অনলাইন ডেস্ক, ৬ আগস্ট।। উত্তর ইথিওপিয়ার টাইগ্রে অঞ্চলের বিদ্রোহীরা ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য সাইট লালিবেলা শহর দখল করে নিয়েছে। এটি পার্শ্ববর্তী আমহারা অঞ্চলে অবস্থিত।
এখানে রয়েছে ৭০০-৮০০ বছর আগে পাথর কেটে তৈরি করা বিখ্যাত গির্জা, যা লাখ লাখ খ্রিস্টানের পবিত্র তীর্থ। স্থানীয় এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়ার খবর পেয়ে শহরের বাসিন্দারা পালাতে শুরু করে।
গত নভেম্বরে টাইগ্রেতে শুরু হওয়া যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। এখন পার্শ্ববর্তী আমহারা ও আফার অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এ লড়াইয়ে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। বিশেষ করে শিশুরা চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। ওই অঞ্চলের জরুরি ত্রাণ পৌঁছাতে নানা বাধার শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা।
বরাবরই টাইগ্রের বিদ্রোহী বাহিনী ও ইথিওপিয়ার সেনারা পরস্পরের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করে আসছে।
এ দিকে লালিবেলার ডেপুটি মেয়র মানডেফ্র টাডেসে জানান, শহরে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কোনো ধরনের গোলাগুলি না হলেও বাসিন্দারা পালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি ঐতিহাসিক গির্জার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে লালিবেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য বিদ্রোহীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ দ্বন্দ্ব নিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
লালিবেলা ইথিওপিয়ার আমারা অঞ্চলের উত্তর ওলো জোনের লাস্টা জেলার একটি শহর। এটি পাথর কেটে তৈরি ১১টি মনোলিথিক গির্জার জন্য বিখ্যাত। পাথর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এগুলো ১২ ও ১৩ শতকে নির্মিত।
সমগ্র লালিবেলা ইথিওপিয়ার প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সভ্যতার নিদর্শনের জন্য বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান। খ্রিস্টানদের কাছে লালিবেলা ইথিওপিয়ার অন্যতম পবিত্র শহর, আক্সুমের পরে দ্বিতীয় তীর্থস্থান। ওই সময় পবিত্র ভূমিতে যাওয়া তীর্থযাত্রীদের জন্য প্রায় অসম্ভব ছিল।
১৯৭৮ সালে গির্জাগুলো ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবি আহমেদ ২০১৮ সালে ক্ষমতা আসার পর ইথিওপিয়ার রাজনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সঙ্গে দুই দশক ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটে তারই হাত ধরে। এই কারণে ক্ষমতায় আসার মাত্র এক বছরের মাথায় নোবেল শান্তি পুরস্কার পান তিনি।
প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও নিজ দেশের স্বাধীনতাকামী অঞ্চল টাইগ্রেতে তিনি শান্তি ফেরাতে ব্যর্থ হন।
উল্টো টাইগ্রের স্বাধীনতাকামীদের দমনে গত নভেম্বরে সেখানে তিনি সেনাবাহিনী পাঠান। এরপর থেকেই শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘাত। এ সংঘাতের প্রধান ভুক্তভোগী হয়েছে সেখানকার সাধারণ মানুষ।