স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৫ অক্টোবর।। দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো আরও উন্নত ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার মিশনের সূচনা করেন। এই মিশনের মাধ্যমে আগামী ৫ বছরে দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে ৬৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
এই মিশনের সূচনা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। রাজ্যের সচিবালয়ের ভিডিও কনফারেন্স হলে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ শুনেন।
সে সময় মুখ্যসচিব কুমার অলক, স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল উপস্থিত ছিলেন। জাতীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে বর্তমান কেন্দ্র সরকার দিনরাত কাজ করছে। বিগত কেন্দ্রীয় সরকার দেশের নাগরিকদের মধ্যে স্বাস্থ্যের সুযোগ সুবিধা প্রদানে ততটা গুরুত্ব দেয়নি যতটা দেশবাসীর জন্য প্রয়োজন ছিল।
দেশবাসীকে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে দীর্ঘ সময় ধরে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। বর্তমান কেন্দ্র সরকার নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে দেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করছে। ভবিষ্যতে যে কোন ধরণের মহামারী মোকাবিলা করার জন্য উচ্চস্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে এই মিশনের মাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রাম-শহর এবং রকস্তর পর্যন্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আত্মবিশ্বাস এবং আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য দেশের ৬০০-র উপর জেলায় ৩৫ হাজারের অধিক নতুন শয্যার ব্যবস্থা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আয়ুষ্মান ভারত হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার মিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্যের সার্জারি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নতুন ১৫টি ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার তৈরী করা হবে।
এই মিশনের মাধ্যমে দেশের ৭৩০টি জেলায় ইন্টিগ্রেটেড পাবলিক হেলথ ল্যাব ইউনিট এবং সাড়ে তিন হাজার ব্লকে ব্লক পাবলিক হেলথ ইউনিট তৈরী করা হবে। দেশের স্বাস্থা পরিকাঠামো উন্নয়নে এই মিশনের মাধ্যমে ৫টি নতুন ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল, ৪টি নতুন ন্যাশনাল ভাইরাল ডিজিজ ইনস্টিটিউট, ১৫টি ভায়োরোলজি টেস্টিং ল্যাব তৈরী করা হবে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার মিশন আজ দেশের জনগণের প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। এই মিশনের মাধ্যমে সংকটপূর্ণ (ক্রিটিক্যাল) রোগ শনাক্তকরণের লক্ষ্যে আগামী ৪-৫ বছরে দেশের গ্রাম-শহর, ব্লক, জেলা, আঞ্চলিক এবং জাতীয়স্তরে ক্রিটিক্যাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষ করে উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং পাহাড়ী রাজ্যগুলিতে যেখানে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে সেখানে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার।
https://www.facebook.com/632536300181382/posts/3919856861449293/
তিনি বলেন, রোগীদের রোগ দ্রুত শনাক্ত করে বিনামূল্যে পরীক্ষা, ঔষধ ইত্যাদি সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে গ্রাম-শহরে হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার চালু করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা অতিমারীর সাথে লড়াইয়ে দেশে ১০০ কোটি ডোজ টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। এছাড়াও দেশের সকল নাগরিকদের বিনামূল্যে টিকা অভিযান সফলভাবে এগিয়ে চলছে। এজন্য দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী৷
আজ সন্ধ্যায় সচিবালয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চালু করা প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার মিশনকে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আজ বারানসীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিকাঠামো উন্নয়নের স্বার্থে এই বৃহত্তর যোজনা চালু করেছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব আজ সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের পূর্বতন সরকারগুলি স্বাধীনতার পর থেকে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যেটুকু পরিকাঠামো উন্নয়ন করেছে, ২০১৪ সালের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে সারা দেশে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সের সংখ্যা ছিল ৭টি।
বর্তমানে এইমসের সংখ্যা ২৩টি। বিগত সরকারগুলির মিয়কালে সারা দেশে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ছিল ৩৮৭টি। বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৮১টি। অনুরূপভাবে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের আসন সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার ৩৪৮টি। এখন সেটা হয়েছে ৮৫ হাজার ৮২৫টি। পাশাপাশি সারা দেশে হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার রূপান্তরিত হয়েছে ৭৯ হাজার।
আজকে চালু হওয়া বৃহত্তর স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর এই যোজনায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে ত্রিপুরায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে ৫৬.৯১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। তিনি জানান, এক্সটারনাল কোভিড রেসপন্স প্ল্যানে রাজ্যের জন্য ৯৩ কোটি টাকা অনুমোদন মিলেছে।
ইতিমধ্যেই এই খাতে ৮৩ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নতির জন্য দেশের যসন্দ্বী প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী এই যোজনার ঘোষণা দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা ও রাজ্যবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।