর উত্তর মেরুতে চিরতুষারাবৃত এক দেশের মানুষ। কেউ বলেন, সান্টার বাড়ি ফিনল্যান্ডের ল্যাপল্যান্ড প্রদেশের কোরভাটুনটুরি পার্বত্য অঞ্চলে। সান্টা ক্লজ জাদুক্ষমতাসম্পন্ন অসংখ্য এলফ এবং তার পোষা আট-নয়টি উড়ন্ত বলগা হরিণের সঙ্গে বাস করেন।
বড়দিনের আগেরদিন তিনি সেই বড়ফের দেশ থেকে তার উড়ন্ত বলগা হরিণের গাড়িতে চেপে চলে আসেন লোকালয়ে। সকলকে উপহার আর আনন্দ ছড়িয়ে আবার ফিরে যান নিজের ঘরে।
যদিও এসবই গল্প । মূলত মা বাবারা তাদের সন্তানদের সান্টার এমন কাল্পনিক কাহিনী শুনিয়ে থাকেন তাদের দুষ্টুমি বন্ধ করার জন্য। বাচ্চাদের বলেন তারা যদি দুষ্টামি না করে লক্ষী হয়ে থাকে তাহলে সান্টা লক্ষ্মী ছেলেমেয়েদের মত তাকে খেলনা, চকলেট ও অন্যান্য উপহার দিয়ে যাবে আর যদি তা না হয় তাহলে দুষ্টু ছেলেমেয়েদের মত শুধু কয়লা দিয়ে যাবেন। বাচ্চারাও গিফটের আশায় দুষ্টুমি বন্ধ করে দেয়।
তবে শিশুদের সান্টাক্লজ-সংক্রান্ত বিশ্বাসগুলি শিক্ষা দেওয়ার বিপক্ষেও কেউ কেউ মত প্রকাশ করেন। কোনো কোনো খ্রিষ্টান মনে করেন, সান্টা সংস্কৃতি ধর্মীয় উৎস ও বড়দিনের উদ্দেশ্য থেকে শিশুদেরকে বিচ্যুত করছে।
অন্যান্য সমালোচকদের মতে, সান্টা ক্লজ সংক্রান্ত উপকথাটি একটি সুবিন্যস্ত মিথ্যা এবং যেকোন পিতামাতার পক্ষেই তাদের ছেলেমেয়েদের এই মিথ্যা অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপনে শিক্ষাদান অনৈতিক। আবার কেউ কেউ সান্টাক্লজকে বড়দিনের ছুটির বাণিজ্যকরণের প্রতীক হিসেবে তার বিরোধিতা করে থাকেন।