অনলাইন ডেস্ক, ১ সেপ্টেম্বর।। গত ১৫ আগস্ট তালেবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সর্বশেষ ফোনালাপ হয় গত ২৩ জুলাই। এসময় তারা প্রায় ১৪ মিনিট কথা বলেছিলেন। ওই ফোনালাপে তারা উভয়ে সামরিক সাহায্য, রাজনৈতিক কৌশল এবং বার্তা পাঠানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
কিন্তু বাইডেন বা আশরাফ গনি কেউই আসন্ন বিপদের বিষয়ে ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। তালেবানদের অগ্রগতি সম্পর্কে তারা একদমই সচেতন বা প্রস্তুত ছিলেন না। ওই ফোনালাপের মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই তালেবানরা রাজধানী কাবুল সহ প্রায় পুরো আফগানিস্তান দখল করে নেয়। আশরাফ গনি ১৫ আগস্টেই কাবুলের রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে পালিয়ে যান এবং তালেবানরা কাবুলে প্রবেশ করে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ওই ফোনালাপের একটি প্রতিলিপি পর্যালোচনা করে দেখেছে এবং কথোপকথনটির সত্যতা যাচাই করার জন্য অডিওটিও শুনেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফোনালাপের রেকর্ডটি রয়টার্সকে এমন একটি উৎস থেকে সরবরাহ করা হয়েছে যারা তা বিতরণের জন্য অনুমোদন প্রাপ্ত নয়।
ওই ফোনালাপে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগান প্রেসিডেন্টকে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বাইডেন বলেছিলেন, আফগানিস্তানের জটিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যদি আশরাফ গনি কোনো কার্যকর পরিকল্পনা দেখাতে পারেন তাহলে গনি সরকারকে সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন বলেন, পরিকল্পনাটি যদি আমাদেরকে জানানো হয় তাহলে আমরা ঘনিষ্ঠ বিমান সহায়তা অব্যাহত রাখব। এই ফোনালাপের কয়েক দিন আগে, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি বিমান হামলা চালায়। তালেবানরা অভিযোগ করেছিল যে, এই হামলার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দোহা শান্তি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনিকে শক্তিশালী আফগান রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোকে তার সেনাবাহিনীতে নিয়ে আসার পরামর্শও দিয়েছিলেন। এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল বিসমিল্লাহ খান মোহাম্মদীর মতো একজন যোদ্ধার নেতৃত্বে তাদেরকে পরিচালনা করতে বলেছিলেন।
এসময় মার্কিন সরকারের প্রশিক্ষণ এবং অর্থায়নে পরিচালিত আফগান সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসাও করেন বাইডেন। বাইডেন গনিকে বলেন, “আপনার কাছে স্পষ্টতই সেরা সামরিক বাহিনী রয়েছে। আপনার কাছে ৩ লাখ সৈন্যের এক সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী রয়েছে। আর তালেবানদের রয়েছে মাত্র ৭০-৮০ হাজার সৈন্য। এবং আপনার সেনারা স্পষ্টতই ভালোভাবে যুদ্ধ করতে সক্ষম”। অথচ এর কয়েক দিন পরেই আফগান সামরিক বাহিনী তালেবানদের কাছে প্রায় বিনা যুদ্ধেই আত্মসমর্পণ শুরু করে।
এমনকি তালেবানদের অগ্রগতি শুরু হওয়ার পর ১১ আগস্ট মার্কিন গোয়েন্দারা ইঙ্গিত দেয় যে, তালেবান যোদ্ধারা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আফগানিস্তানের রাজধানী অবরোধ করতে পারে এবং সম্ভবত ৯০ দিনের মধ্যে কাবুল দখল করতে পারবে। অথচ এর মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই ১৫ আগস্ট কাবুলের পতন ঘটে।