|| বিনয় মজুমদার || রাজ্যের সার্বিক বিকাশে সরকার কৃষি, উদ্যান, মৎস্য, প্রাণী পালনের মাধ্যমে মানুষকে স্বনির্ভর করে তুলতে অগ্রাধিকার দিয়েছে। উন্নয়নের এই প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলিতে মানুষের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। এই সমস্ত ক্ষেত্রে গ্রামীণ এলাকার মানুষকে স্বনির্ভর করে তুলতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি কাজ করছে।
সরকারের এই উদ্যোগে গ্রামীণ এলাকার মানুষ ধীরে ধীরে স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন। তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ডুকলি ব্লকের ঈশানচন্দ্রনগরের মুসকুরি পাড়ার বাসিন্দা বিপ্লব সরকার। নিজের পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে ঈশানচন্দ্রনগরের বিপ্লব সরকার এখন স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন। ঈশানচন্দ্রনগরের বিপ্লব সরকারের এক কানি চার গন্ডা জলা জমি ছিলো।
কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা এবং উদ্যোগের অভাবে তা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিলো। রাজ্যে উন্নয়নের প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলির উপর অগ্রাধিকার দেওয়ায় সরকারের লক্ষ্য ছিলো উৎপাদনমুখী কোনও কাজে লাগানো যায় এমন জমি ফেলে রাখা যাবে না। এরই ফলশ্রুতিতে বিপ্লব সরকারের জলা জমি হয়ে উঠেছে মৎস্য চাষের উৎস। তার ভাবনার মধ্যেও ছিলো না পরিত্যক্ত এই জমিটির সঠিক ব্যবহার তাকে দিতে পারে একটি স্থায়ী রোজগার।
আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে নানাবিধ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বনির্ভর পরিবার এবং ব্যক্তি স্বনির্ভরতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে রাজ্য সরকার। নিজের জায়গা ছিলো শুধুমাত্র প্রয়োজন ছিল সঠিক পরিকল্পনার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সহায়তায় বিপ্লব সরকারের জায়গায় পুকুর খনন করা হয়। মৎস্য দপ্তরের সহায়তায় এই পুকুরে বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ শুরু করছেন তিনি। মাছ বিক্রি করে ভালোই আয় হবে বলে আশাবাদী তিনি।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঠিক পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনায় পরিত্যক্ত জায়গা থেকে রোজগারের নয়া দিশা খুঁজে পেলেন বিপ্লব সরকার। শুধুমাত্র বিপ্লব সরকারই নয়, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের সহায়তায় ডুকলি ব্লকের অন্তর্গত এমন অনেক উদ্যোগীরাই স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে রোজগারের নয়া দিশা খুঁজে পাচ্ছেন। ডুকলি ব্লকের অন্তর্গত দিনমজুর সমীর সরকারের উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম ছিল অন্যের জমিতে শ্রম দান ও কৃষি কাজ।
সীমিত উপার্জনে এরমধ্যে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা এবং সংসার প্রতিপালন করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। নিজস্ব এক কানি পাঁচ গন্ডা জমি থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা এবং সহায়তার অভাবে এর থেকে উপার্জন আসছিল না। এই জমিতে মরশুমি চাষ করে যে উপার্জন হত তার থেকে আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না।
ডুকলি পঞ্চায়েত সমিতির পঞ্চায়েত উন্নয়ন তহবিলের অর্থানুকুল্যে ২ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা এবং উদ্যান ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের সহায়তা ও পরামর্শে ড্রাগন ফলের চাষের মাধ্যমে এখন আত্মনির্ভরতার পথে সমীর সরকার। প্রাপ্ত আর্থিক সহায়তায় ২২০টি পিলার তৈরী করে ৮৮০ টি ড্রাগন ফলের চারা রোপন করেন।
বহিঃ রাজ্যের পাশাপাশি ত্রিপুরাতেও অর্থকরী ড্রাগন ফলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ন্ত গাছ গুলি থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই স্থায়ী উপর্জন মিলবে। ডুকলি পঞ্চায়েত সমিতি এবং উদ্যান ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের সহায়তায় বদলে গেছে প্রায়োরিটি ভুক্ত সমীর সরকারের জীবন। এক স্থায়ী উপার্জনের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতার পথ খুঁজে পেয়েছেন তিনি।
ডুকলি ব্লকের অন্তর্গত ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ঈশানচন্দ্র নগর গ্রামের আরো এক বাসিন্দা সঞ্জয় চক্রবর্তী। দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী দিনমজুরের সঞ্জয় চক্রবর্তীর করোনা অতিমারি জানিত পরিস্থিতির মধ্যে নানান প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন। এমতাবস্থায় কি করে দিনগুজরান করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের সহায়তায় প্রতিমাসে অনায়াসে প্রায় ৭,৫০০ টাকা স্থায়ী উপার্জন করছেন। বাড়ির পাশেই ছিল একটি ব্রুডার হাউস। উপার্জনের লক্ষ্যে পরিত্যাক্ত ব্রুডার হাউজটিতে ব্রয়লার মোরগ পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করতেই স্থানীয় পঞ্চায়েত নিঃশর্তে তার হাতে চাবি তুলে দেয়। সেখান থেকে বর্তমানে ভালোই আয় পাচ্ছেন।
আত্মনির্ভরতার পথ খুঁজে পাওয়া সঞ্জয় চক্রবর্তী জানালেন আগামী দিনে আরো বড় পরিসরে ব্রয়লার মোরগ পালনের পরিকল্পনা রয়েছে তার। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের সহায়তায় যেমন আত্মনির্ভরতার পথ খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই তেমনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও ঘটছে রাজ্যের। বিকাশ হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিরও।