।। রূপক আচার্য্য ৷৷ ফুল চাষ যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক তেমনি রাজ্যে ফুলের একটা বড় বাজারও রয়েছে। বহির্রাজ্য থেকে আসা ফুলই দীর্ঘদিন ধরে এই বাজার দখল করে রেখেছিলো৷ কিন্তু আমাদের রাজ্যে ফুল চাষের একটা বড় সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যের মাটি ও আবহাওয়া ফুল চাষের পক্ষেও সহায়ক। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে রাজ্যে ফুল চাষের উপর অগ্রাধিকার দেয়।
ফুল চাষের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতেই সরকার রাজ্যের গ্রাম ও নগর এলাকার স্বউদ্যোগী যুবক যুবতীদের ফুল চাষে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেয়। গত বছরের রাজ্য বাজেটে সরকার মুখ্যমন্ত্রী পুষ্প উদ্যান প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পের সূচনা করে। উদ্যান পালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের মাধ্যমে এই প্রকল্প রূপায়ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এই প্রকল্পে রাজ্যে আগামী ৩ বছরে রাজ্যের ফুলচাষীদের সামগ্রিক আয় ১০০ কোটি টাকায় নিয়ে যেতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের ফুলচাষীদের বাৎসরিক আয় হচ্ছে ৬.২০ কোটি টাকা৷ বর্তমান সরকার ফুল চাষের ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত ও বিকশিত করার উদ্যোগ নেওয়ায় রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের ফুল চাষীরা যেমন উৎসাহিত হচ্ছেন তেমনি স্বউদ্যোগী যুবক যুবতীরা ফুল চাষে এগিয়ে আসছেন।
এখন ফুল চাষ করে অনেকেই স্বনির্ভরও হয়ে উঠছে। এরই অন্যতম উদাহরণ সাব্রুম মহকুমার সাতচাঁদ ব্লকের বিবেকানন্দ পল্লী গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়ন্ত দাস বৈষ্ণব৷ ২৮ বছরের যুবক জয়ন্ত দাস বৈষ্ণব আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যে বড় হয়ে উঠলেও পড়াশুনার প্রতি ছিলো তার প্রবল ঝোঁক।
রসায়নবিদ্যায় অনার্স নিয়ে যখন কলেজে পড়ছিলেন তখনই এক পথ দুর্ঘটনায় তাকে পড়াশুনায় ইতি টানতে হয়। সেই থেকে তিনি স্বপ্ন দেখতেন নিজের উদ্যোগে স্বরোজগারী হয়ে উঠবেন। প্রথমে সাব্লুমের অফিসটিলায় একটি রেস্টুরেন্ট খুলেছিলেন। কিন্তু করোনা অতিমারীতে তার এই ব্যবসা ব্যাহত হয়৷
সে সময়েই তিনি জানতে পারেন রাজ্য সরকার ফুল চাষে বেকার যুবক যুবতীদের স্বনির্ভর করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগের কথা জানতে পেরে তিনি উদ্যান পালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরে যোগাযোগ করেন। উদ্যান পালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের পরামর্শে নিজের বাড়ির ৫ গন্ডা জায়গায় সে ফুল চাষ শুরু করে। প্রথমে ক্ষুদ্র পরিসরে বিভিন্ন মরশুমী ফুলের চাষ শুরু করেন পরীক্ষামূলকভাবে।
২০১৯ সালে উদ্যান পালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের মিশন ফর ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট অব হর্টিকালচার (এমআইডিএইচ) প্রকল্পে জারবেরা ফুলের চাষ শুরু করেন। দপ্তরের সহায়তায় এজন্য তিনি ৩ লক্ষ ৯ হাজার টাকা ঋণ পান। পাশাপাশি দপ্তর থেকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ফুল চাষের জন্য তাকে প্রয়োজনীয় সার, ওষুধ ও কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হয়৷ শুরুতে ফুল চাষ করে তার মাসিক আয় হচ্ছিলো ৪ হাজার টাকা।
এতে উৎসাহিত হয়ে জয়ন্ত দাস বৈষ্ণব ফুল চাষের এলাকা সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেন। ফুল চাষের পাশাপাশি তিনি ডেকোরেটরের ব্যবসাও শুরু করেন৷ সাব্লুমের অফিসটিলায় তার হোটেল ও ডেকোরেটরের ব্যবসা পাশাপাশি চালিয়ে যেতে লাগলেন। স্বউদ্যোগী যুবক জয়ন্ত দাস বৈষ্ণবের সাথে কথা বলে জানা গেলো ফুল চাষের মাধ্যমে তার যে আয় হচ্ছে তা দিয়েই তিনি তার রেস্টুরেন্ট ও ডেকোরেটরের ব্যবসায় বিনিয়োগ করে আরও অতিরিক্ত রোজগারের সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছেন।
আগে সাব্রুমে বিয়ে বাড়ি বা কোনও অনুষ্ঠানের জন্য ফুল আনতে হতো আগরতলা বা উদয়পুর থেকে। এখন সাব্রমেই এই ফুলের যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, এখন তার মাসে ১৫-১৮ হাজার টাকা রোজগার হয়৷ জয়ন্ত দাস বৈষ্ণব আরও জানালেন সারুমে এখন অনেকেই ফুল চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। উদ্যান পালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তর থেকে উৎসাহী যুবক যুবতীদের গ্রিন হাউস নির্মাণ, চারা রোপণ, বাগান পরিচর্যা ও সার সরবরাহ করে সহায়তা করছে।
রাজ্যের ফুল চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে জয়ন্ত দাস বৈষ্ণব এখন স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন৷ ফুল চাষের আয় দিয়ে আরও বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে মহকুমায় এক অনন্য নজির গড়েছেন। রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে ফুল চাষ যে একটা অন্যতম ভূমিকা নিতে পারে তার দৃষ্টান্ত জয়ন্ত দাস বৈষ্ণব। জীবনে অনেক প্রতিকূলতা ছিলো।
কিন্তু স্বনির্ভর হওয়ার একটা স্বপ্ন ছিলো বলেই সাব্রুম মহকুমার জয়ন্ত দাস বৈষ্ণব আজ স্বনির্ভর৷ তার এই স্বনির্ভরতার পেছনে রয়েছে সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।