।। প্রসেনজিৎ চৌধুরী ৷৷ মানুষের আর্থসামাজিক মানোন্নয়নের পাশাপাশি রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার পরিকাঠামোর উন্নয়নেও সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। এতে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার পরিকাঠামোর উন্নয়ন যেমন হচ্ছে তেমনি মানুষের আর্থসামাজিক জীবনযাত্রার মানও বেড়েছে।
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ রাজ্যের প্রান্তিক এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ফলে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকাগুলিতে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। গ্রামীণ এলাকার মানুষ যেমন উপকৃত হচ্ছেন তেমনি আত্মনির্ভরও হচ্ছেন।
কৃষি এই রাজ্যের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। তাই কৃষির বিকাশ ও কৃষকের কল্যাণে সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। সেচের সুযোগ সম্প্রসারিত করে কৃষকদের আয় বাড়াবার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জলসেচের সুযোগ পেয়ে দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এক ফসলি জমি এখন দুই ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। বিশালগড় ব্লকের দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পালপাড়া একটি কৃষিপ্রধান অঞ্চল।
গ্রাম পঞ্চায়েতটি আগরতলা-সারুম জাতীয় সড়ক থেকে কমলাসাগর যাওয়ার পথেই পড়ে। বিগত দিনগুলিতে পালপাড়ার বিস্তীর্ণ ৬৫ থেকে ৭০ কানি জমিতে জলসেচের অভাবে কৃষকগণ শুধু একটা ফসলই চাষ করতেন। সেচের অভাবে দুই তিন ফসল করা সম্ভব হচ্ছিলো না। যদিও এই জমির পাশ দিয়েই বয়ে চলছে একটি ছড়া। স্থানীয়দের মতানুসারে সারা বছরই এরমধ্যে জল থাকে।
এখানকার কৃষকরা জানালেন, এই ছড়ার জলকে জলসেচের কাজে ব্যবহার করার জন্য বিগত সরকারের আমলে তৈরি করা হয়েছিলো একটি ছোট আকারের ফ্লুইস গেট। কিন্তু এই গেট কোনও কাজেই আসেনি এতোদিন। কারণ ফ্লুইস গেটে আটকানো জলকে জমি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থাই করা হয়নি।
ফলে কিছুদিনের মধ্যেই অব্যবহারের ফলে নষ্ট হয়ে যায় ফ্লুইস গেটটি। বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার পর কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে এই ফ্লুইস গেটের জমানো জলকে কৃষকদের জমি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি করা হয় পাকা ড্রেন।
ইতিমধ্যেই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খুব শীঘ্রই ফ্লুইস গেটটিও সংস্কার করা হবে।পাল পাড়ার কৃষক পিন্টু চন্দ্র লোধ জানালেন, এই পাকা ড্রেন নির্মাণের ফলে আমাদের জমিতে সহজেই জল পৌঁছে যাবে। আগে ছড়ার জল জমি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য কাঁচা ড্রেন করতে হতো।
এখন আর তা করতে হবে না। এতে কৃষকদের সময় ও শ্রমের সাশ্রয় হবে। কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে নির্মিত এই পাকা ড্রেনটি বদলে দিতে চলেছে পালপাড়ার কৃষকদের জীবনযাত্রা। সামনের দিনগুলিতেই এখানকার ৬০ থেকে ৭০ কানি জমি দুই ফসলের আওতায় আসবে। এতে এখানকার কৃষকদের রোজগার বাড়বে।
উল্লেখ্য, দেবীপুর সুসংহত জলবিভাজিকা প্রকল্পে ৭ লক্ষ ৩৮ হাজার ৩৭০ টাকা ব্যয়ে ফ্লুইস গেটের দু’পাশে এই ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এরফলে পালপাড়ার ৬৫ থেকে ৭০ কানি দুই ফসলি জমিতে জলসেচ করা যাবে। ফলে এলাকার দু’শো কৃষক পরিবার উপকৃত হবেন।
দেবীপুর সুসংহত জলবিভাজিকা প্রকল্পের প্রোজেক্ট সেক্রেটারি রাজেশ দত্ত জানালেন, এই প্রকল্পে গত দুই অর্থবছরে দেবীপুর পঞ্চায়েতে ১৪টি পুকুর খনন করা হয়েছে। এরফলে ঐ এলাকার ১৪টি পরিবার মাছ চাষ করে রোজগার বাড়াতে পেরেছেন। গ্রামের সৌরভ সরকার, মানিক লোেধ, শান্তি দত্ত, মাঙ্গু সিং সহ আরও ১০ জনকে এই প্রকল্পে পুকুর খনন করে দেওয়া হয়েছে।
দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অসীম সরকার জানালেন, রাজ্য সরকারের প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পঞ্চায়েতের প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জলসেচের সুযোগ পেয়ে এই পঞ্চায়েতের কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসি৷