নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ সেপ্টেম্বর।। রাজনীতিতে সঠিক ব্যক্তি চয়নের দায়িত্ব প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের। নিজেদের মূল্যবান ভোটাধিকারের মাধ্যমে সঠিক ব্যক্তির দ্বারা সঠিক পথে সমাজ পরিচালনার দিশা নির্ধারণের দায়িত্ব প্রত্যেকের শিক্ষক দিবসকে সামনে রেখে আজ আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
এদিনের অনুষ্ঠানে আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের বিভিন্ন বর্ষের কৃতি ছাত্রছাত্রীদের সম্বর্ধিত করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ। তাছাড়াও কোভিড পরিস্থিতিতে সফলতার সঙ্গে পরিষেবা প্রদান ও স্বাস্থ্য পরিষেবার অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন বিভাগকেও এদিন সম্মানিত করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পারদর্শীতার সঙ্গে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করাই হচ্ছে প্রকৃত সফলতা। সাফল্যের অন্যতম শর্ত হচ্ছে কর্ম প্রচেষ্টা।
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও দূরদর্শীতার সঙ্গে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত বহু সমস্যার সমাধান ও দৃঢ়তার সাথে বিভিন্ন বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সবার সামনে নজির তৈরি করেছেন তিনি। এর থেকে সবার শেখার রয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য পরিষেবায় পরিকাঠামো ও পরিষেবার ক্ষেত্রে উন্নয়ন এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি নিজেও জিবিপি বা সরকারি হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ করি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব সঠিক ব্যক্তির হাতে রয়েছে কিনা সেই সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকের সজাগ দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। সরাসরিভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও নিজেদের মূল্যবান ভোটাধিকারের মাধ্যমে সমাজের সঠিক দিশা নির্ধারণে সঠিক ব্যক্তির চয়নে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
নাগরিকদের রাজনৈতিক সচেতন মানসিকতাই সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করে। আদর্শ নাগরিকরাই আদর্শ সমাজ ব্যবস্থাপনার পথকে সুগম করতে সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রাম থেকে শুরু করে রাজ্যের সর্বত্র চিকিৎসকদের পরামর্শ পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে রাজ্য সরকার এক নতুন ব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবছে।
যেখানে রাজ্যের বা বহিরাজ্যে অবস্থানরত আগ্রহী চিকিৎসকরা তাদের ব্যক্তি জীবন থেকে অন্তত আধ ঘন্টা সময় ব্যয় করে সমাজের কল্যাণে নিজেদের যুক্ত করতে পারবেন। এরফলে অনলাইনে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ও স্পেশালিস্ট চিকিৎসকদের পরামর্শ মিলবে। যার ফলে রাজ্যের সমস্ত অংশের নাগরিকরা উপকৃত হবেন।
মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন অধিক সংখ্যায় চিকিৎসক ও চিকিৎসক সংগঠন এই প্রয়াসের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে দক্ষতার সাথে কাজের মাধ্যমে মানুষকে পরিষেবা প্রদান থেকে শুরু করে ভ্যাকসিনেশনে সাফল্যের নজির তৈরি করেছে ত্রিপুরা। পাহাড়, জমি, নদী, নালায়, এমনকি গলা জলে নেমে ও নানান প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকাকরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের পরিষেবা ও পরিকাঠামোগত দিক দিয়ে উন্নয়ন এসেছে।
অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার ফলে একদিকে যেমন কমেছে বহিরাজ্যের রেফারের সংখ্যা, অন্যদিকে জটিল অস্ত্রপ্রচার সহ পরিষেবা প্রদানেও উন্নতি এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমস্যা থেকে সরে না গিয়ে তাকে মোকাবিলা করতে পারলেই সফলতা আসবে।
প্রতিকূল পরিস্থিতি আমাদের আরও অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হতে সহায়তা করে। সাফল্যের প্রধান এবং অন্যতম শর্ত হচ্ছে কর্ম প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম৷ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের দক্ষতার সাথে শুধুমাত্র কোভিডই মোকাবিলা করেননি বরং যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিলেন তাদেরকেও নিজেদের কাজের মাধ্যমে মোক্ষম জবাব দিয়েছেন৷
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব। মাত্র ৩৯ দিনে টিপিএসসি’র মাধ্যমে ১৫৬ জন চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছে। স্বচ্ছতার মাধ্যমে অন্যান্য দপ্তরেও নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মহিলা স্বশক্তিকরণ থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে সমাজের সকল অংশের নাগরিকদের কল্যাণে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। জাত পাতের রাজনীতি থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছে দেশ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা বলেন, মৃৎ শিল্পীরা যেমন মাটিকে এক একজন দেব দেবীতে রূপ দেন, ঠিক তেমনি শিক্ষকরাও মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের দেবতা রূপী চিকিৎসক তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ করেন। সফলতার পেছনে না দৌড়ে নিজেকে যোগ্য তৈরি করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, প্রকৃত যোগ্যতা অর্জন করলে সফলতা আপনা আপনিই আসবে। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
চিকিৎসা পরিষেবার পাশাপাশি এই বিষয়টিতেও মনোনিবেশ করার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান কত বছর পুরনো সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেই প্রতিষ্ঠানটি কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ আগামীদিনে জাতীয় ক্ষেত্রে আরও উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক অরুণ চন্দ্র ভৌমিক, অধিকর্তা মেডিক্যাল এডুকেশন ডা. চিন্ময় বিশ্বাস, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডা. শুভাশিস দেববর্মা, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক দপ্তরের অধিকর্তা ডা. রাধা দেববর্মা, জিবিপি ও এজিএমসি’র অধ্যক্ষ ডা. কমলকৃষ্ণ কুন্ডু, এজিএমসি ও জিবিপি’র এমএস সঞ্জীব কুমার দেববর্মা প্রমুখ।