।। রাজীব চক্রবর্তী ।। ত্রিপুরার সুদক্ষ হস্ত কারুশিল্পীদের নিপুণ কারুকার্যে তৈরি রকমারি শিল্প সামগ্রী রাজ্যের গন্ডি ছাড়িয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এখন সমাদৃত। প্রকৃতির আশীর্বাদ ধন্য রাজ্যের বাঁশবেত সহ প্রচুর কাঁচামাল হস্ত ও কারু শিল্পের বিকাশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। রাজ্যের কারুশিল্পের বিকাশে নবতম সংযোজন বাঁশের তৈরি বোতল।
ত্রিপুরায় তৈরি বাঁশবেতের সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও বাঁশের বোতল রোজগারের ক্ষেত্রে এনেছে এক অন্য মাত্রা। পশ্চিম প্রতাপগড় এলাকার কারুশিল্পী অনাথবন্ধু সূত্রধর জানান, সরকার কারুশিল্পের বিকাশে অগ্রাধিকার দেওয়ায় আমাদের মতো কারুশিল্পীরা রোজগার বাড়াবার এক নতুন পথ পেয়েছে। শুধু আমাদের রাজ্যেই নয় বাঁশের তৈরি বোতলের চাহিদা এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারেও বেড়েছে।
এই সম্ভাবনা দেখে আমিও এখন বাঁশের বোতল তৈরি করছি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রাজ্যের উৎপাদিত বাঁশ বেতের শিল্প সামগ্রীর বাজারজাতকরণে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগের ফলেই রাজ্যে উৎপাদিত বাঁশের বোতল সহ বাঁশবেতের তৈরি শিল্প সামগ্রী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হচ্ছে।
এতে রাজ্যের কারুশিল্পীরা উৎসাহিত হচ্ছেন। বিশেষ করে বাঁশের বোতলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রাজ্যের কারুশিল্পী সহ স্বউদ্যোগীদের আত্মনির্ভরতার এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে। বাঁশবেত শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কোনও উদ্যোগ না থাকায় রাজ্যের কারুশিল্পীরা হতাশায় ভুগছিলেন।
অনেকেই নিজেদের পেশা থেকেও সরে আসছিলেন। রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার পর এ ধরনের শিল্পের বিকাশে আন্তরিক প্রয়াস নেয়। রাজ্যের কারুশিল্পীদের উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাতকরণেও উদ্যোগ নেয়। সরকারের এই উদ্যোগে রাজ্যে কারুশিল্পের বিকাশে যে সম্ভাবনা ছিলো তা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
কারুশিল্পী অনাথবন্ধু সূত্রধর জানালেন, বাঁশের বোতল পাইকারি বিক্রি করেই প্রায় ২০ শতাংশ লাভ হচ্ছে। খোলা বাজারে বিক্রি করলে লাভ আরও বেশি হচ্ছে। তিনি জানান, এখন মাসে প্রায় ১০০টি বোতল তিনি তৈরি করছেন। বাঁশের বোতল তৈরি করে তিনি শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি, তৈরি হয়েছে অন্যদের রোজগারের সুযোগও।
কাজের সুযোগ বাড়ার ফলে বর্তমানে তার এখানেই কাজের সুযোগ হয়েছে আরও প্রায় দশ বারো জনের। তিনি জানান, বাজারের চাহিদা অনুসারে এখন বাঁশের তৈরি বোতলগুলিকে আরও উন্নত ও আকর্ষণীয় করে তৈরি করা হচ্ছে। এ ধরনের বাঁশের বোতলের চাহিদাও ক্রমশ বাড়ছে। এতে আমাদের রোজগারও বাড়ছে।
আড়ালিয়া মধ্যপাড়ার গৌরী শর্মা ও এলাকারই দশ বারো জন মহিলা মিলে বাঁশবেতের নানা সামগ্রী তৈরি করে আত্মনির্ভরতার নতুন পথ পেয়েছেন। বর্তমানে হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্প নিগম থেকে মিলেছে উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের নিশ্চয়তা। আর তাতে উৎসাহিত হয়েই মহিলারা মিলে বেত দিয়ে তৈরি জানালার পর্দা, রুম পার্টিশন, প্যানেল সহ নানা রকমারি সামগ্রী তৈরি করছেন।
কারু শিল্পী গৌরী শর্মা জানান, আগের তুলনায় বর্তমানে রোজগার অনেক বেশি। ক্লাস্টারের মাধ্যমে বা সরাসরি হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্প উন্নয়ন নিগমে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করছেন। নিগম থেকে উৎপাদিত পণ্য নগদে বিক্রয়ের নিশ্চয়তা মেলায় অনেকে এখন এই কাজে আগ্রহী হচ্ছেন।
পাইকারি বিক্রির পাশাপাশি গুয়াহাটি, দিল্লি, ব্যাঙ্গালুরু, কেরালায়ও এই সমস্ত পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে। প্রতাপগড় এলাকার আরও এক কারুশিল্পী নারায়ণ সূত্রধর জানান, হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্প উন্নয়ন নিগম সময় মতো বাঁশবেতের তৈরি তার পানসি বোট, জাহাজ ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী বাড়ি থেকেই কিনে নিচ্ছে।
চাহিদা বেশি থাকায় একদিকে যেমন কাজ বেশি তেমনি রোজগার হচ্ছে ভালো। বাঁশের গুঁড়ি খোদাই করে নানা দেবদেবীর মূর্তি সহ রকমারি সামগ্রী তৈরি করে রেন্টার্স কলোনীর অভিজিৎ সূত্রধর এখন আত্মনির্ভর।
ক্লাস্টারের মাধ্যমে বা সরাসরি তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের নিশ্চয়তা মেলায় তিনি এই কাজে আরও উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান বলাই গোস্বামী জানান, রাজ্যের কারুশিল্পীদের উৎসাহিত করতে নিগম ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সরাসরি নগদ অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি জানান, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কারুশিল্পের বিকাশে রাজ্যের উৎপাদিত সামগ্রীর প্রচার এবং প্রসারের উদ্যোগ নেওয়ায় কারুশিল্পীরা যেমন উৎসাহিত হয়েছেন তেমনি স্বনির্ভর হওয়ারও পথ পেয়েছেন।
এতে বাঁশের তৈরি বোতলের পাশাপাশি বাঁশবেতের তৈরি সামগ্রীর কদর দিন দিন আরও বাড়ছে। এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে রাজ্যের অনেকেই এখন রোজগারের নয়া দিশা খুঁজে পাচ্ছেন। বিশেষ করে বাঁশের তৈরি বোতল আত্মনির্ভরতার নয়া দিশা দেখাচ্ছে।