স্টাফ রিপোর্টার , আগরতলা, ১৬ অক্টোবর।। আগামীর প্রত্যাশা জাগিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শারদীয়া দুর্গোৎসব শেষ হল। চলছে বিসর্জন। রাজ্যের সর্বত্রই প্রতীমা বিসর্জন প্রক্রিয়া চলছে৷ রাজধানী আগরতলা শহরের কয়েকটি প্যান্ডেলে শনিবারও প্রতীমা রয়েছে৷ দর্শনার্থীরা প্রতীমা প্যান্ডেল ঘুরে দেখেন৷। ব্যাপক হারে চুরি, অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং বিক্ষিপ্ত কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ছিল এ বছরের দুর্গোৎসব৷ দূর্গা পূজার মধ্যে রাজধানী কিংবা রাজ্যের কোথাও বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই৷
বিশেষত প্রতিবেশী বাংলাদেশের যখন একাধিক সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা সর্বত্র দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে তখন রাজ্যে সর্ব ধর্মের সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে কেটেছে দুর্গোৎসব৷ মিশ্র বসতি এলাকাগুলোতে পুজো মণ্ডপের সামনে দেখা গেছে সর্ব ধর্মের লোকেদের সমাগম৷ এমনকি বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানাতে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আলিঙ্গনে দেখা গেছে মুসলিম ধর্ম গুরু সহ বিভিন্ন ধর্মের প্রধানদের৷ সমতলের পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকাগুলোতেও দুর্গোৎসবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই জাতি উপজাতি লোকেদের উৎসাহ লক্ষ্যণীয় ছিল৷
সবচেয়ে আনন্দের বিষয় ছিল এ বছর দুর্গাপূজাতে রাজধানী কিংবা আশেপাশে এখনো পর্যন্ত কোন ধরনের নারী ঘটিত অপরাধের ঘটনা সামনে আসেনি৷ তবে দুর্গা পুজোর পাঁচদিন রেকর্ড সংখ্যক চুরি হলো রাজধানী সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে৷ একই ভাবে পুজোর পাঁচদিন রেকর্ড সংখ্যক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে৷ আত্মহত্যা, সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে রহস্য মৃত্যু এবং খুনের অভিযোগ রয়েছে পুজোর দিনগুলোতে৷ এই বিষয়ে উল্লেখ্য ষষ্ঠীর দিন থেকে দশমীর দিন পর্যন্ত শুধুমাত্র রাজধানী এবং আশপাশের এলাকায় অর্ধশতের বেশি চুরির ঘটনা ঘটেছে৷
রাজধানীর বাইরে একাধিক চুরির অভিযোগ থাকলেও সবগুলির পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি৷ অভিযোগ ষষ্ঠীর দিন একযোগে চুরি হয় রাজধানীর শকুন্তলা রোড সহ কৃষ্ণনগর, জয়নগর এবং লঙ্কামুড়া এলাকায়৷ সপ্তমীর রাতে চুরি হয় লঙ্কামুড়া, রেশম বাগান, কৃষ্ণনগর, জিবি এলাকার কয়েকস্থানে৷ একই ভাবে চুরির ঘটনা ঘটে অষ্টমী, নবমী এবং দশমীর রাতে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থানা পুলিশের কাছে ফোন করলেও নাগরিকরা পুলিশের কোনো সাড়া পাননি বলে অভিযোগ৷ এমনকি থানা পুলিশের কাছে কিংবা সরকারিভাবে পুজোর পাঁচদিনে রাজধানীর আশেপাশে ঠিক কয়টি চুরি হয়েছে সে নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই৷
কিন্তু বেসরকারি তথ্যমূলে চুরির ঘটনা গত পাঁচদিনে ১০টির বেশি ছাপিয়ে গেছে৷ ষষ্ঠীর দুপুরে রাজধানীর শকুন্তলার রোডে একটি মুদি দোকানে ঢুকে চোখের পলকে চোর প্রায় এক লক্ষ টাকার বিড়ি-সিগারেট সহ দোকান মালিকের মোবাইল চুরি করে পালিয়ে যায়৷ কৃষ্ণনগরে বাড়ির লোকজন পূজা দেখতে গেলে চার ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে সর্বস্ব লুটে নেয়৷ রেশন বাগানে গভীর রাতে চোরের দল হানা দেয় একাধিক ঘরে৷ ঘরের বাইরে ঘটিবাটি যা ছিল সব কিছু চুরি হয়ে গেছে বলে স্থানীয় কয়েকজনের অভিযোগ৷
চুরি হয়েছে একটি সরকারি অফিস সহ সরকারি কোয়ার্টারে৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে সিসিটিভি’র ফুটেজ পর্যন্ত পুলিশের হাতে তুলে দেন ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকরা৷ কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই পুলিশ চোর ধরে চুরির মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি৷ তবে চুরির ঘটনা ছাড়াও পুজোর পাঁচদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে৷ তার মধ্যে কিছু রহস্য মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে৷ সূত্রের খবর ষষ্ঠী থেকে দশমী দিন পর্যন্ত জিবি হাসপাতালের মর্গে ১৬টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা নথিভুক্ত রয়েছে৷ উৎসবের মধ্যে একাধিক বাইক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০ জনের বেশি৷ রাজধানীর বিবেকানন্দ ময়দানে একটি পূজা মণ্ডপের সামনে প্রকাশ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে৷
এছাড়াও দশমীর রাতে বনমালীপুরের বিরোধী রাজনৈতিক দলের এক যুব নেতার উপর রাজনৈতিক হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে থানায়৷ সব মিলিয়ে দুর্গাপূজার পাঁচদিন খুব একটা স্বাভাবিক ছিল না রাজধানীর সার্বিক আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা৷ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, টিএসআর এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হলেও নাগরিকদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা প্রদান এবং নাগরিক সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে তাদের তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ লক্ষ্যণীয় ছিল না বলে অভিযোগ৷ নাগরিক সমাজ নিজেদের তৎপরতায় শান্তিপূর্ণ উৎসবের আনন্দ উপভোগ করেছেন৷