অনলাইন ডেস্ক, ১২ নভেম্বর।। ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু এবং ভ্যাটিকান সিটির সর্বময় কর্তা পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন যে, বিশ্ব দরিদ্রদের কান্না শুনছে না। যারা অসমভাবে ধনী হয়ে ওঠার পর দরিদ্রদেরকেই তাদের দূর্ভাগ্যের জন্য দোষারোপ করেন তাদের নিন্দাও করেছেন পোপ। পোপ ফ্রান্সিস ক্যাথলিক চার্চের আগামী রবিবার অনুষ্ঠেয় বিশ্ব দরিদ্র দিবসের আগে প্রায় ৫০০ জন দরিদ্র মানুষের সঙ্গে দেখা করার জন্য সেইন্ট ফ্রান্সিসের জন্মস্থান ইতালির আসিসিতে ভ্রমণের সময় আজ শুক্রবার একথা বলেন।
এসময় তিনি আফগান শরণার্থী সহ অনেক দরিদ্র মানুষের জীবনের গল্প শোনেন। দরিদ্র মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে সেন্ট মেরি অফ দ্য অ্যাঞ্জেলসের ব্যাসিলিকায় গিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রায়শই দরিদ্রদের উপস্থিতি বিরক্তিকর এবং অসহনীয় কিছু হিসেবে দেখা হয়। কখনও কখনও আমরা শুনি যে দরিদ্র মানুষরা নিজেরাই তাদের দারিদ্রের জন্য দায়ী’। ‘
আঘাতের সঙ্গে অপমান যোগ করে প্রায়ই দারিদ্রের দোষটি দরিদ্রদের কাঁধেই চাপানো হয়। যাতে আমাদের নিজেদের কার্যকলাপ, কিছু আইন এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অবিচার সম্পর্কে এবং যারা নিজেদেরকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ধনী করে তোলে তাদের ভণ্ডামি সম্পর্কে বিবেকের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে না হয়’। ২০১৩ সালে প্রথম ল্যাটিন আমেরিকান পোপ হওয়ার পর থেকেই পোপ ফ্রান্সিস দরিদ্র মানুষদের মুক্তির জন্য কাজ করাকে তার পোপগিরির মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হিসেবে ঘোষণা করেন।
প্রাক্তন কার্ডিনাল মারিও বার্গোগ্লিও হলেন প্রথম পোপ যিনি ফ্রান্সিসের নাম গ্রহণ করেছেন, যিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় দরিদ্রদের জন্য উত্সর্গ করেছেন। পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘দরিদ্রদের কাছে আওয়াজ ফিরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে কারণ তাদের অনুরোধগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বধির কানে পড়েছিল। অসংখ্য পরিবার যে বৈষম্যের মধ্যে আছে তা দেখার জন্য এখনই চোখ খোলার সময়’।
তিনি বলেন, ‘এখন আবারও সেই শিশুদের বাস্তবতা দেখে লজ্জিত হওয়ার সময় এসেছে যারা ক্ষুধার্ত, দাসত্বে নিমজ্জিত, জলে ছুঁড়ে ফেলার পর ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকার মতো অবস্থায় রয়েছে, নির্দোষ সব ধরনের সহিংসতার শিকার’। তিনি আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘যেন তাদের সম্মান করা হয় এবং পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা না হয়’।
এসময় স্ত্রী সহ আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা কাদেরী আব্দুল রাজ্জাক নামের একজন বয়স্ক ব্যক্তি কাঁদতে কাঁদতে পোপকে বলেন যে, কীভাবে তালেবানরা তার এক ছেলেকে হত্যা করেছিল। আফগানিস্তানে তিনি ইতালীয় সামরিক বাহিনীর জন্য কাজ করেছিলেন। যে কারণে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর তিনি পালিয়ে আসেন। তিনি তার অবশিষ্ট চার সন্তানকে আফগানিস্তান থেকে বের করে আনতে পোপ এবং ইতালি সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছেন।