স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৪ জুলাই।। করোনা অতিমারীর প্রথম ঢেউয়ের সময় প্রায় ৮ মাস আমাদের রাজ্যের ৫ লক্ষ ৭৯ হাজার পরিবারকে প্রতি মাসে বিনামূল্যে রেশন দোকানের মাধ্যমে মাথাপিছু ৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।
এই পরিবারগুলিকে প্রতি মাসে ১ কেজি করে মুসুর ডাল অথবা আস্ত চানা সরবরাহ করা হয়েছে। শুধু আমাদের রাজ্যের জন্যই এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার ভর্তুকী দিয়েছে ৩৭৯ কোটি টাকা। আজ মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানান খাদ্য জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব। এই পরিকল্পনা রূপায়ণে ৯৫ হাজার ২৫ মেট্রিক টন চাল এবং ৪,৪১৬ মেট্রিক টন ডাল ও আস্ত চানা কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের জন্য সরবরাহ করেছিল।
খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, রাজ্যের ৩৭ লক্ষ জনগণের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার গণবন্টন ব্যবস্থার অধীনে ১,৮৯২টি নায্য মূল্যের দোকানের মাধ্যমে অতি সুলভ মূল্যে খাদ্য শস্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য যেমন ডাল, আটা, চিনি, লবন ইত্যাদি সরবরাহ করছে। কেন্দ্রীয় সরকার করোনা অতিমারি মোকাবিলায় বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থা সচল রাখার স্বার্থে বিভিন্ন ধরণের রিলিফ প্যাকেজ, ইনসেনটিভ, আর্থিক প্যাকেজ, সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত ঋণ ইত্যাদি চালু করেছে।
এই সমস্ত প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা বা পিএমজিকেএওয়াই। যার আওতায় দেশের খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় থাকা ৮৪ কোটি জনগণের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য শস্য প্রদানের মাধ্যমে তাদের ন্যূনতম খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে। করোনা অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন সাম্প্রতিক সময়েও কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ মানুষের খাদ্য সুরক্ষা অক্ষুন্ন রাখতে বদ্ধপরিকর।
যার ফলশ্রুতি হিসাবে পিএমজিকেএওয়াই প্রকল্পটি দ্বিতীয় পর্যায়ে গত মে মাস থেকে আবার সারা দেশে চালু করা হয়েছে, যা আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলবে। আমাদের রাজ্যে ৫ লক্ষ ৯৬ হাজার পরিবার যথারীতি মে, ২০২১ থেকেই বিনামূল্যে খাদ্য শস্য সংগ্রহ করছেন। হিসেব অনুযায়ী দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট ৮৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চাল বিনামূল্যে রেশন দোকানের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে এবং এর জন্য কেন্দ্রীয় ভর্তুকী বাবদ ব্যয় হবে ৩৬৫ কোটি টাকা।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে রাজ্যের তুলনামূলক ভাবে অধিক রেশনকার্ড সম্বলিত নায্যমূল্যের দোকানগুলিকে সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে আরও ৪০৮ টি নতুন নায্যমূল্যের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে সম্ভাব্য নতুন নায্যমূল্যের দোকানের তালিকা সংশ্লিষ্ট মহকুমা শাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, এর ফলে রাজ্যের প্রায় ৮১৬ জন লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এবং পিডিএস পরিসেবা আরও সহজলভ্য হবে। শারীরিকভাবে অক্ষম বা ৬০ বছর ঊর্দ্ধ ১ বা ২ সসদ্য বিশিষ্ট রাজ্যের প্রায় ৩৯ হাজার পরিবারকে বাড়িতে রেশন পরিসেবা পৌঁছে দেবার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বিভিন্ন এস এইচ জি এবং কোপারিটিভ সংস্থাকে কাজে লাগানো হবে এবং এই বিশেষ ধরণের পরিবারগুলির চিহ্নিতকরণের কাজ ইতিমধ্যেই রাজ ব্যাপী শুরু করা হয়েছে।
রাজ্য সরকার ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারত সরকারের বিশেষ ছাড়যুক্ত প্রকল্পের আওতায় সকল রেশনকার্ডধারী পরিবারকে কার্ডপিছু ১ কেজি হারে বাজারের প্রায় অর্ধেকমূল্যে মসুর ডাল সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে রাজ্যে পিডিএসের অধীনে মসুর ডালের বিতরণ বিগত কিছু মাস বন্ধ আছে।
তবে রাজ্যের সাধারণ মানুষের পুষ্টির কথা বিবেচনা করে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খোলা বাজার থেকে ই-টেন্ডারিং এর মাধ্যমে মসুর ডাল ক্রয় করে তা প্রতি কেজি ২৫ টাকা ভর্তুকিযুক্ত মূল্যে রাজ্যের ৫ লক্ষ ৯৬ হাজার খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতাধীন রেশনকার্ডধারী পরিবারকে রেশন দোকানের মাধ্যমে বিতরণ করবে। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই ই টেন্ডারিং এর মাধ্যমে সাপ্লাইয়ার বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং আশা করা যাচ্ছে আগামী আগষ্ট, ২০২১ মাসে রাজ্যের সমস্ত রেশন দোকানে মসুর ডাল উপলব্ধ হবে। খাদ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে রাজ্যের পিডিএস ভোক্তাদের ব্যবহৃত রেশনকার্ডগুলি ২০১০ সালে প্রদান করা হয়েছিল।
রাজ্যের পিডিএস ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাইজড করার লক্ষ্যে বর্তমানে ব্যবহৃত পুরোনো কার্ডের পরিবর্তে রাজ্য সরকার স্মার্ট রেশনকার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে এবং এর বাস্তবায়ণের লক্ষ্যে রাজ্যের সকল রেশনকার্ডধারী ভোক্তাদের তাদের পারিবারিক রেশনকার্ডের প্রতিলিপি প্রদান করা হবে এবং সকলকে অনুরোধ করা হচ্ছে যেন রেশনকার্ড সম্পর্কিত পারিবারিক তথ্য সঠিক ভাবে প্রদান করে সংশ্লিষ্ট রেশন দোকানে সময় মতো জমা করেন।
রাজ্যের কৃষকদের তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্য প্রদান করে তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার অন্যান্য বারের মত ৮ জুন, ২০২১ থেকে কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ১৮ টাকা ৬৮ পয়সা সহায়কমূল্যে ধান ক্রয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
যা আগামী ২০ জুলাই, ২০২১ পর্যন্ত চলবে। এই মরসুমে মোট ২০,০০০ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২ হাজার ২৭৮ মেট্রিক টন ধান রাজ্যের ৭,১২৬ জন কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছে এবং এই বাবদ রাজ্যের কোষাগার থেকে সহায়ক মূল্য হিসাবে প্রায় ২২ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা কৃষকদের সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক একাউন্টে প্রদান করা হচ্ছে।
খাদ্য মন্ত্রী জানান, করোনা অতিমারি পরিস্থিতিতে বাজারের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে খাদ্য দপ্তর, লিগেল মেট্রোলজি এবং মহকুমা প্রশাসনের সহযোগিতায় টাস্কফোর্স গঠন করেছে এবং প্রতিনিয়ত এই টাস্কফর্সের মাধ্যমে বাজারগুলিতে পরিদর্শন চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ফলস্বরূপ এখনও দ্রব্যমূল্য নাগালের মধ্যে রয়েছে।
আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের সচিব শরদিন্দু চৌধুরী এবং দপ্তরের অধিকর্তা তপন কুমার দাস।