অনলাইন ডেস্ক, ২৭ আগস্ট।। তালেবানরা আফগানিস্তানে একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ গঠনের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। তবে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে তা এখনো চুড়ান্ত করা হয়নি।আফগানিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের এই বিবরণ এমন এক সময়ে আসল যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে মারাত্মক হামলার শিকার হয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবানরা বলেছে যে, চলতি মাসের শুরুতে আফগানিস্তান থেকে পশ্চিমা সমর্থিত প্রশাসনকে উৎখাত করার পর তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে।দোহা এবং কাবুলের তালিবান সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে দেশের সকল জাতি এবং উপজাতির নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এবং প্রায় এক ডজন নাম নতুন সরকারের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।আফগানিস্তানের রাজনীতি এবং দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দেশটির জাতিগত বৈচিত্র্য। ৪ কোটি মানুষের দেশ আফগানিস্তানে একক কোনো জাতিগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়।
পশতুনরা আফগানিস্তানের বৃহত্তম একক জাতিগোষ্ঠী, যারা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশেরও বেশি। প্রধানত সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায় পশতুনরা সেই ১৮ শতক থেকেই আফগান রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে।তালেবান সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাতের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একজন “আমীর-উল-মুমিনীন” (বিশ্বাসীদের কমান্ডার) থাকবেন। এবং ভবিষ্যতের সরকার গঠন ও মন্ত্রীদের মনোনীত করার জন্য একটি সর্বোচ্চ নেতৃত্ব পরিষদও আহ্বান করা হয়েছে।
মনোনয়নের জন্য প্রধান মন্ত্রণালয়গুলির মধ্যে রয়েছে বিচার বিভাগ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য এবং কাবুলের জন্য একটি বিশেষ বিভাগ।তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বারাদার রাজধানী কাবুলেই আছেন। আর তালেবানের মূল প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব সরকার গঠনের প্রাথমিক পরামর্শের জন্য কান্দাহার থেকে কাবুলে এসেছেন।
সূত্রটি আরও বলেছে যে, তাজিক এবং উজবেক উপজাতীয় নেতাদের পুত্রদের সহ নতুন কিছু মুখও সরকারে আনতে চায় তালেবানরা।ওদিকে, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই এবং আফগানিস্তানের হাই কাউন্সিল অব ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশনের সাবেক প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ সহ পুরনো সরকারের কিছু সদস্যকেও এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রাখার জন্য চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
তালেবানের আরেকটি সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ২০২০ সালের দোহা চুক্তিও তালেবানরা মেনে চলবে। ওই চুক্তিতে তালেবানরা আফগানিস্তানের মাটি সন্ত্রাসী হামলার জন্য ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে।সূত্রটি বলেছে যে “বিমানবন্দরে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার মানুষকে দিয়েই তালেবানদের মূল্যায়ন করা অন্যায়” এবং “লক্ষ লক্ষ আফগান কাবুলে নিরাপত্তা উপভোগ করছে”।
নারী অধিকারের বিষয়ে সূত্রটি বলেছে যে, প্রধানত স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাত সহ নারীদেরকে বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে, যেমনটি তারা আগের সরকারেও করেছিল।তালেবান সূত্র আল জাজিরাকে আরও জানায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচার করে নজির স্থাপনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে বিশেষ আদালত গঠন করা হবে।তালেবান সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে কাবুল শহরে ব্যারিকেড এবং “অপ্রয়োজনীয়” রাস্তা অবরোধ সরিয়ে ফেলা হচ্ছে এবং চেকপোস্টগুলোতে তাদের বাহিনীর সদস্যদেরকে “ভদ্র ও বিনয়ী” আচরণ করতে বলা হয়েছে।