স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১২ জুলাই।। কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা আজ সন্ধ্যায় সচিবালয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। সাক্ষাতকারের সময় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব রাজ্যে আরও ৩টি একলব্য মডেল রেসিডেনশিয়াল বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য রাজ্য সরকার থেকে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের ইতিবাচক সম্মতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন। রাজ্যের জনজাতি অংশের জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রকের কাছে এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর বিপ্লব কুমার দেবের সাথে কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার এই সাক্ষাতকারের সময় উভয়ের মধ্যে রাজ্যের জনজাতি অংশের মানুষের মানোন্নয়নে শিক্ষার প্রসার, জনজাতিদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি, পরিকাঠামোগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার জনজাতি অংশের জনগণের মানোন্নয়নে শিক্ষার প্রসারের উপর গুরুত্বারোপ করে কাজ করেছে। রাজ্যে আগে মাত্র ৪টি একলব্য মডেল রেসিডেনশিয়াল বিদ্যালয় ছিল।
বর্তমান রাজ্য সরকার জনজাতিদের শিক্ষার সঠিক বিকাশে রাজ্যে আরও একলব্য মডেল রেসিডেনশিয়াল বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রকের নিকট প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে ১৮টি একলব্য মডেল রেসিডেনশিয়াল বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে ১৫টি একলব্য মডেল রেসিডেনশিয়াল স্কুলের নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে চলছে।
সাক্ষাতকারের সময় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রচেষ্টায় রাজ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্লু শরণার্থী পুনর্বাসনের যে সমস্যা ছিল তার ঐতিহাসিক সমাধান হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ব্লু শরণার্থীদের পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ চলছে। ব্লু শরণার্থীদের পরিবারের শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে গঙ্গানগর ও রইস্যাবাড়িতে একলব্য মডেল রেসিডেনশিয়াল স্কুল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
এরজন্য কেন্দ্রীয় উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রকের নিকট প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় উপজাতি কল্যাণমন্ত্রী রাজ্য সরকারের দ্বারা গৃহীত জনজাতি কল্যাণ বিষয়ক বিভিন্ন কাজের সন্তোষ ব্যক্ত করেন। রাজ্য সরকারের পাঠানো প্রস্তাবকে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় সাহায্যের আশ্বাসও দেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
আলোচনাকালে কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রক সারা দেশে ৪৮০ আসন বিশিষ্ট ৭০০টি একলব্য মডেল রেসিডেনশিয়াল বিদ্যালয় স্থাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এরজন্য ৪৫০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে।
রাজ্য সরকার নতুন ৩টি একলব্য মডেল রেসিডেনশিয়াল স্কুল স্থাপনের যে প্রস্তব পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক তা খতিয়ে দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। এছাড়াও রাজ্যের জনজাতিদের উন্নয়নের যে সমস্ত প্রকল্পের কাজ চলছে তা এগিয়ে নিয়ে যেতেও কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রক সর্বোত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।
সাক্ষাতকারকালে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান এবং তার হাতে রাজ্যের ঐতিহ্যমন্ডিত বাশবেতের স্মারক তুলে দেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতকার ও আলোচনাকালে রাজ্যের জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া এবং সচিব তনুশ্রী দেববর্মা উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎকার শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যের জনজাতি অংশের জনগণের কল্যাণে প্রশংসনীয় কাজ করছে। জনজাতিদের বিকাশে বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা কিভাবে দ্রুত পৌঁছানো যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
বিগত ২ বছরে রাজ্যে ১৫টি একলব্য মডেল রেসিডেনশিয়াল স্কুল নির্মাণের কাজ চলছে। কয়েকটি নির্মিয়মান স্কুলের পরিদর্শন করে দেখেছি কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। আশা করা যায় সময়ের মধ্যেই সেগুলির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ঐকান্তিক উৎসাহ ও প্রচেষ্টার ফলে রাজ্যে বাশভিত্তিক শিল্পেরও উন্নয়ন হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, রাজ্যে যে ১৫টি একলব্য মডেল রেসিডেনশিয়াল স্কুল স্থাপনের কাজ চলছে তা আগের প্যাটার্নের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এখন যে স্কুলগুলি তৈরী হচ্ছে তা সম্পূর্ণভাবে আবাসিক বিদ্যালয়। অনেকটা নবোদয় বিদ্যালয় ধাচের। বিদ্যালয়গুলিতে নবোদয় বিদ্যালয়ের মতো সুযোগ সুবিধা থাকবে।
প্রতিটি বিদ্যালয় স্থাপনে ব্যয় হবে ৪৮ কোটি টাকা৷ বর্তমান কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার প্রচেষ্টার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। এরজন্য রাজ্যবাসীর পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী মুন্ডাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী।