অনলাইন ডেস্ক, ৬ জুলাই।। ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর সূচনা উপলক্ষ্যে আজ আইন ও ন্যায়-বিচার মন্ত্রকের বিচার দপ্তর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। দপ্তরের টেলি-ল কর্মসূচির মাধ্যমে ৯ লক্ষ মানুষ উপকৃত হওয়ায় এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আইন ও বিচার, বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং যোগাযোগ মন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ৫০ হাজার টেলি-ল কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত মানুষরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আইনমন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ অনুষ্ঠানে ভিলেজ লেভেল এন্টারপ্রেনার (ভিএলই), প্যারা লিগাল ভলেন্টিয়ার্স (পিএলভি), রাজ্যস্তরের কো-অর্ডিনেটর এবং বিভিন্ন প্যানেলভুক্ত আইনজীবীদের কাজের প্রশংসা করেছেন।
এঁরাই এই কর্মসূচির অন্যতম স্তম্ভ বলে উল্লেখ করে শ্রী প্রসাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সামাজিক বিভিন্ন আইনী সমস্যা এখানে সমাধান করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাজের ভূমিকার প্রশংসা করে মন্ত্রী টেলি-ল’র সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। এর ফলে আইনী ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে এবং ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত হবে।
অনুষ্ঠানে দুটি প্রত্যন্ত কমন সার্ভিস সেন্টারের কাজকর্ম উপস্থাপিত করা হয়।
এগুলির মধ্যে একটি ওড়িশার কালাহান্ডি জেলার মাউন্ট রামপুর পঞ্চায়েতে এবং অন্যটি কেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মীরের গান্ডারওয়াল জেলার তুল্লামুল্লা পঞ্চায়েতে। প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রত্যন্ত এইসব গ্রামগুলিতে ভিএলই এবং পিএলভিদের সহায়তায় টেলি-ল পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে। দপ্তরের সচিব শ্রী বরুণ মিত্র জানিয়েছেন টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের টেলি-ল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আইনী সাহায্য দেওয়া হয়।
এর জন্য আইনজীবীদের একটি প্যানেল রয়েছে যাঁরা বিনামূল্যে অথবা খুব কম পয়সায় এই পরিষেবা দিয়ে থাকেন। স্থানীয় কমন সার্ভিস সেন্টারগুলি পিএলভি এবং ভিএলই-দের সহায়তায় টেলি-ল এর বিষয়ে জনসচেতনতা বিষয়ক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই কর্মসূচির সুবিধা যাতে সবাই পান সেটি নিশ্চিত করতে পিএলভি-দের জন্য টেলি-ল মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
২০১৭ সালে ১১টি রাজ্যে ১৭০টি জেলায় এই কর্মসূচির সূচনা করা হয়েছিল। সেইসময় ১৮০০ কমন সার্ভিস সেন্টারের সাহায্য নেওয়া হত। ২০১৯ সালে ১১৫টি উচ্চাকাঙ্খী জেলাকে এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করায় মোট ২৯,৮৬০টি কমন সার্ভিস সেন্টারের সাহায্য নেওয়া হয়। বর্তমানে ৩৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৬৩৩টি জেলায় ৫০ হাজার কমন সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে এই পরিষেবার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। গত এক বছরে আগের বছরের তুলনায় এই কর্মসূচির সুবিধা ৩৬৯ শতাংশ মানুষ বেশি পেয়েছেন।
কোভিড মহামারীর সময় সাধারণ নাগরিকরা যাতে এই পরিষেবা পেতে পারেন সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জুন মাসে টেলি-ল এর মাধ্যমে ৯ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি নাগরিক উপকৃত হয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে টেলি-ল না পৌঁছানো মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া ভাবনায় একটি বিশেষ ডাক টিকিট প্রকাশ করা হয়েছে।
ওই ডাক টিকিটে কমন সার্ভিস সেন্টারে আইনী সহায়তা পেতে চাইলে কিভাবে প্যানেলভুক্ত আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন সে বিষয়ে উল্লেখ করা আছে। টেলি-ল আইনী ক্ষমতায়ণের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা যাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সব নাগরিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আইনী পরিষেবা পেতে পারেন। মন্ত্রক ভয়েস অফ দ্য বেনিফিসিয়ারিজ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে।
এই পুস্তিকার প্রথম সংস্করণ ২০২০র সেপ্টেম্বরে এবং দ্বিতীয় সংস্করণ ২০২১এর মার্চে প্রকাশ করা হয়। আজ তৃতীয় সংস্করণটি প্রকাশ করা হল। এই উপলক্ষ্যে আইনমন্ত্রী শ্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ জানান প্রধানমন্ত্রীর সবকা সাথ, সবকা বিশ্বাস, এবং সবকা ন্যায় ধারণাকে বাস্তবায়িত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে টেলি-ল এর সুবিধাগুলিকে নিয়ে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র দেখানো হয়। এছাড়াও তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, আসাম, ওড়িশা ও ঝাড়খন্ড এবং কেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মীরের সুবিধাভোগীদের নিয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান উপস্থাপিত হয়।
কমন সার্ভিস সেন্টারের সাইন বোর্ডে আইনী সহায়তা কেন্দ্র কথাটি লেখা থাকবে। যদিও টেলি-ল পরিষেবাটি প্রযুক্তি নির্ভর কিন্তু ভিএলই, পিএলভি এবং রাজ্য স্তরের সমন্বয়কারী ও প্যানেলে থাকা আইনজীবীরা এই প্রকল্প রূপায়ণে মূল ভূমিকা পালন করেন। অনুষ্ঠানে দেশের ৫টি অঞ্চলে ৩টি বিভাগে ২০ জনকে ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে।