স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৫ সেপ্টেম্বর।। একাত্ম মানবতাবাদের প্রতীক পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জীবনাদর্শকে প্রত্যেকের জীবনে লাগু করতে পারলেই প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। একাত্ম মানবতাবাদের ভাবনাতেই সমাজের অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত সমস্ত সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে।
আজ রাণীরবাজারের গীতাঞ্জলি হলে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিরা পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের প্রতিকৃতিতে মালা পড়িয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
ভারতীয় প্রাচীন কৃষ্টি সংস্কৃতির উপর আস্থা রেখে কোন ভুল ব্যবস্থার প্রতি আপোষ না করার জন্য এদিনের অনুষ্ঠানে পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, বিগতদিনে রাজ্যে একটি ভিন্ন মানসিকতার প্রচারে অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। সঠিক রাজ সত্তা নির্ভুল ইতিহাস তৈরি করে। দেশ বিদেশী শাসনমুক্ত হলেও কায়েমি মানসিকতা পোষণকারীদের জন্য ভারতবর্ষের নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছিল।
বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠার পর ব্যক্তি জীবনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সমাপ্তি ঘটিয়ে সমস্ত অংশের মানুষের সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে। দলীয় সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে, সমাজের অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত সমস্ত ব্যবস্থা পৌঁছে দিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। এরই ফলশ্রুতিতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় অতি সম্প্রতি ১ লক্ষ ৫৯ হাজার পাকা ঘর, কোন ধরণের দলীয় স্বার্থ বিচার না করেই সমস্ত সুবিধাভোগী নির্বাচন করা হয়েছে। আরও ৭০ হাজার ঘর প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে।
সমস্ত সুবিধাভোগীরাই আবাস যোজনায় ঘর পাবেন। এটাই প্রধানমন্ত্রীর সবকা সাথ সবকা বিকাশ সবকা বিশ্বাসের নীতি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড টিকাকরণে ইতিমধ্যেই নজির গড়েছে ত্রিপুরা।তবে ১৮ বছরের নীচে ছেলেমেয়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির লক্ষ্যে, মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব, সুস্থ কৈশোর প্রকল্পের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও নিরাময়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জলবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেক বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয়জল ২০২২-এর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার। এই কাজে দ্রুত সাফল্য আনার লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
নাগরিক পরিষেবা প্রদান সরকারের অন্যতম গুরুত্বের ক্ষেত্র। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, ইতিহাসে এমন কিছু মহান ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যারা অমর হয়ে থাকেন। তাঁদের জীবন আদর্শ ও চিন্তাধারা আমাদের প্রেরণা দেয়। তাঁদের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবসময় অনুভব করি।
তিনি বলেন, পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় হলেন ভারতবর্ষের বিশিষ্ট রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর চিন্তাধারা ও মতবাদ অনেকটাই মহাত্মা গান্ধীর মত। তিনি ভারতবর্ষকে ভারতীয়তার ঐতিহ্যে ও সংস্কৃতির মহান পরম্পরায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে গেছেন। পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের একাত্ম মানবতাবাদের সদূরপ্রসারি প্রভাব রয়েছে।
তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, বিশ্বে অনেক মনিষীর অনেক মতবাদ রয়েছে কিন্তু আমাদের সেই মতবাদই আস্থা রাখতে হবে, যে মতবাদের দ্বারা দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের একাত্রা মানবতাবাদের উপর ভিত্তি করেই দেশ পরিচালনা করছেন ও বিশ্বের দরবারে ভারতবর্ষের চিরন্তন ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ড. অরবিন্দ মাহাতো বলেন, পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় ভারতবর্ষের চিন্তাধারা একাত্ম মানবতাবাদের মধ্যদিয়ে তুলে ধরেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, পুঁজিবাদ বা মার্কসিজমের মাধ্যমে ভারতবর্ষের উন্নয়ন হতে পারে না। ভারতীয় সমাজের উত্তরণে একাত্ম মানবতাবাদই একমাত্র পথ। তিনি আরও বলেন, ভারতে সম্প্রতি নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতির মূল ভিত্তিই হল পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের একাত্ম মানবতাবাদ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস বলেন, রাজ্যের প্রতিটি মানুষের কাছে দেশের মনিষীদের মতবাদ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর কাজ করছে। মনিষীদের জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুভাষ দেব, জিরানীয়া মহকুমার মহকুমা শাসক জীবনকৃষ্ণ আচার্য, বিশিষ্ট সমাজসেবী গৌরাঙ্গ ভৌমিক প্রমুখ।