অনলাইন ডেস্ক, ৪ নভেম্বর।। জার্মানির একটি আদালত বৃহস্পতিবার এক নারীকে তার ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচজনকে হত্যার দায়ে আজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। মামলার প্রসিকিউটররা ওই নারীকে ভয়ানক ‘হিংসুটে’ বলে আখ্যায়িত করে তার কারাবাসের প্রথম ১৫ বছরে তার জন্য প্যারোলে মুক্তির আবেদনের কোনো সুযোগও রাখেননি।
শুধুমাত্র ক্রিশ্চিয়ান কে. নামে চিহ্নিত ২৮ বছর বয়সী ওই মা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তার ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের বাথটাবে ডুবিয়ে বা শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
সোলিংজেন শহরের পারিবারিক ফ্ল্যাটে তার এক, দুই এবং তিন বছর বয়সী তিন মেয়ে এবং ছয় ও আট বছর বয়সী দুই ছেলের মৃতদেহ তাদের বিছানায় পাওয়া যায়, প্রত্যেকের মৃতদেহ একটি করে তোয়ালে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া গেছে।
এরপর ওই নারী নিজেও ডুসেলডর্ফ স্টেশনে একটি ট্রেনের সামনে নিজেকে ছুঁড়ে দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল এবং তিনি কোনো প্রাণঘাতি আঘাত না পাওয়ায় বেঁচে যান।
তার ৬ষ্ঠ সন্তান, সেই সময় ১১ বছর বয়সী একটি ছেলে, স্কুলে থাকার কারণে মায়ের এই নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে গিয়েছিল।
প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেছেন যে, ওই মা তার বাচ্চাদের হত্যার আগে তাদের সকালের নাস্তার পানীয়তে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন।
এই ভয়ানক হত্যাকাণ্ডের প্রসিকিউটররা তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছিলেন। তারা বলেন যে, ক্রিশ্চিয়ান কে. তার নিষ্পাপ সন্তানদের সরলতা এবং দূর্বলতার সুযোগ নিয়েছেন।
পশ্চিম জার্মানির উপারটালের আদালতের বিচারকরা বলেছেন যে, এই নারী তার কারাবাসের প্রথম ১৫ বছর প্যারোলে মুক্তির আবেদনও করতে পারবেন না।
প্রসিকিউটররা বলেন যে, ক্রিশ্চিয়ান কে. তার আলাদা হয়ে যাওয়া স্বামীকে নতুন বান্ধবীর সঙ্গে দেখার পরে রাগে তাদের সন্তানদের হত্যা করেন।
একটি অনলাইন চ্যাটে তিনি তার স্বামীকে এও বলেছিলেন যে, তিনি তার সন্তানদের আর কখনও দেখতে পাবেন না।
কিন্তু ক্রিশ্চিয়ান কে. সন্তানদের হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং বলেন যে, এক মুখোশধারী লোক তার ফ্ল্যাটে ঢুকে তাদের বাচ্চাদের হত্যা করে গেছে।
কিন্তু তদন্তকারীরা তার দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি, এবং বিচারকরা তার খালাসের আবেদন খারিজ করে দেন।
আদালত-নিযুক্ত মনোবিজ্ঞানী এবং মনোচিকিৎসকরাও তার কোনো মানসিক রোগের প্রমাণ পাননি। এবং তারা সিদ্ধান্ত দেন যে, অভিযুক্তকে তার কর্মের জন্য অপরাধমূলকভাবেই দায়ী করা যেতে পারে। কারণ তিনি সম্পূর্ণ সচেতন এবং সুস্থ্য মস্তিষ্কেই এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।