গণ্ডারকে সুরক্ষিত রাখতে অসম সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। তাদের মতে এর ফলে চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য কমবে। এখনও পর্যন্ত কবে গণ্ডারের শিং ধবংস করা হবে– তার দিনক্ষণ কিছু ঠিক হয়নি। তবে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব গণ্ডার দিবসে’ এই কাজ করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত– অসমের প্রায় ১২টি সংগ্রহশালায় গণ্ডারের শিং সংরক্ষিত আছে। যা চোরাশিকারি ও মৃত গণ্ডারের থেকে উদ্ধারের পর রাখা হয়েছে। ১৯৭৯ থেকে এই সংরক্ষণের কাজ করে চলেছে অসম সরকার।
গুয়াহাটির বন ও পরিবেশমন্ত্রী পরিমল শুক্ল বৈদ্য জানিয়েছেন– অসম মন্ত্রিসভা বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে গত চার দশক ধরে রাজ্যের সরকারি কোষাগারে সংরক্ষিত দু’হাজার গণ্ডারের শিং ধ্বংস করা হবে।
এখনও পর্যন্ত সরকারি কোষাগারে ২৬২৩ গণ্ডারের শিং সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে ৫০টি শিং নিয়ে আদালতে মামলা ঝুলে আছে (ফলে এগুলি ধবংস করা যাবে না)। ৯৪টিকে বিভিন্ন সংগ্রহশালায় রাখা হয়েছে। ফলে মন্ত্রিসভার ক্যাবিনেট বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আপাতত ২৪৭৯ শিং ধ্বংস করা হবে।
পরিমল শুক্ল বৈদ্য আরও জানিয়েছেন– গত সপ্তাহেই বিশেষজ্ঞরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে শিংগুলিকে পরীক্ষা করে দেখেছেন। পরীক্ষিত শিংগুলির মধ্যে ৯৪টি শিংকে কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের কাছে একটি সংগ্রহশালায় রাখা হবে।
প্রসঙ্গত– গত মাসেই সরকারের তরফে সংরক্ষিত গণ্ডারের শিং নষ্ট করে ফেলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সব দিক বিবেচনা করে প্রায় ২৫০০ গণ্ডারের শিং ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব গণ্ডার দিবস উপলক্ষে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর এই কর্মসূচি সম্পন্ন হতে পারে।
গণ্ডারের শিং রফতানি চোরাশিকারিদের কাছে অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। এশিয়া ও আফ্রিকা গণ্ডার শিকারিদের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। ফলে গণ্ডার হত্যা করে লক্ষ লক্ষ মুনাফা লুটে নেয় শিকারিরা। গণ্ডার শিং-এর মধ্যে রয়েছে ক্যারোটিন। যা মানুষের নখ ও চুলে পাওয়া যায়। গণ্ডারের শিং-এর আনুমানিক মূল্য হাজার হাজার মার্কিন ডলার।
তবে গণ্ডারের শিং এখনও চিন ও ভিয়েতনামে ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত বলে এক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। তবে এর কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য– অসম বিশ্বের মধ্যে একশৃঙ্গ গণ্ডারের জন্য পরিচিত। ২০১৮ সালের আদমশুমারি অনুসারে– রাজ্যে প্রায় ২–৬৫০টি গণ্ডার রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ২৪০০ কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানে রয়েছে। বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন ১৯৭২ অনুযায়ী গণ্ডার বিপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। গণ্ডারের শিং বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।
ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউটিআই) যুগ্ম পরিচালক রথীন বর্মণ জানিয়েছেন– গণ্ডারের শিং থেকে ওষুধ তৈরি হয় বলে– একটি অন্ধবিশ্বাস সমাজে প্রচলিত আছে। আর এর ফলে চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।
ফলে শিংগুলো যদি আমরা সংরক্ষণ করি– তাহলে সমাজের কাছে বার্তা দেব– আমরা কুংস্কারে বিশ্বাস করি। আর চোরাশিকারিদের পাচারের কাজে আরও উৎসাহ দেওয়া হবে। তাই সংরক্ষিত শিংগুলিকে অবিলম্বে নষ্ট করে ফেলা উচিৎ।