অনলাইন ডেস্ক, ৩ অগাস্ট।। পাল্টাচ্ছে সমাজ। চেনা পরিচিত ছক থেকে বেরিয়ে মানুষ আসতে আসতে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। এবার সেই ঘটনাই প্রমাণ করল চেন্নাই। চেন্নাই কিলপৌক সরকারি মানসিক হাসপাতালে চাকরি পেলেন দুই তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি। এই দুইজনকে চাকরি দিতে পেরে খুশি চেন্নাইয়ের এই মানসিক সরকারি হাসপাতালটি। সম্প্রতি তৃতীয় লিঙ্গের দুই প্রতিনিধি ২৭ বছর বয়সী জে এম মনীষা ও আর ২৬ বছর বৈষ্ণবী মানসিক হাসপাতাল(আইএমএইচ) চুক্তি ভিত্তিক সরকারি চাকরি পেয়েছেন।
ট্রানজেডর শংসাপত্র পাওয়ার পর এই চাকরি পান তারা। এই প্রথম আইএমএইচ-এ হাসপাতালে নিযুক্ত হলেন দুই তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি। মনীষা হাসপাতালে নিযুক্ত হয়েছেন টেলিফোন অপারেটর হিসেবে। হাউস-কিপিং-এর কাজে নিয়োগ পেয়েছেন বৈষ্ণবী। হাসপাতালে ডিরেক্টর ডঃ পি পূর্ণা চন্দ্রিকা জানিয়েছেন, হাসপাতালের প্রত্যেক কর্মীকে মনীষা ও বৈষ্ণবীকে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। পূর্ণা চন্দ্রিকা আরও জানান, মনীষা ও বৈষ্ণবী খুব সহানুভূতিপ্রবণ। খুব আন্তরিক ও কাজের প্রতি মনোযোগী।
মানসিক হাসপাতালে রোগীরা উন্মত্তের মতো আচরণ করে থাকেন। খুব ভালোবেসে আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের সামলানোর কাজ করেন দুজনেই। হাসপাতালের সকলেই মনীষা ও বৈষ্ণবীর ব্যবহারের খুশি। মনীষা ও বৈষ্ণবী দুজনেই জানিয়েছেন, চাকরি পাওয়ার পর তাদের জীবন বদলে গেছে। এতদিনের সংগ্রাম সফল হয়েছে। যারা তাদের এই সম্মান দিয়েছেন প্রত্যেকের কাছে তারা কৃতজ্ঞ।
বৈষ্ণবী আরও জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে চাকরি পাওয়ার আগে তিনি দোকানে দোকানে ঘুরে ভিক্ষা করতেন। খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে সেই দিনগুলি কেটেছিল। সেই সময় বহু মানুষের কাছ থেকে তিরস্কার, গালাগাল, অভিশাপ, ব্যাঙ্গাত্মক শব্দ জুটেছিল। প্রতিদিন অপদস্থ হতে হত। এটাই জীবন হয়ে গিয়েছিল। প্রতিদিন কাঁদতাম। এত কষ্টের মধ্যও আমার বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ত। একটা সুখী জীবনের স্বপ্ন দেখতাম। তবে এই চাকরি পেয়ে আমি আবার সব কিছু ফিরে পেয়েছি। আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে গিয়েছি।
মনীষা জানিয়েছেন, তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ২০১৫ সালে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে তৃতীয় লিঙ্গের সমাজে যোগ দেন। সম্মানে সঙ্গে বাঁচতে চাকরির জন্য অনেক জায়গায় আবেদন করি। কিন্তু কেউ চাকরি দিতে চায়নি। তৃতীয় লিঙ্গের সমাজের প্রতি মানুষের এখনও ভুল ধারণা আছে। আইএমএইচ-এর ডিরেক্টর পূর্ণা চন্দ্রিকা আমাকে এই হাসপাতালে চাকরির সুযোগ দেন।আমরা দুজনেই তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।