স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৯ আগস্ট।।
দেশের মধ্যে একটি মডেল রাজ্য হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছে ত্রিপুরা। দেশের বা রাজ্যের উন্নয়নের অন্যতম শর্ত মহিলা স্বরোজগার ও ক্ষমতায়ণ। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত ত্রিপুরা গ্রামীন জীবিকা মিশনের স্বসহায়ক দলের সদস্যাদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন কেন্দ্রীয় গ্রামীণ বিকাশ ও পঞ্চায়েতরাজ মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। তিনি বলেন, মহিলাদের রোজগার তৈরির মাধ্যমেই সার্বিক বিকাশ সম্ভব। তাই স্বসহায়ক দল গঠন সহ বিভিন্নভাবে মহিলাদের রোজগার তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এরফলে সমগ্র দেশে যেমন বেড়েছে স্বসহায়ক দলের সংখ্যা তেমনি ত্রিপুরাতেও স্বসহায়ক দলের মাধ্যমে মহিলাদের রোজগার তৈরির লক্ষ্যে কাজ চলছে। এই কর্মযজ্ঞ প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর ভারত নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মহিলাদের রোজগার তৈরির মাধ্যমে আত্মনির্ভর ভারত নির্মাণ করা সম্ভব।
কেন্দ্রীয় গ্রামীণ বিকাশ ও পঞ্চায়েতরাজ মন্ত্রী গিরিরাজ সিং আশা প্রকাশ করেন স্বসহায়ক দলের মাধ্যমে অধিক সংখ্যায় মহিলাদের যুক্ত করে তাদের রোজগার তৈরির লক্ষ্যে যেভাবে রাজ্য সরকার কাজ করছে তাতে অচিরেই বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার প্রায় প্রতি পরিবারকে এই স্বসহায়ক দলের সাথে যুক্ত করা সম্ভব হবে। শুধু তাই নয় মোট জিডিপি’র অর্ধেক ভাগিদার যেন মহিলারা হতে পারে সেই প্রত্যাশাও তিনি ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সার্বিক বিকাশের মাধ্যমে উন্নয়নের একটি গেইটওয়ে হিসেবে তুলে ধরতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর সুফল হিসেবে উন্নয়নের নিরিখে উত্তর পূর্বাঞ্চল এগিয়ে চলেছে। তিনি আরও বলেন, এমন গ্রামপঞ্চায়েত নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে যেখানে সুশিক্ষা, পোষন, রোজগারের সুনিশ্চয়তা, মহিলা ক্ষমতায়ণ, আবাস, সুলভ শৌচাগার, মহিলাদের জন্য রান্নার গ্যাস সংযোগ, বিদ্যুতায়ণ ও উন্নত সড়ক ব্যবস্থা সহ অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা থাকবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, আত্ম নির্ভরতার মূল শর্ত হল স্বনির্ভর মানসিকতা। রাজ্যের অর্থনীতির বিকাশে অর্ধেক ভাগীদার হিসাবে মহিলাদের তুলে ধরতে একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
মহিলা স্বশক্তিকরণের লক্ষ্যে স্বসহায়ক দল গঠন করে রাজ্যের বড় মাত্রায় মহিলাদের রোজগার তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। বর্তমান সরকারের সময়ে একদিকে যেমন স্বসহায়ক দলের সংখ্যা বেড়েছে তেমনি বেড়েছে এই ক্ষেত্রে লগ্নির পরিমাণও। আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তার মাধ্যমে স্বসহায়ক দল গঠন সহ বিভিন্নভাবে মহিলা স্বয়ম্ভরতার পথকে সুগম করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে একযোগে বিভিন্ন স্বসহায়ক দলের মধ্যে ৩৫ কোটি টাকা ঋণের অনুমোদনপত্র তুলে দেওয়া এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। সহজ শর্তে ঋণের মাধ্যমে নিজেদের সম্ভাবনাময় দিককে কাজে লাগিয়ে স্বসহায়ক দলের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন সহ নানাভাবে রোজগারের পথ খুঁজে পেয়েছেন রাজ্যের মহিলারা। বর্তমানে রাজ্যে স্বনির্ভরতার মানসিকতা তৈরি হয়েছে। এরফলে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মাতৃত্বকালীন অবস্থায় সন্তান প্রসব থেকে শুরু করে অন্তিম যাত্রা পর্যন্ত নানা প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে। সমস্ত ক্ষেত্রেই উন্নয়নের নিরিখে সফলতা এসেছে রাজ্যে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন রাজ্যের নাগরিকগণ। স্বচ্ছতার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে অনলাইন পরিষেবা।