স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৭ জুলাই।। আজ ও আগামীকাল রাজ্যে দু’দিনব্যাপী ১০০ শতাংশ কোভিড টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিশেষ টিকাকরণ অভিযান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাজ্যে ইতিমধ্যেই ১৮ ঊর্দ্ধদের বড় মাত্রায় টিকাকরণ সম্পন্ন হয়ে গেলেও যারা এখনও টিকা গ্রহণ করেন নি তাদের টিকাকরণের আওতায় আনতেই এই উদ্যোগ।
কোভিড অতিমারী পরিস্থিতিতেও রাজ্যের গ্রামে গঞ্জে অন্নের অভাব নেই। মানুষের রোজগার, খাদ্য ও স্বাস্থ্য পরিষেবা অক্ষুন্ন রাখা সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। আজ খোয়াই ও ঊনকোটি জেলায় কোভিড টিকাকরণ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
সমগ্র রাজ্যে মিশন মুডে গৃহীত এই কর্মসূচিকে স্বার্থক রূপ দিতে এবং সমগ্র প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করতে আজ খোয়াই ও ঊনকোটি জেলায় বেশ কয়েকটি টিকাকরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরমধ্যে রয়েছে খোয়াই জেলার জাম্বুরা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, মধ্য সিঙ্গিছড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ঊনকোটি জেলার ইরানী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চিনিবাগান উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং গৌরনগর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
টিকাকরণের এই উদ্যোগকে সঠিক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজ্যের সমস্ত অংশের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। তার পাশাপাশি সবার স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে কোভিড মুক্ত রাজ্য গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে এই কর্মসূচিতে সামিল হতে আহ্বান রাখেন। টিকাকরণ কর্মসূচি পরিদর্শনের সময় স্বাস্থ্যকর্মী ও টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন মুখ্যমন্ত্রী।
১০০% টিকাকরণ সম্পন্ন করতে ত্রিপুরা সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এর জন্য আমি সমস্ত জনসাধারনের স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন চাই। রাজ্যে প্রথম ডোজের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৬% টিকাকরণ হয়ে গেছে। আমরা বাকি টিকাকরণ আজ ও আগামীকালের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করছি। @PMOIndia @mansukhmandviya pic.twitter.com/NpHb9cA17z
— Biplab Kumar Deb (@BjpBiplab) July 27, 2021
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যব্যাপী টিকাকরণের এই বিশেষ কর্মসূচিকে স্বার্থক রূপ দিতে প্রত্যেকটি টিকাকরণ কেন্দ্রে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী ও আধিকারিকগণ উপস্থিত হচ্ছেন। ইতিমধ্যেই ১৮ উর্দ্ধদের বড় মাত্রায় টিকাকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এই বয়সসীমার এখনও যারা টিকাকরণের আওতায় আসেন নি তাদের প্রত্যেককে এই কর্মসূচির মাধ্যমে টিকা গ্রহণ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান রাখেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে কেন্দ্রগুলিতে মানুষ টিকা নিতে আসতে চাইছেনা বলে আমার কাছে খবর ছিল, দুই জেলার এই টিকাকরণ কেন্দ্রগুলিতেই আজ আমি পরিদর্শন করেছি। কিন্তু টিকা নিতে আসা সমস্ত অংশের মানুষের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে মানুষ টিকাকরণ নিয়ে কতটা উৎসাহী৷
এই কোভিড অতিমারী পরিস্থিতিতেও রাজ্যের মানুষের রোজগার, খাদ্য ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আর সেই লক্ষ্যেই প্রয়োজন রয়েছে এমন পরিবারের জন্য বিনামূল্যে রেশন সামগ্রীর প্যাকেট এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১,০০০ টাকা করে অর্থরাশি প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কোভিড অতিমারী পরিস্থিতিতেও রাজ্যের এডিসি এলাকার ১২টি অ্যাসপিরিশন্যাল ব্লক সহ সমগ্র রাজ্যে এমজিএন রেগায় ভাল সংখ্যায় কাজ হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীর কল্যাণে যে কর্মসূচিগুলি বাস্তবায়িত করছে তার সুফল পাচ্ছে রাজ্যবাসীও। টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের উৎসাহিত করতে মুখ্যমন্ত্রী তাদের সাথে সেলফি পয়েন্টে ছবিও তুলেন।এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে রাস্তার দুধারে ভীড় জমান বিভিন্ন অংশের মানুষ। কেউ হাত নেড়ে কেউ আবার ফুল দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, টিকাকরণ নিয়ে একটা অংশ বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল।
কিন্তু খোয়াই এবং ঊনকোটি জেলায় রাজ্যের সচেতন নাগরিকদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি তাদের জন্য মোক্ষম জবাব। টিকাকরণ কেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে আসা এত সংখ্যায় মানুষের উপস্থিতি দেখে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, রাজ্য সরকার দু’দিনব্যাপী ১৮ উর্দ্ধের ১০০ শতাংশ টিকাকরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে তাতে সাফল্য আসবেই।
উল্লেখ্য, আগামী দীপাবলি পর্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে এমন অংশের মানুষের জন্য ৫ কেজি করে চাল প্রদানের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সাথে রাজ্য সরকারও প্রয়োজন রয়েছে এমন পরিবারের জন্য রেশন সামগ্রী এবং অর্থরাশি প্রদানের যে উদ্যোগ নিয়েছে তারজন্য ভ্যাকসিন নিতে আসা কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত পথে দেশব্যাপী টিকাকরণের যে কর্মযজ্ঞ চলছে ত্রিপুরায় ভ্যাকসিনেশনের এই প্রয়াস তাতে গতি সঞ্চার করবে। এদিন ঊনকোটি জেলার গৌরনগর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশে অবস্থিত কালীমন্দির পরিদর্শন করে পূস্পাঞ্জলী অর্পন করেন। পরিদর্শন শেষে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিবেকানন্দ বিচার মঞ্চের প্রতিনিধিরা।
এদিনের খোয়াই জেলার টিকাকরণ কেন্দ্র পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক দপ্তরের অধিকর্তা ডা. রাধা দেববর্মা, খোয়াই জেলার জেলাশাসক স্মিতা মল, ত্রিপুরা স্পোর্টস কাউন্সিলের সচিব অমিত রক্ষিত, খোয়াই জিলা পরিষদের সভাধিপতি জয়দেব দেববর্মা সহ বিভিন্ন আধিকারিকগণ।
অন্যদিকে কৈলাসহরে টিকাকরণ কেন্দ্রগুলি পরিদর্শনে মূখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক দপ্তরের অধিকর্তা ডা. রাধা দেববর্মা, ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক ইউ কে চাকমা, ঊনকোটি জেলার জিলা পরিষদের সভাধিপতি অমলেন্দু দাস সহ পদস্ত আধিকারিকগণ।