স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৬ সেপ্টেম্বর।।
রাজ্যে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বড় আকারের মাছের বাজার স্থাপনের উপর মৎস্য মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এজন্য মৎস্য দপ্তরকে একটি প্রকল্প নেওয়ার জন্যও তিনি নির্দেশ দেন। আজ সচিবালয়ের ২নং সভাকক্ষে মৎস্য দপ্তর কর্তৃক রাজ্যে রূপায়িত বিভিন্ন মৎস্য প্রকল্পগুলির পর্যালোচনা করে মৎস্যমন্ত্রী এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
মন্ত্রী বলেন, রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে মৎস্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। রাজাকে মাছচাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা আবশ্যক। বর্তমানে রাজ্যের অনেকেই বায়োফ্রক পদ্ধতিতে মাছ চাষে এগিয়ে আসছেন যা আগামীদিনে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি এই পদ্ধতি অবলম্বন করে স্ব-রোজগারী হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
মৎস্য মন্ত্রী বলেন, মৎস্য দপ্তরকে মডেল দপ্তর হিসেবে গড়ে তুলতে মৎস্য দপ্তরের কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় রেখে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। বিজ্ঞানসম্মত মাছ চাষে মৎস্য চাষীদের আরও বেশি করে উৎসাহিত করতে হবে। এইক্ষেত্রে দপ্তরের মৎস্য বিজ্ঞানীদের অভিজ্ঞতাকে আরও কাজে লাগানোর উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
সভায় মৎস্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনায় বীমা প্রকল্পের সুযোগ আরও বেশি করে মৎস্যচাষীদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। পর্যালোচনা সভায় মৎস্য দপ্তরের সচিব দীপা ডি নায়ার মাছের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, স্কিল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে মৎস্যচাষীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, অ্যাকুয়া রেন্চিং মাছের বাজারজাতকরণের উদ্যোগ সহ মৎস্যচাষীদের কল্যাণে রূপায়িত বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে আলোচনা করেন।
সভায় রাজ্যে মৎস্য দপ্তর দ্বারা রূপায়িত বিভিন্ন কর্মসূচিগুলির অগ্রগতি সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরে মৎস্য অধিকর্তা দিলীপ কুমার চাকমা জানান, প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনায় রাজ্যে রুই, কাতল ও মৃগেল মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য হ্যাচারি করার পাশাপাশি চিংড়ি পোনা উৎপাদনে হ্যাচারি তৈরি করা হচ্ছে।
এম জি এন রেগায় খননকৃত পুকুরে মৎস্য চাষের জন্য সুবিধাভোগীদের মধ্যে মাছের পোনা এবং মৎস্য সামগ্রী বিতরণের কাজ চলছে। পাশাপাশি সুসংহত মাছ চাষ কর্মসূচিতেও সুবিধাভোগীদের মধ্যে মাছের পোনা এবং অন্যান্য মাছের উপকরণ প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে। তাছাড়াও প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনায় ৩৪টি নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে। ডুম্বুর জলাশয়ে ২৯ লক্ষ মাছের পোনা ছাড়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনায় ছোট ও মাঝারি আকারে রঙ্গিন মাছের পোনা বড় করা, বায়োফ্রক পদ্ধতি মাছ চাষে ট্যাঙ্ক স্থাপন, মৎস্য চাষীদের পরিবহণের সুবিধার্থে সুবিধাভোগীদের মধ্যে যানবাহন প্রদান, মাছের খাদ্য উৎপাদনের জন্য ছোট আকারের মিল তৈরি, মাছের কিওসক নির্মাণ প্রভৃতি কর্মসূচি সমূহগুলি প্রক্রিয়াধীন।
তাছাড়া, ডুম্বুর জলাশয়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনায় এই বছর ২২৩৯ জন লাইসেন্সধারী সক্রিয় মৎস্য চাষীকে ৩ মাসের জন্য প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সভায় রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় 2022 ২২ অর্থবর্ষে রাজ্যে যে সমস্ত মাছ চাষ কর্মসূচি সমূহ নেওয়া হয়েছে সেই বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় ন্যাশনাল ফিসারিজ ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের স্পনসর্ড কর্মসূচি সমূহ সম্পর্কে আলোচনায় মৎস্য অধিকর্তা বলেন, অ্যাশপিরেশন্যাল ডিস্ট্রিক্ট ধলাইয়ে ২০ হেক্টর এলাকায় পর পর দুবার মাছের ফলনের জন্য মৎস্য চাষের সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
পাশাপাশি বোর্ডের স্পনসর্ড কর্মসূচিতে রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় ৫টি ফিশ ব্রিডিং ইউনিট স্থাপন করার কাজ চলছে। ন্যাশনাল ফিসারিজ ডেভেলপমেন্ট বোর্ড রাজ্যের ১১টি নদীতে মাছের পোনা ছাড়ার জন্য ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে বলেও তিনি জানান।
সভায় মৎস্য অধিকর্তা আরও বলেন, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ৪৭, ৫২২ জন সুবিধাভোগীকে মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় মাছের পোনা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলছে। তাছাড়া এই প্রকল্পে জনজাতি কল্যান দপ্তরের প্রদত্ত অর্থে 2021-22 অর্থবর্ষে রাজ্যের ৪২৪০ জন জনজাতি সুবিধাভোগীকে মাছের পোনা এবং মাছ চাষের উপর প্রশিক্ষন দেওয়া হবে।
স্পেশাল ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজের অন্তর্গত ৮৭ জন এনএলএফটি (এসডি) গোষ্ঠীর আত্মসমর্পনকারীকে মাছ চাষে স্ব-নির্ভরতার জন্য মৎস্য চাষের উপাদান দেওয়া হবে। তিনি জানান, নাবার্ড-এর আর আই ডি এফ-এর মাধ্যমে ৭টির মধ্যে ৩টি মাছ বাজার করা হয়েছে এবং বাকিগুলির কাজ চলছে। ৮টি খুচরো মাছ বাজার তৈরি করা হয়েছে।
২টি মৎস্য চাষ নলেজ সেন্টার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আরও ১৫টি মৎস্য চাষ নলেজ সেন্টার স্থাপনের কাজ চলছে। কেইজ কালচারের মাধ্যমে মাছ চাষের জন্য কেইজ কেনার দরপত্র আহবানের প্রক্রিয়া চলছে। আর আই ডি এফ-এর অধীনে মুখ্যমন্ত্রী নিবিড় মৎস্যচাষ প্রকল্প সম্পর্কে ও সভায় আলোচনা হয়।
সভায় প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার অধীন গ্রুপ অ্যাক্সিডেন্ট ইন্স্যুরেন্স স্কিম সম্পর্কেও আলোচনা হয়। মৎস্য চাষে সরাসরি এবং মৎসা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যুক্ত এই প্রকল্পের আওতায় মৎস্য চাষীদের মৃত্যু হলে বা স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে ৫ লক্ষ টাকা, স্থায়ীভাবে আংশিক অক্ষম হলে ২.৫ লক্ষ টাকা বীমার সুবিধা রয়েছে।
পাশাপাশি দুর্ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি হলে ২৫ হাজার টাকারও বীমার সুবিধা রয়েছে। পর্যালোচনা সভায় মৎস্য দপ্তরের অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনায় অংশ নেন।