স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৬ আগস্ট।। রাজ্যের জনজাতি অংশের মানুষের রোজগারের সুযোগ সৃষ্টি করতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। বনভিত্তিক সম্পদকে ব্যবহার করে জনজাতি অংশের মানুষের রোজগারের নিশ্চয়তা তৈরির লক্ষ্যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আজ হেজামারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দিবারাত্রি স্বাস্থ্য পরিষেবার সূচনা করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন রাজ্যের বনভূমি থেকে প্রাপ্ত ফুলঝাড়ুর পাশাপাশি রাজ্যের অন্যান্য বনজ সম্পদ সহায়কমূল্যে বিক্রয়ের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরফলে রাজ্যের জনজাতি অংশের মানুষদের বড়মাত্রায় রোজগারের সুযোগ খুলে যাবে।
পাশাপাশি জনজাতিদের আর্থসামাজিক মানোন্নয়ন এবং কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশেও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয়জল, বিদ্যুৎ, খাদ্য, রোজগার অত্যাবশ্যকীয় এই বিষয়গুলিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে।
তিনি বলেন, রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে পরিকাঠামো ও পরিষেবা উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। রাজ্যের সমস্ত অংশের নাগরিকদের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতি বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয়জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর দেববর্মণ যে আধুনিক ত্রিপুরার স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
রাজ্যে জনজাতিদের সম্মানার্থে উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের নাম পরিবর্তন করে জনজাতি কল্যাণ দপ্তর করা হয়েছে। বহির্রাজ্য থেকে সড়কপথে রাজ্যে প্রবেশের সময় বহির্রাজ্যের নাগরিকরা যেন ত্রিপুরার ইতিহাস ও জনজাতিদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে সেই লক্ষ্যে বড়মুড়া পাহাড়ের নাম হাতাইকতর করা হয়েছে।
সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তা প্রকৃত সুবিধাভোগীদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর সুফল হিসেবে দিল্লি থেকে পাঠানো বিভিন্ন প্রকল্পের ১০০ শতাংশ অর্থরাশি ও রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন প্রকৃত সুবিধাভোগীরা। এরজন্য কোনও জনপ্রতিনিধির পেছন ছুটতে হচ্ছে না।
বরং সরকারের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির ফলে জনপ্রতিনিধি এবং আধিকারিকরা বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তা অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে কাজ করছেন। গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশের পাশাপাশি স্টার্টআপ সহ অন্যান্য পন্থায় রোজগার তৈরি হচ্ছে রাজ্যে। নির্মীয়মান জাতীয় সড়ক রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্ন গতিকে আরও ত্বরান্বিত করছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের জমিতে কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি পাট্টা প্রাপকরাও যেন কৃষিক্ষেত্রের বিভিন্ন সহায়তার সুফল পেতে পারেন সেই লক্ষ্যেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য ভূমিদান করেছেন সম্পতি দেববর্মা। এদিন অনুষ্ঠান মঞ্চে তাকে সংবর্ধিত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়াও বিভিন্ন সুবিধাভোগীর হাতে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের ই-কার্ড ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সহায়তা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী এদিন হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন। হেজামারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারে ২৪ ঘন্টা স্বাস্থ্য পরিষেবার সূচনার মাধ্যমে ১২টি অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা পাওয়া যাবে।
এরমধ্যে রয়েছে গর্ভাবস্থা ও শিশুর জন্ম, নবজাতক এবং শিশুর স্বাস্থ্য, শৈশব এবং কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রজনন সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সংক্রমিত রোগের ব্যবস্থাপনা, অসংক্রমিত রোগের ব্যবস্থাপনা, চোখের যত্ন, নাক, কান, গলার যত্ন, মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যত্ন, দন্ত চিকিৎসা, বার্ধক্যজনিত স্বাস্থ্য পরিষেবা ও আপৎকালীন চিকিৎসা পরিষেবা।
হেজামারা ব্লকের অন্তর্গত ১০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে ৬টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৬টি এডিসি ভিলেজের নাগরিকরা ২৪ ঘন্টা স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ পাবেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা, এমডিসি রবীন্দ্র দেববর্মা, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা দেবপ্রিয় বর্ধন, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক দপ্তরের অধিকর্তা রাধা দেববর্মা প্রমুখ।