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আগ্রহী ঘর প্রাপকরা পরবর্তী সময়ে ঘরের পরিসর বাড়ানোর লক্ষ্যে সহজ শর্তে ৯ শতাংশ সুদের হারে ঋণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মহিলাদের বড় মাত্রায় রোজগার তৈরির মাধ্যমে রাজ্যের অর্থনৈতির অর্ধেক ভিত যেন মহিলারা তৈরি করতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, স্বসহায়ক দল একটি আন্দোলনের নাম।
যে আন্দোলন মহিলাদের স্বরোজগারী করার মাধ্যমে আত্মনির্ভরতার পথকে সুগম করছে। স্বসহায়ক দলের উৎপাদিত পণ্য নায্যমূল্যের দোকানের মাধ্যমে বিক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সরকার এবং সমাজ একসাথে চললেই রাজ্যের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।
গ্রাম স্বরাজের ভাবনায় সুশাসন, স্বনির্ভরতা, জনকল্যাণমূলক নানান সুফল প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছে সরকার। বড় মাত্রায় স্বসহায়ক দল গঠনের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তার সুযোগ তৈরি করে মহিলা আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
রাজ্যে স্বসহায়ক দলের ঋণ খেলাপির সংখ্যা খুবই কম। এর থেকেই প্রমাণিত হয় রাজ্যের স্ব-সহায়ক দলগুলি লাভজনক অবস্থায় বা ভালভাবে চলছে। স্বসহায়ক দলগুলি স্বাবলম্বী হলেই আত্মনির্ভর ত্রিপুরা নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়ণের লক্ষ্যে গতি আসবে। রাজ্যের অগ্রগতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাদের।
স্বসহায়ক দলের পণ্য উৎপাদনে সহায়তা সহ বাজারজাতকরণ পর্যন্ত বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যেও কাজ করছে সরকার। তিনি আরও বলেন, সরকার শুধুমাত্র সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। সেই সুযোগকে যথোপযুক্ত কাজে লাগিয়ে কিভাবে এর মাধ্যমে রোজগার তৈরি করা যায় এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান রাখেন উপমুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের অনুষ্ঠানে স্বসহায়ক দলগুলির প্রোডাক্ট বুকলেটের আবরণ উন্মোচন করেন কেন্দ্রীয় গ্রামীণ বিকাশ ও পঞ্চায়েতরাজ মন্ত্রী গিরিরাজ সিং, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা সহ অন্যান্য অতিথিগণ। এরপর বিভিন্ন স্বসহায়ক দলের হাতে ব্যাঙ্কের ঋণের মঞ্জুরীপত্র ও চেক তুলে দেওয়া হয়।
এদিনের অনুষ্ঠানে স্বসহায়ক দল সহ বিভিন্ন ভাবে রোজগারের পথ খুঁজে পেয়েছেন এমন বেশ কয়েকজন স্বরোজগারী মহিলা তাদের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিরা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গণে স্বসহায়ক দলের চিত্র প্রদর্শনী ও স্টল পরিদর্শন করেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা সরকার দেব, গ্রাম উন্নয়ন দপ্তরের সচিব সোম্যা গুপ্তা, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব সি কে জমাতিয়া, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব দীপা ডি নায়ার, টিআরএলএম’র সিইও টি কে দেবনাথ প্রমুখ।