স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৯ সেপ্টেম্বর।। রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে ক্লাব এবং সামাজিক সংস্থাগুলি। জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে ক্লাবগুলির। গঠনমূলক পর্যালোচনার মাধ্যমে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জনকল্যাণে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে জনজাগরণে ভূমিকা নিতে হবে ক্লাবগুলিকে।
আজ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে ক্লাব এবং সামাজিক সংস্থাগুলি। একটা সময়ে রাজ্যের ক্লাব সংস্কৃতি সম্পর্কে সৃষ্ট বিরূপ ধারণার পরিবর্তন হয়েছে রাজ্যের মানুষের।
বর্তমানে ক্লাবগুলির মধ্যে তৈরি হচ্ছে সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশ। আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার আঁধার কাটিয়ে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা তৈরি হয়েছে। নানা সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকছে রাজ্যের ক্লাবগুলি। এর উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত কোভিড পরিস্থিতিতে টিকাকরণ সহ অন্যান্য সহায়তামূলক কর্মসূচিতে তাদের অগ্রণী ভূমিকা।
সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মসূচি ও জনকল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তা আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে ক্লাবগুলির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, নেশামুক্ত রাজ্য করার যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকার কাজ করছে তাতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহায়তা করে চলেছে রাজ্যের বিভিন্ন ক্লাব ও সামাজিক সংস্থাগুলি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন পূজা পার্বণ আমাদের প্রাণবন্ত করে তোলে। এক নতুন ভাবনায় উদ্ভাসিত হতে সহায়তা করে।
সম্প্রীতির বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। এই সময়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে রাজ্য সরকার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কোভিড পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে ১৮ বছরের নীচের ছেলেমেয়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও এই বয়সসীমার ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন রোগ প্রাদুর্ভাব থেকে প্রতিরোধের লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের গৃহীত মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব ও সুস্থ কৈশোর প্রকল্প বিশেষ উল্লেযোগ্য।
প্রায় ১৩ লক্ষ ছেলেমেয়েদের এর আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি ইতিমধ্যেই প্রায় ৯৯ শতাংশ লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। যার মূল লক্ষ্য ১৮ বছরের নীচের ছেলেমেয়েদের কোভিড টিকা গ্রহণের সুযোগ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলিকে এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পথ নির্দেশ করছে। যা রাজ্যের জন্য বড় প্রাপ্তি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা আমাদের একে অপরের পাশে দাঁড়াতে আরও বেশি করে শিখিয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে গঠিত হওয়া ক্লাব ফোরামের মাধ্যমে অধিক সংখ্যায় মানুষের করোনাকালে টিকাকরণ সহ বিভিন্ন পরিষেবার সহায়তা মিলেছে। তার পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ক্লাবেগুলির মধ্যে আভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিচ্ছে ফোরাম।
চাঁদা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সহায়তার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে রাজ্যের এক একটি ক্লাব। যা রাজ্যের জন্য সুখকর দিক। গতানুগতিকতার উর্ধে উঠে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে সামাজিক কাজে আরও বেশি করে আত্মনিয়োগ করার লক্ষ্যে ক্লাবগুলির প্রতি আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কর্মচারিদের তরফে কোনও দাবি আন্দোলন ছাড়াই আন্তরিকতার সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের ২০ হাজার টাকা পুজো অগ্রিমের ব্যবস্থা করেছে সরকার।যাতে শুধুমাত্র কর্মচারিরাই উপকৃত হবেন না এই অর্থ বাজারকে চাঙ্গা করবে। বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কোভিড আচরণবিধি ও সরকারি নিয়ম নির্দেশিকা মেনে পুজো আয়োজন করার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
এদিনের বৈঠকে আলোচনা করতে গিয়ে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক ভি এস যাদব বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা ও পুলিশ প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করবে। ট্রাফিক ও আইন শৃঙ্খলা সূচারুভাবে পরিচালনা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
মোবাইল পেট্রোলিং, অস্থায়ী পুলিশ বুথ, সিসি ক্যামেরা সহ যে কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তার পাশাপাশি দেবী নিরঞ্জনকে কেন্দ্র করে যাতে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলতা তৈরি না হয় সে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে দপ্তর। এক্ষেত্রে প্রতিটি পুজো উদ্যোক্তাকে নিরঞ্জনের সময় এবং নিরঞ্জন যাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা স্থির করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আলো কম বা অনাকাঙ্খিত ভিড় হতে পারে এমন জায়গাগুলি চিহ্নিত করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। কোভিড এবং রাজ্য সরকারের নীতি নির্দেশিকা মেনে পুজো আয়োজনের আহ্বান রাখেন পুলিশের মহানির্দেশক। তার পাশাপাশি পুজো প্যান্ডেলে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, সিসি ক্যামেরা, কোভিড আচরণবিধির মান্যতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে পুজো উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান সচিব জে কে সিনহা বলেন, দুর্গোৎসবের আনন্দের মাঝেও সবাইকে মনে রাখতে হবে করোনা এখনও সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যায়নি। আইন করে জনজাগরণ করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত থেকে শারদোৎসব অতিবাহিত করার লক্ষ্যে পুজো উদ্যোক্তা ও প্রত্যেকের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি। শ্রীসিনহা বলেন, রাজ্যে কোভিড টিকাকরণে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে ক্লাব ফোরাম।
সব প্রদেশেই ১০০ শতাংশ টিকাকরণ সম্পন্ন হবে। কিন্তু ত্রিপুরা সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো দ্রুততার সঙ্গে লক্ষ্যে পৌঁছানো। এক্ষেত্রে অনেকাংশেই সফলতা মিলেছে সবার সহযোগিতায়। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে কোনওভাবেই যেন করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি না পায় সেই লক্ষ্যে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
যারা সংক্রমিত হয়েছেন তাদেরকে দূরে সরিয়ে না থেকে মানসিকভাবে তাদের মনোবল যুগিয়ে ও অন্যান্যভাবে তাদের পাশে থাকতে সবার প্রতি আহ্বান করেন শ্রীসিনহা। তার পাশাপাশি সমস্ত পুজো উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান রাখেন কোভিড পরিস্থিতিতে প্রথমসারির যোদ্ধা যারা নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করে গেছেন মানুষের স্বার্থে তাদের সম্মানিত করার লক্ষ্যে যেন ক্লাবগুলি উদ্যোগ গ্রহণ করে।
এদিনের বৈঠকে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন রাজ্য সরকারের আচরণবিধি সম্পর্কে পুজো উদ্যোক্তাদের অবগত করে সেগুলি মেনে চলার লক্ষ্যে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। ভিড় এড়ানোর লক্ষ্যে খোলা পুজো মন্ডপ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
বৈঠকে ক্লাব ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রণব সরকার, চেয়ারম্যান সঞ্জয় পাল ও সভাপতি দীপক মজুমদার করোনা পরিস্থিতিতে ফোরামের গৃহীত উদ্যোগ ও আসন্ন দুর্গোৎসবকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে সরকারের সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে সর্বোত সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এদিনের বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও বিভিন্ন ক্লাবের পদাধিকারীরা। এদিনের বৈঠকে বেশ কিছু মহিলা পুজো উদ্যোক্তারাও উপস্থিত ছিলেন।