স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৭ আগস্ট।। ২০২২ সালের আগেই কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের বিক্রয়ের নিশ্চয়তা তৈরির ফলে বেড়েছে রোজগার।
আজ নাগিছড়াস্থিত উদ্যান ও বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রে আয়োজিত প্রগতিশীল চাষীদের উদ্যান ও কলা চাষ বিষয়ক কর্মসূচির সূচনা করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে কৃষির বিকাশে ও কৃষকদের কল্যাণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
গবেষণাভিত্তিক আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বনে উদ্যান ও বাগিচা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক ক্ষেত্রের উন্নয়নই কোনও রাজ্যের সার্বিক বিকাশের অন্যতম শর্ত। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা কৃষি প্রধান রাজ্য। তাই কৃষকদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিই শুধু নয় তাদের আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়ন সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র।
বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে মাটির গুণাগুণ ও সঠিক ফসল নির্বাচন করার সুযোগ তৈরি হলেও কৃষকরা তাদের সঞ্চিত অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকেই জমি বাছাই বা মৃত্তিকার গুণাগুণ নির্ধারণে অনেকাংশেই সক্ষম। কৃষকরাই আমাদের অহংকার। আমাদের জীবনে তারাই ঈশ্বরতুল্য, অন্নদাতা ও আত্মনির্ভর ত্রিপুরার কারিগর। এখন রাজ্যে কৃষকগণ যোগ্য সম্মানও পাচ্ছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে কৃষিক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। বর্তমান সরকারের সময়ে সাড়ে তিন বছরে ফল চাষের উপযোগী এলাকা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮৬ শতাংশ, সব্জি চাষের পরিমাণ বেড়েছে ৫৩ শতাংশ, উন্মুক্ত জায়গায় ফুল চাষের এলাকা বেড়েছে ৮৭ শতাংশ। বর্তমানে ১৮৪০ হেক্টর বাগান এলাকা পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। সংরক্ষিত এলাকায় ফুল চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ২২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
https://www.facebook.com/bjpbiplab/videos/265521255107834/
বর্তমানে নতুন তিনটি সৌরশক্তি ভিত্তিক শীতল কক্ষ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন বাজার তৈরির সুযোগ সহ মাশরুমের উৎপাদন ১২ শতাংশ বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের মানোন্নয়নে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তায় একদিকে যেমন রোজগার বেড়েছে তেমনি লোকসানের আশংকা কাটিয়ে মিলেছে বিক্রির নিশ্চয়তা।
রাজ্যে স্বরোজগারের মানসিকতা সৃষ্টির ফলে রাজ্যের শিক্ষিত যুবকরাও আজ নিজেদেরকে কৃষি পেশার সাথে যুক্ত করছেন। কুমারঘাটের এক সফল যুব চাষীর সাফল্য স্থান করে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। রাজ্যে যুবকদের আন্দোলনে ব্যস্ত রাখার বদলে উৎপাদনমুখী কাজে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এরফলে ত্রিপুরা আত্মনির্ভর হয়ে উঠছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রকৃত বর্গাচাষীদেরও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যেই রাজ্যের ভালো সংখ্যায় বর্গাচাষীরা বিভিন্ন সহায়তা পাচ্ছেন।
রাজ্যের বাঁশকরুলের তৈরি বিস্কুট খেয়ে উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বাঁশকরুল থেকে আচার তৈরিরও পরামর্শ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন নাগিছড়াস্থিত উদ্যান ও বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্র প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করেন ও বিভিন্ন বিভাগ এবং ফলের বাগিচা পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বলেন, রাজ্যে বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে গ্রোথ রেট বেড়েছে। আধুনিক চাষ পদ্ধতির অবলম্বনে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকদের রোজগার বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। কৃষকরা লাভবান হলেই রাজ্য লাভবান হবে। তিনি আরও বলেন, উদ্যান ও বাগিচা ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের আর্থিক উন্নয়নে কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে তাতে গতি সঞ্চার করতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সুচিন্তিত পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছেন রাজ্যের কৃষকগণ।
জমি বন্ধক দেওয়া বা মহাজনী ব্যবস্থা থেকে অন্নদাতাদের মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি বিশেষ সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ করছে। প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার পাশাপাশি কৃষকদের লোকসানের আশংকা লাঘব করতে মুখ্যমন্ত্রী বীমা যোজনাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।
এর অধিকাংশ অর্থ বহন করছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের ১০০ শতাংশ কৃষকদের এই বীমার আওতায় আনতে দপ্তর বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। রাজ্যে উদ্ভাবনী চাষের মাধ্যমে রোজগারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এদিনের কর্মসূচিতে আট জেলা থেকে প্রগতিশীল চাষীরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট আই সি এ আর- এন আর সি বি, ড. ভি কুমার (ত্রিচি, তামিলনাড়ু), কৃষি দপ্তরের সচিব সি কে জমাতিয়া, উদ্যান পালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের অধিকর্তা ড. পি বি জমাতিয়া প্রমুখ।