স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৪ সেপ্টেম্বর।।
রোজগারের নিশ্চয়তা দেওয়ার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবাদের পথ থেকে বিপথগামী যুবকদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এই লক্ষ্যেই অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার।
আজ বিধানসভা অধিবেশনে বিধায়ক আশিস কুমার সাহার উত্থাপিত একটি বেসরকারি প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সময়ে লক্ষ্য করা গেছে সন্ত্রাসবাদের পথ বেছে নেওয়ার পেছনে থাকে আঞ্চলিক বিভিন্ন কারণ। অহিংসতার পথে বা কাউকে দাবিয়ে রেখে এর সমাধান সম্ভব নয়। এরজন্য প্রয়োজন উভয়পক্ষের আলোচনা।
আর্থিক স্বয়ম্ভরতার মধ্য দিয়ে এ থেকে পরিত্রাণের পথ বের করা সম্ভব। একটা সময়ে ত্রিপুরার সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য সমস্ত অংশের মানুষের বিশেষ করে জনজাতি অংশের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরফলে সন্ত্রাসবাদ কবলিত অঞ্চলগুলিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ জনকল্যাণে বিভিন্ন পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় তৈরি হয়েছিলো। তারজন্য দায়ী পূর্বতন সরকার।
সন্ত্রাসবাদ সমস্যার সমাধানে বিগত সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি ছিলো। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যারা একটা সময়ে ভুল পথে চালিত হয়েছিলেন তারা বর্তমানে আত্মসমর্পণ করে জীবনের মূলস্রোতে ফিরে আসছেন। রাজ্যে রোজগারের নতুন দিশা খুঁজে পাচ্ছেন। রোজগারের কথা বলে যাদেরকে ভুল পথে চালিত করা হয়েছিলো বা প্রশিক্ষণের নামে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
সেই জায়গা থেকে তারা পালিয়ে এসে মূলস্রোতে ফিরে আসছেন। খাদ্য এবং বস্ত্রের অভাব কাদের রয়েছে তথ্য সহ সরকারের সামনে তুলে ধরুন। এই প্রসঙ্গের উল্লেখ করে ত্রিপুরাকে বদনাম না করার আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতেও ত্রিপুরার মানুষ স্বনির্ভরতার পথে এগুচ্ছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে বিভিন্ন কর্মসূচি রাজ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
রাবার ক্ষেত্র সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৃহীত ইতিবাচক পদক্ষেপ সমস্ত অংশের পাশাপাশি জনজাতিদেরও রোজগারের পথ সুগম করছে। কিন্তু বিগত দিনে উন্নয়ন হয়েছে শুধুমাত্রই কাগজে কলমে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমগ্র দেশে সন্ত্রাসবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী মানসিকতার নিরসনে একাধিক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
২০২২ সালের মধ্যে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সমস্ত সীমান্তবর্তী এলাকায় বর্ডার ফেন্সিংয়ের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা গৃহীত হয়েছে। এই মর্মে বিভিন্ন সমস্যার দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য এবং বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে রাজ্যে অপহৃত তিনজনকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
তার পাশাপাশি উত্তর পূর্বাঞ্চলকে নেশামুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বর্তমান সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করার পরই এই লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছিলো। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সহ সমস্ত ক্ষেত্রে সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। যারা উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিকতার দৃষ্টিভঙ্গির ফলে রাজ্যের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রিয়াং ব্লু সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন কারণে রাজ্যে অবস্থানরত অন্যান্য উদ্বাস্তুদের বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইন্টিলিজেন্স রিপোর্ট অনুসারে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগের রিপোর্ট উঠে আসে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি ইউসুফ কমিশনের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর আর্থিক সহায়তা ও অন্যান্য মাধ্যমে সমগ্র দেশে সন্ত্রাসবাদকে নিয়ন্ত্রণে একাধিক পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। বিধায়ক আশিস কুমার সাহার আনীত এই বেসরকারি প্রস্তাবটি বিবেচনা করা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
আজ বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে বিধায়ক আশিস কুমার সাহা আনীত বেসরকারি প্রস্তাবটি ছিলো ‘দীর্ঘ চার দশক ধরে চলে আসা নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থীদের দ্বারা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে খুন, সন্ত্রাস ও অপহরণের মতো ঘৃণ্য ঘটনাগুলির পেছনে কোনও রাজনৈতিক দল, সংস্থা বা ব্যক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত ছিলো বা এখনও রয়েছে কিনা এই বিষয়টি জনসম্মুখে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে মহামান্য উচ্চ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে শীঘ্রই বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করার জন্য রাজ্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করুক’।
আলোচনার সূত্রপাত করে বিধায়ক আশিস কুমার সাহা বলেন, সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আমাদের জীবনের মূল্যবোধ, পারস্পরিক সহাবস্থানে আঘাত করছে। অতি সম্প্রতি ধলাই জেলার মানিকপুরে দুই বিএসএফ জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা অশনি সংকেত। রাজ্যে আবার অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী সমস্যা নির্মূল করা এবং এর পেছনে কোনও দলের মদত থাকলে তাদের নিরস্ত করা, শাস্তি প্রদান করা উচিত। এসবের জন্য একটি কমিশন গঠন করার জন্যই এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিধায়ক দিবাচন্দ্র রাষ্খল বলেন, ত্রিপুরায় সন্ত্রাসবাদী সমস্যা নিয়ে একে অন্যকে দোষারোপ করছে। কারা রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী সমস্যার সৃষ্টি করেছে তা সবার জানা উচিত। সরকারেরও এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। আলোচনায় অংশ নিয়ে বিধায়ক আশিস দাস বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্ন সন্ত্রাসমুক্ত ভারত।
রাজ্যে নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে সন্ত্রাসবাদীরা আবার মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি প্রস্তাব করেন রাজ্যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ দ্রুত শেষ করা হোক। আলোচনায় অংশ নেন বিধায়ক অরুণ চন্দ্র ভৌমিক এবং বিধায়ক শংকর রায়।