।। তুহিন আইচ ৷৷ কমলপুরের ছোট সুরমা পঞ্চায়েতের বারদ্রোণ পাড়ার অমৃত দাস মূলত কৃষিজীবি পরিবারের ছেলে৷ আজন্ম কৃষিকাজ করে তিন ছেলে ও দুই মেয়ের সংসার প্রতিপালন করে গেছেন অমৃত-র বাবা হরিদাস বাবু। সংসার প্রতিপালন করতে পারলেও বাস্তবিক অর্থে স্বনির্ভর হয়ে উঠা হয় নি কখনো। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে বহু কানি জমি বছরের পর বছর থেকে গেছে অন্যবাদী।
সঠিক পরিকল্পনা এবং এর রূপায়ণের মাধ্যমে গত দুই বছরে এই অনাবাদী এবং এক ফসলী জমিতে মাছ চাষ করে স্বনির্ভর হওয়ার পথে আজ অনেকটাই এগিয়ে গেছেন অমৃত দাস অমৃত দাস জানান, পারিবারিকভাবে ধান চাষ, সব্জি উৎপাদন, গো পালন ছিল তাদের আয়ের প্রধান উৎস। কোনভাবেই এই আয় বৃহৎ সংসার প্রতিপালনের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
এই অবস্থায় কমলপুর মহকুমা মৎস্য তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় তাদের জীবনে স্বনির্ভরতার আলোর সন্ধান দেয়। মৎস্য আধিকারিকরা অমৃত দাসের জমি পরিদর্শনে আসেন ২০১৯ সালের শেষের দিকে। তারা দেখেন অনেকটা জমি অনাবাদী পড়ে আছে। আবার কিছু জমি একফসলী। তারা বুঝতে পারেন সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই বহু জমির মালিক হয়েও অমৃত দাসের আয় সীমিত।
জমি সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারছেন না এই পরিবারটি। তাই মৎস্য আধিকারিকগণ অমৃতবাবুকে বড় আকারে ফিসারি করার উপদেশ দেন। সরকারিভাবে সাহায্য করারও আশ্বাস দেন। ২০২০ সালের এপ্রিল মাস নাগাদ রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার মাধ্যমে অমৃত দাস এক কানি জমিতে ফিসারি করার জন্য এক লক্ষ সতেরো হাজার টাকা পান।
এই টাকায় প্রথমে এক কানি জমিতে পুকুর খনন করেন। মাছের খাদ্য কিনেন। এরপর ৯,০০০ টাকার পোনা কিনেন। গ্রাসকার্প, কার্ফু, সিলভার কার্প, মৃগেল ইত্যাদি মাছের পোনা জলে ছাড়েন। অমৃত দাস জানান, ১,০০০ সিলভার কার্পের পোনা তিনি প্রতিটি ১টাকা করে কিনেন।
১০০০ গ্রাসকার্পের পোনা কিনেন প্রতিটি ৩ টাকা দরে। এর থেকে সিলভার কার্পের ৩০০ পোনা একটু বড় হলে প্রতিটি ১৫ টাকা করে বিক্রি করেন। গ্রাস কার্পের ৩০০ পোনা বিক্রি করেন ৫০ টাকা দরে। এরফলে ইতিমধ্যে তিনি ১৫,০০০ টাকা পেয়ে গেছেন। অবশিষ্ট সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প পুকুরে বড় হচ্ছে।
তিনি বলেন, আয়ের সন্ধান এখান থেকেই পেয়ে গেছেন। বর্তমানে তার এই নতুন খনন করা পুকুরে কমপক্ষে ৩০০ কেজি মাছ আছে। বিক্রি করে অন্ততপক্ষে ৬০,০০০ টাকা পাবেন আশা করছেন তিনি। ফিসারি প্রকল্পে ইতিমধ্যে লাভের মুখ দেখতে পেয়ে অমৃত দাস দারুণভাবে উৎসাহিত।
তার অন্য একটি পুকুরেও তিনি মাছের পোনা ছেড়েছেন। ক্যানেল করে এক পুকুরের সঙ্গে অন্য পুকুরকে জুড়ে দিয়েছেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের বিষয়ে মৎস্য দপ্তরের সহায়তা পেয়েছেন। সব মিলিয়ে তার ফিসারিতে বর্তমানে প্রায় দুই লক্ষ টাকার বেশী মাছ আছে বলে জানান অমৃত দাস।
তিনি বলেন, মৎস্য দপ্তরের সাহায্যে তার জীবনে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এইভাবে সরকারি সাহায্য আগে পেলে হয়ত অনেক আগেই তিনি স্বনির্ভর হয়ে যেতেন। এক সময় কৃষিকাজ করে উপযুক্ত আয় না পেয়ে রাজমিস্ত্রির কাজও করেছেন অমৃত। কিন্তু নিজের জমিতেই যে সোনা লুকানো আছে এখন তিনি তা বুঝতে পারছেন।
ধান, সব্জি এখনও তিনি করেন। কিন্তু সবটাই পারিবারিক প্রয়োজন মেটাতে। আয়ের উৎস এখন করে নিয়েছেন মাছ চাষকেই। সব মিলিয়ে এখন তার ৬ কানি জমিতে ফিসারি। কাতল, কার্ফু, মৃগেল মাছে ভরপুর তার পুকুর। এখান থেকে আর পিছনে তাকানো নেই।
আজ অমৃত দাসের কোন জমি আর অনাবাদী নেই। এক ফসলী জমি আর বছরের বেশীরভাগ সময় খালি পড়ে থাকে না। মাছ চাষের সাফল্যে আগামী জীবন সম্পর্কে তিনি এখন আত্মবিশ্বাসী। অনাবাদী জমিতে সত্যিই যেন জীবনের জয়গান রচিত হয়েছে।